ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

গণতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

গণতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ

চার দশক আগে, আমেরিকায় যখন একটি বৃহত্তর এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল, তখন বাম রাজনীতি ছিল শক্তিশালী। সামাজিক সুরক্ষাজাল, স্কুল, রাস্তা এবং গবেষণায় আরও বেশি জনসাধারণের বিনিয়োগ চেয়েছিল। চেয়েছিল বাজারের ওপর সাধারনের আরও বেশি সম্পৃক্ততা। সেই দিনগুলিতে, একটি সাধারণ নির্বাচন ছিল বাম থেকে ডানে প্রসারিত দীর্ঘ রোডওয়ার্ক। দুটি হটডগ বিক্রেতার মধ্যে প্রতিযোগিতার মতো। বিক্রয় সর্বাধিক করতে প্রত্যেককে মাঝখানে যেতে হয়েছিল। একজন যদি খুব দূরে বাম বা ডান দিকে অপেক্ষাকৃত কম ক্রেতা পায় , অন্যজন তার পাশে চলে যেত এবং নিজের আখের গুছিয়ে নিত। আমেরিকার এই প্রবীণ রাজনীতি এখন অচল। সম্পদ এবং ক্ষমতা শীর্ষে চলে গেছে এবং মধ্যবিত্ত সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে, সাধারণ আমেরিকানরা শ্রমজীবী এবং দরিদ্রদের দলে যোগ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। হিসেব মতে দুটো শ্রেনি বিরাজমান, দরিদ্র ও ধনী শ্রেণি। ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে আসার পর থেকে নানা সমালোচনায় পরলেও পুঁজিবাদ ব্যবসায়ীদের সুনজরের কারণে বারবারই বাধা পেরিয়ে গেছেন। যার ফলে আন্দোলনকারীরা ফটোসেশনের সঙ্গী হওয়া ছাড়া আর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। সম্পদশালীরা ফুলে ফেঁপে আরও সম্পদের মালিক হয়েছেন। বাজারগুলো একচেটিয়া তাদের দখলে চলে যায়। যদিও সরকারী হিসেব মতে বেকারত্বের হার কম দেখা যায় তবে বেশিরভাগ মানুষের আয় অনেক কম সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতা তো রয়েইছে। ওয়াশিংটন প্লাবিত হয়েছে বড় বড় কর্পোরেশন, ওয়ালস্ট্রীট, কোটিপতি ও লবিস্টদের দ্বারা। এরপরও আমেরিকায় কেন প্রতিবাদ আসেনি? কারণ খুবই সহজ। ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হওয়ার পূর্বেই গণতন্ত্র অচল হয়ে পরেছিল। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে ওয়াল স্ট্রীট, ওয়ারেন এবং স্যান্ডার্সকে ভয় পান। কেননা তারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলে। এদিকে এলিজাবেথ ওয়ারেন ইতোমধ্যে নিজেকে প্রমান করেছেন যে, তিনি জনগণের কথা বলেন। কোন প্রকার বিতর্ক ছাড়াই তিনি ভবিষ্যতের প্রাথীৃ হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এখন আর “মধ্যপন্থী” নেই। আর কোনও “কেন্দ্রও নেই। আমেরিকান রাজনীতিতে আজ সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি হল একটি অদৃশ্য ক্রোধ। তাঁর লড়াই দ্বিমুখী গতবারের মতো এবারও স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাট শিবিরে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। মনোনয়ন নিয়ে যোসেফ বাইডেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং তাঁর মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মনে হচ্ছে। তবে শঙ্কা আছে, প্রাইমারির চূড়ান্ত অধ্যায়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকেই তাঁকে বিদায় নিতে হতে পারে। ডেমোক্র্যাট অনেকে মনে করেন, যদিও স্যান্ডার্সের নীতিগত অবস্থান সমর্থনযোগ্য, কিন্ত তাঁকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হলে ট্রাম্পকে জয়ী হতে সহায়তা করা হবে। সমগ্র ক্ষমতাকাঠামো তখন সমাজতন্ত্রী স্যান্ডার্সকে ঠেকাতে পরোক্ষে ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে শুরু করবে। বার্নির বিশেষত্ব ঠিক এখানেই। তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবং আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও। পরপর দুই দফা প্রাইমারিতে স্যান্ডার্সের লড়াই আমেরিকাজুড়ে ডেমোক্র্যাট পার্টিকে কিছুটা বদলে দিয়েছে। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতেও কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা। আট বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যুদ্ধ ব্যয়ের বিরুদ্ধে, করপোরেটদের লোভ ও মিথ্যার বিরুদ্ধে, সবার জন্য স্বাস্থ্য ও বিনা বেতনে শিক্ষাসুবিধা, ন্যায্য মজুরি ও জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বাড়তি বৈশ্বিক ভূমিকার পক্ষে বলে যাচ্ছেন তিনি। একদা কংগ্রেসে ইরাকে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন বার্নি। ২০১৮ সালের জুনে আমেরিকায় যে ১০ সিনেটর প্রতিরক্ষা বাজেট কমানোর পক্ষে অবস্থান নেন, তাঁদেরও নেতা বার্নি। এ রকম কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতি করা কঠিন। রিপাবলিকানরা তো বটেই, ডেমোক্র্যাট শিবিরেও তাঁকে নিয়ে অস্বস্তি আছে। কিন্তু বার্নি অদম্য। হয়তো ৮ সেপ্টেম্বর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীও তিনি উদ্যাপন করবেন দেশটির কোনো শহরে তাঁর মতাদর্শ প্রচারে ব্যস্ত থেকে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।কংগ্রেসে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত দুই বছর মেয়াদে যাদের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন তাদের অন্যতম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এলিজাবেথ ওয়ারেনকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উদারপন্থী গ্রুপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ২০১২ সালে ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর নির্বাচিত হন। এ সিনেটর ট্রাম্পকে একজন জাতিগত কলঙ্ক বলে উল্লেখ করে বলেন, ট্রাম্প শুধু ধনী ও ক্ষমতাশালীদের সমর্থন করে এবং অন্য সবাইকে ময়লা-আবর্জনা মনে করেন।
×