ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি পেলেন নুর ইসলাম

দিনাজপুরে ডিসির প্রত্যাহার চান মুক্তিযোদ্ধারা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 দিনাজপুরে ডিসির  প্রত্যাহার চান  মুক্তিযোদ্ধারা

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান এবং অবজ্ঞা করায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলমকে বদলি করার দাবি জানিয়েছে দিনাজপুরের সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা। তা না হলে জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার দিনাজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সাইদুর রহমান। এ সময় জেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দিনাজপুরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন হওয়া সেই অভিমানী মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলমের ওএসডি করে প্রত্যাহার দাবি করে। পরে তারা দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে। যেখানে জেলা প্রশাসককে ওএসডি করে প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জেলা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনিই মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার থাকলেও, জেলা প্রশাসক কোন খুঁটির জোরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন তা খতিয়ে দেখার দাবি জানানো হয়। সেইসঙ্গে অবিলম্বে জেলা প্রশাসককে দিনাজপুর ওএসডি করে প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, নইলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দাবির মধ্যে উল্লেখ করা হয়- মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান এবং অবজ্ঞার কারণে জেলা প্রশাসককে ওএসডি করে দিনাজপুর থেকে বদলি করা না হলে জেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রত্যাখ্যান করবে। ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই ধরনের অসদাচরণ সহ্য করা হবে না এমন নিশ্চয়তার দাবি করেন তারা। কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি সহদেব চন্দ্র রায়সহ অন্যরা বলেন, দিনাজপুরের ডিসি শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সঙ্গে অন্যায় করেনি। দিনাজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধার মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে। যা ইতিপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ধরনের জেলা প্রশাসকের প্রয়োজন নেই আমাদের। এদিকে সোমবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের জুগিবাড়ী গ্রামে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবর জিয়ারত করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এসএম তরিকুল ইসলামসহ মুক্তিযোদ্ধারা। পরে তারা মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে যান এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে বের হয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নুর ইসলামকে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ড্রাইভার পদে চাকরি দেয়া হয়েছে। আগামী নবেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে তিনি সেই চাকরিতে যোগদান করবেন। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে সরকার সবসময় সচেতন। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবগত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার ঘটনায় সদর উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িত কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার এসএম তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার দাফন ও মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দিনাজপুর সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির একক সদস্য অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেন তদন্ত করছেন।
×