ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লি টাক যেন টেরেঙ্গানুর মেসি

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 লি টাক যেন টেরেঙ্গানুর মেসি

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ হাবভাব, চলাফেরা, মাঠে বল নিয়ে ছুটে যাওয়া, গতি, ফ্রিকিক সব কিছুতেই যেন লিওনেল মেসির ছায়া! শুধু কি তাই, চেহারাতেও মিল খুঁজে পাওয়া যায় বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের সঙ্গে। নাম তার লি টাক। খেলেন মেসির মতো প্লেমেকারের ভূমিকায়। আগে খেলে গেছেন বাংলাদেশের ক্লাব ঢাকা আবাহনীতে। এখন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে মাতাচ্ছেন মালয়েশিয়ান ক্লাব টেরেঙ্গানু এফসির হয়ে। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলা দলটি ইতোমধ্যে সেমিফাইনালে উঠে গেছে। আজ ফাইনালের টিকেট পাওয়ার মিশনে তাদের প্রতিপক্ষ কলকাতার মোহনবাগান এ্যাথলেটিক ক্লাব। এই ম্যাচে সবটুকু আলো থাকছে টেরেঙ্গানু অধিনায়ক লি টাকের দিকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে যিনি বসুন্ধরা কিংসকে একাই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিয়েছেন। কিংসদের বিরুদ্ধে লি করেন চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক। এ কারণে কলকাতার জায়ান্টদের বিরুদ্ধেও তার দিকে দৃষ্টি থাকছে সবার। ডেথ গ্রুপ ‘বি’ তে পড়েও এক নম্বর দল হিসেবে শেষ চারে উঠে এসেছে টেরেঙ্গানু। দলটিতে একাধিক ম্যাচজয়ী ফুটবলার আছেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সিটিকে ৫-৩ গোলে উড়িয়ে দেয়ার পথে মালয়েশিয়ান ক্লাবটির হয়ে একাই চার গোল করেন ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত জাপানী ফরোয়ার্ড ব্রুনো সুজুকি। পরের ম্যাচটি গোকুলাম কেরালার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে কোচ নাফুজি বিন জারিনের দল। এই দুই ম্যাচে ঠিক চেনা ছন্দে দেখা যায়নি লি টাককে। কিন্তু ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দেয়ার ম্যাচে ফেরেন স্বরূপে। করেন চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক। ম্যাচের পুরোট সময়ই লি’কে দেখা গেছে পুরনো ছন্দে। বাংলাদেশে পা রাখার পর থেকেই লি টাক একটি কথাই বলে চলেছেন, আমরা শিরোপা জিততে এসেছি। এ লক্ষ্যে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা দলটিকে ইচ্ছে পূরণ করতে হলে জিততে হবে আর মাত্র দুটি ম্যাচ। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। আপাতত মোহনবাগানকে হারিয়ে সেমির টিকেট কাটাই মূল লক্ষ্য লি টাকের। এই মিশনে কোন চাপ নেই জানিয়ে টেরেঙ্গানু কাপ্তান বলেন, গ্রুপ পর্বের পারফর্মেন্স আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। আমরা ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছি। দলটা দারুণ ছন্দে আছে। অনুশীলনও ভাল হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের দলের বিরুদ্ধে খেলেছি। তাই এই ম্যাচের চাপটা মোটেও অনুভব করছি না আমরা। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য এই ম্যাচ জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করা। এই এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালেও ঢাকা আবাহনীর হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন লি টাক। তিন বছর পর আবারও হ্যাটট্রিক করতে পেরে পুরনো স্মৃতিতে ফিরে যান তিনি, এই হ্যাটট্রিকের কথা আমি জীবনেও ভুলব না। আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশে খেলতে আমার ভাল লাগে। সেখানে ভাল খেলতে পারলে ভাল লাগাটা আরও বেড়ে যায়। তিন বছর পর খেলতে এসে আমার খুব ভাল লাগছে। ভাল লাগাটা পরিপূর্ণ হবে যদি ট্রফি জিততে পারি। এক মৌসুম আবাহনীতে খেলেই মাতিয়ে দিয়েছিলেন লি। এবারও অভিন্ন লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে, সেবার বাংলাদেশে এসে সফল হয়েছিলাম, ভাল খেলেছিলাম। এবারও সেই পারফর্মেন্স দেখাতে চাই। নিজেকে একটা মানে দাঁড় করানোই আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণ করার পথেই আছেন ৩১ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ তারকা। টেরেঙ্গানুর বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচটি বসুন্ধরার জন্য ছিল বাঁচামরার। সেমিতে খেলতে হলে কিংসদের জয়ের বিকল্প ছিল না। অন্যদিকে ড্র করলেই চলত মালয়েশিয়ান ক্লাবটির। কিন্তু ড্র নয়, পিছিয়ে পড়েও কিংসদের গুঁড়িয় দিয়ে শেষ চারে এসেছে তারা। ম্যাচটির আগে বসুন্ধরার সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি জানিয়েছিলেন, তারা লি টাককে নিষ্ক্রিয় করতে সবধরনের ছক কষেছেন। কিন্তু আগে থেকে পরিকল্পনা করার পরও ময়দানি লড়াইয়ে টেরেঙ্গানুর মেসিকে আটকাতে পারেনি কিংসরা। এতের প্রতীয়মান, তিনি কতটা ভয়ঙ্কর ফুটবলার। যে কোন মুহূর্তে তছনছ করে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। বিষয়টা মাথায় আছে মোহনবাগানেরও। তবে তারা শুধু লি টাককে নিয়ে ভাবছে না। তাদের ভাবনায় আছে ব্রুনো সুজুকিও। দলটির স্প্যানিশ কোচ জোশে এ্যান্টোনিও ভিকুনা বলেন, আমাদের প্রথম লক্ষ্য সেমিফাইনাল। এরপর ফাইনাল নিয়ে ভাবব। কিন্তু সেমির প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী। ওদের কয়েকজন ফুটবলার খুবই ভাল। বিশেষ করে লি টাক, ব্রুনো সুজুকি। তবে ওদেরকে আটকে দেয়ার জন্য আমার ছেলেরা প্রস্তুত। উল্লেখ্য, লি টাক যেমন বাংলাদেশকে ভালবাসেন তেমনি মালয়েশিয়ার প্রতিও আবেগ অনেক বেশি। যে কারণে গত এপ্রিলে দেশটির নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাবে তখন আশা পূরণ হয়নি। কে জানে হয়ত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে ট্রফি জিততে পারলে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
×