ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণশুনানিতে বেবিচক চেয়ারম্যান

থার্ড টার্মিনাল হলে দু’কোটি যাত্রীর সেবা দেয়া যাবে

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 থার্ড টার্মিনাল হলে দু’কোটি যাত্রীর সেবা দেয়া যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে বছরে দু’কোটি যাত্রীর সেবা দেয়া যাবে। সে টার্গেট নিয়েই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানিতে এ কথা বলেন, চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। এ সময় তিনি জানান, শাহজালালে যাত্রী ভোগান্তি কমেছে, আরও কমবে, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া এখন সার্বিক সেবার মানে পরিবর্তন এসেছে। গণশুনানিতে অংশ নেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান, মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর খালিদ হোসেন, মেম্বার (এটিএম) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান, মেম্বার (অর্থ) মিজানুর রহমান, মেম্বার (এভসেক) শহীদুজ্জামান ফারুকী ও প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী ও বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ-উল-আহসান ও পরিচালক (এভসেক) উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গণশুনানিতে বেবিচক কর্মকর্তারা সাধারণ যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের যাত্রীসেবা ও ভোগান্তির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন। এভিয়েশান নিউজের শহীদ উল্লাহ পাটওয়ারীর এক প্রশ্নের জবাবে এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, গোলচক্কর ফুটওভারব্রিজে প্রতিদিন পথচারীদের ভিড়ে যে সমস্যা হয় তা নিরসনে পরিকল্পনা রয়েছে। হজ ক্যাম্প থেকে সরাসরি গোলচক্করের ওপর দিয়ে হয় একটি ওভারপাস নয় নিচ দিয়ে একটি আন্ডারপাস করা হবে। সাধারণ পথচারীর পাশাপাশি হজযাত্রীদের সম্মানে এটা অবশ্যই করতে হবে। এ বিষয়টি ইতোমধ্যে ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গেও এক বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। যাত্রী ভোগান্তি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবা করাই বিমানবন্দরের মূল উদ্দেশ্য। এখানে যখনই যার অভিযোগ পাই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত পরশু রাতে এক নারী ফোন করে আমাকে জানান, তার বিদেশ থেকে আসার পর তার একটি হ্যান্ডব্যাগ হারিয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক আমি নির্দেশ দেয়ার দু’দিন পর জানতে পারি সেটা উদ্ধার করে তারই কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এটা অন্য কারোর পক্ষে চুরি করা সম্ভব হয়নি। এ সময় লাগেজ ডেলিভারির অভাবনীয় উন্নতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে লাগেজ নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত। এখন প্রথম লাগেজ পাওয়া যায় বিশ থেকে পঁচিশ মিনিটের মধ্যে, শেষ লাগেজ এক ঘণ্টায়। শাহজালালের দোতলায় প্রায়ই দু’একটা গেট বন্ধ রাখার দরুণ বহির্গমন গেটে প্রবেশের সময় যাত্রীদের চরম ভিড় ও ভোগান্তি দেখা দেয়। এটার অবসান করার জন্য সবগুলো গেট খোলা রাখা সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, বেশিরভাগ সময়েই সবগুলো গেট খোলা থাকে। তবে কম ভিড়ের সময় বিবেচনা নিয়ে দু’একটা গেট বন্ধ রাখা হয় স্ক্যানার মেশিনের সার্ভিস ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে। সীমিত জনবল ও মেশিনারিজ দিয়ে সব পরিস্থিতিই সামাল দিতে হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। উপস্থিত তিনজন যাত্রী একত্রে অভিযোগ করেন, সকাল নয়টার ফ্লাইট ধরতে এসে কাউন্টারে পৌঁছার পর তাদের জানানো হয় বোর্ডিং কার্ড ছাড়াই ইমিগ্রেশনে ঢুকে যেত। তারা সেখানে যাওয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ অভিযোগ পেয়ে চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সামনে বসা এমিরেটসের স্টেশন ম্যানেজারকে এ অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে বলা হয়, বিলম্ব করে আসায় করার কিছু ছিল না। এ সময় এক নারী যাত্রী পাল্টা অভিযোগ করেন সঠিক সময়ে আসার পরও তাকেও বোর্ডিং কার্ড ছাড়াই ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। এ ঘটনার ব্যাখ্যা চাইলে এমিরেটস কর্মকর্তা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপর এক যাত্রীর অভিযোগ মদিনা থেকে ট্রাভেল এজেন্টসের মাধ্যমে টিকেট কাটায় ভুলে পাসপোর্ট নাম্বার না দেয়া তার স্বজনদের সৌদিতে ফিরে যাবার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বার বার ধর্না দেয়ার পরও বিমান তা ঠিক করে দেয়নি। এ বিষয়টির কি ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য বলা হলে বিমানের ডিজিএম কাস্টমার সার্ভিস ফজলুল হক তাৎক্ষণিক ওই যাত্রীর টিকেট ঠিক করে দেয়ার উদ্যোগ নেন। এসব অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল বলেন, যাত্রীদের সব অভিযোগ ঠিক নয়। এয়ারলাইন্সগুলোর কিছু রিফিজউ যৌক্তিক কারণেই হয়ে থাকে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও অভিযুক্তদের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও যাত্রীদের সার্বক্ষণিক অভিযোগ শোনার জন্য ফেসবুক পেজ ও হটলাইন রয়েছে। যে কেউ যে কোন সময় অভিযোগ করতে পারে। এ বিষয়ে আরও এক দফা এগিয়ে এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান জানান, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এভসেক এ ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সক্রিয় রয়েছে। এজন্য বিশেষ নাম্বারে যাত্রীরা ফোন করে তাদের সমস্যা জানাতে পারেন। শাহজালালের নবনিযুক্ত পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ-উল-আহসান জানান, বিমানবন্দরের যাত্রীদের যে কোন অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত। এ দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই।
×