ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুদ্ধি অভিযান শুধু দলেই নয়, প্রশাসনেও নজরদারি চলছে

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 শুদ্ধি অভিযান শুধু দলেই নয়, প্রশাসনেও নজরদারি চলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের নেতারা যেমন নজরদারিতে আছে, তেমনি প্রশাসনেও সরকারের নজরদারি আছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছাড় দেয়া হবে না। সোমবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এসময় তিনি চলমান রাজনীতি, পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। যে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, অপকর্মের অভিযোগ উঠছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আদালতে যখন চার্জশীট জমা হবে, অভিযোগ যখন প্রমাণ হবে, শাস্তি নিশ্চিত হবে, তখন দল তাকে বহিষ্কার করবে। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এ্যাকশনে যাই? তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে অন্যান্য সেক্টরেও শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে। ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠছে, কিন্তু কোন দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, তা সরকারের সৎ সাহসের পরিচয়। এতে দল ও সরকার উভয়ের ভাবমূর্তি বাড়ছে। স্নাতক পাস কোর্স (বিএ) পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে নরসিংদীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) তামান্না নুসরাত বুবলীর পরীক্ষা ও নিবন্ধন বাতিল করে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া সংসদীয় রীতিনীতিতে নৈতিক স্খলন বিষয়ে কী আছে, সে ব্যাপারে স্পীকার কী ব্যবস্থা নেন তা দেখা হবে। অন্যান্য সেক্টরের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। এই অভিযান শুধু সরকারের ভেতরেই হবে না অন্যান্য সেক্টরেও হচ্ছে, হবে। তিনি বলেন, সবখানেই অভিযান হচ্ছে। এটি চলমান থাকবে। তিনি বলেন, দলে যেমন নজরদারি আছে, তেমনি প্রশাসনেও নজরদারি আছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আটক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সে এখনও বিসিবির পরিচালক থাকে কী করে? অভিযোগ আসার পরেই তো তার ওই পদে থাকা উচিত না। আমি বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে লোকমানকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়ায় তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের অভিযোগ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে বসানো ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে নিতেন ক্লাবটির ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি মঞ্চে বসতে চাইলে এ্যালাও করতাম ॥ চট্টগ্রামের প্রয়াত সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে সম্মেলন মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি মঞ্চে বসতে চাইলে অবশ্যই তাকে আমি এ্যালাও করতাম। চট্টগ্রামের দি কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে রবিবার আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনসহ কয়েকজন নেতাকে নামিয়ে দেয়া হয়। হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা। ‘চট্টলার বীর’খ্যাত মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও সমালোচনার তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ নেতারা হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক ভবনে একটা প্রোগ্রাম ছিল, সেখান থেকে আমি প্রতিনিধি সম্মেলনে যখন যোগ দিয়েছি আনুমানিক সাড়ে ১২টায়। ওখানে কোন কমোশন (গোলমাল) আমি দেখিনি এবং এ ধরনের কোন ঘটনা কেউ আমাকে জানায়নি। আমি ঢাকার পথে যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাই, তখন ওই বিষয়টা একজন আমাকে জানাল। কিন্তু ওখানে কেউ এ বিষয়ে আমাকে কিছু বলেনি এবং কোন অভিযোগও কোন পক্ষ থেকে আসেনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি মেয়রকে জিজ্ঞাসা করেছি, তার যে বক্তব্য সেটা হচ্ছে- ওখানে হোস্ট (আয়োজক) তিনটি জেলা, মহানগর এবং চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ। এই তিন জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠক করে মঞ্চে কারা কারা বসবেন এবং কোন ক্যাটাগরিতে বসবেন, সেটা নির্ধারণ করেছে। তাদের সেই নির্ধারিত ক্যাটাগরিতে তিনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) ছিলেন না। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের নগরের প্রেসিডেন্ট। এই ক্যাটাগরির কেউ বসেনি। সে কথা মেয়রের বক্তব্য। কিন্তু আমি যদি জানতাম, তাহলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হিসেবে আমি তাকে সম্মানটা দিতাম। আমি জানতাম না। তিনি মঞ্চে বসতে চাইলে অবশ্যই তাকে আমি এ্যালাও করতাম। বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। ফিটনেসবিহীন বাহনে জ্বালানি বন্ধ হলে মানুষ উপকৃত হবে নতুন যানবাহন না নামিয়ে এই মুহূর্তে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে গেলে রাস্তায় গাড়িই কমে যাবে বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেক্ষেত্রে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে, সেটি মাথায় রেখে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন যানবাহন যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে সম্প্রতি হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা মানলে মানুষ উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ২৩ অক্টোবর হাইকোর্ট ফিটনেসবিহীন গাড়িতে তেল-গ্যাস-পেট্রোলসহ সব ধরনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। যানবাহনের ফিটনেস আইন অনুসরণ করলে একটি বাসও ফিটনেস পাবে না, এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশ মানা শুরু হলে গণপরিবহন থাকবে না। সেক্ষেত্রে জনভোগান্তি হবে কিনা- সোমবার সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, আমরা বাস্তবতার নিরিখে সব কিছু বিবেচনা করব। ঢাকা শহরে দেখা যায় আমরা যখন রোড সেফটি প্রোগ্রামে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি, তখন গাড়ি কমে যায়। জনগণের ভোগান্তি হয়। বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছি। গণপরিবহন আরও পরিবহন যুক্ত করার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। গণপরিবহন খাতে ঋণ সুবিধা দিতে মেয়র আনিস যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেভাবে বিষয়টাকে চিন্তাভাবনা করছি।
×