ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

বন্ধ হোক রাজনীতির অপধারা

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 বন্ধ হোক রাজনীতির অপধারা

শেখ হাসিনার অর্জন ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। সব ধরনের অপচেষ্টা দেখছি। ছাত্রদের দিয়ে না পারলে ফেসবুকে উত্তেজনা। সংঘাত চললে এদের লাভ। দাঙ্গা বাধাতে পারলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লোভ বিএনপির। সঙ্গে জামায়াতীরা। প্রায় অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। যেখানে যাচ্ছি মুখে মুখে এক কথা। এভাবে কি চলে? একটার পর একটা ঘটনা আর দুর্ঘটনায় দেশ বার বার এমন এক জায়গায় চলে যায়, মনে হয় সঙ্কটের সমাধান নেই। উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবেশ। তারপর কিছুদিন উত্তেজনা আর হৈ চৈ। আবার সব ভুলে যায় মানুষ। জীবনযাপন যেখানে জরুরী সেখানে কোন বিপদই বড় না। এবার বুয়েট নিয়ে চরম উত্তেজনায় দেশ। আবরার নামের যে ছেলেটিকে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে যে চরম অসস্থিরতা, তার ভেতর নানা বিপদ ওঁৎ পেতে আছে। এটা মানতেই হবে, এমন মৃত্যু হত্যা ছাড়া আর কিছু না। এই হত্যাকা- পরিকল্পিত। ভিডিও ফুটেজসহ নানা প্রমাণে এটা পরিষ্কার হত্যাকান্ডের পেছনে ছিল একদল ছাত্র, যারা তার সহপাঠী। যারা তার সিনিয়র কিংবা সতীর্থ। এটা ভয়াবহ। আবরারকে কেন হত্যা করা হয়েছে, তার একটা মোটামুটি ছবি পাওয়া গেছে। বাহ্যত ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও মানতে হবে, একমাত্র কারণ এটা হতে পারে না। বোঝা যাচ্ছে সামাজিক অপরাধ আর খুনের নেশা এখন প্রায় একাকার। বুয়েটসহ দেশের সব বিদ্যাপীঠে র‌্যাগিং মারামারি খুনোখুনি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক। যার বিহিত করা প্রশাসনের দায়িত্বের পর্যায়ে পড়লেও তা করা হয় না। সবাই এসব জানেন। এগুলো না বলে আমরা বরং ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা বললেই সমাধানের দিকে এগুতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না বলা পর্যন্ত কোন কাজ হয় না। এমন এক পরিবেশ-কাকে ক’দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে বা কাকে জামিন দেয়া হবে না হবে, সে জন্য ও তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এটা কেমন রীতি? তিনি কেন সব বিষয়ে বলবেন? তার কি সে সময় বা সুযোগ আছে? আজ বাংলাদেশ যে জায়গায় সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পরিধি, নীতি, বাণিজ্য এগুলো ঠিক করাই যেখানে মুখ্য, সেখানে দেশের ভেতরকার ছোট ছোট সমস্যাও শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া সমাধান বা নিষ্পত্তির মুখ দেখে না। এই নির্ভরতা কি প্রমাণ করে? গণতন্ত্র কি তা বলে? না গণতন্ত্রের প্রমাণ আছে এতে? এটা তো তাঁর ওপর বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি যে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন, তার কোন তুলনা নেই। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কিসের ছাত্রলীগ? কিসের দল? এমন করে এদেশে কোন প্রধানমন্ত্রী কবে বলতে পেরেছেন? এটা তার উদারতা। কিন্তু আমরা এদেশেই জন্ম নেয়া বড় হওয়া মানুষ। সব দেখেছি। এর আগের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বেলায়ও এমন ছিল। সব একপেশে। পার্থক্য এই তিনি এমন কঠিন আত্ম সমালোচনা করতে জানতেন না। তারপরও দেখছি এক ধরনের রাজনীতির মূল টার্গেট শেখ হাসিনা ও তার রাজনীতি। সে কথা বিশদ বলার আগে ছাত্র রাজনীতির কথা বলি। ছাত্র রাজনীতির গর্ব বা অহংকার নামের যা যা ছিল, তা আজ কাহিনী। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত না অনুচিত এ নিয়ে যারা তর্ক করেন তাদের বলি, একাত্তর আর আজকের বাংলাদেশ কী এক? একটি পরাধীন জাতির ছাত্র সমাজ ও স্বাধীন দেশের ছাত্র সমাজ কী এক? কোনটাই মিলবে না। আওয়ামী ছাত্র লীগের প্রডাক্ট কি উদাহরণ যোগ্য কিছু? ছাত্র রাজনীতি কেবল মাত্র ঝলসে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে। এমন কি যুদ্ধের সময়ও কারও কারও ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। যে কারণে এদেশের নীতিবান নেতা তাজউদ্দীন আহমদকে পড়তে হয়েছিল বিপদে। আমরা এসব ভুলে যাই। ভুলে যাই এদেশে সামরিক সরকার এসে প্রথম ছাত্রদের বারোটা বাজানোর জন্য হিজবুল বাহারে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠিয়েছিল। আদর্শ আর ন্যায়ের পায়ে কুড়াল মারার শুরু জেনারেল জিয়ার আমলে। তারপর এরশাদ আমলে শুরু হয়েছিল কেনাবেচা। নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের অভি নীরু বাবলুকে আপনি কিভাবে ভুলে যাবেন? কি ভাবে ভুলবেন ঢাকায় একের পর এক হত্যা! দেশব্যাপী ছাত্রদের চরিত্র ধ্বংসের অপরাজনীতি? যারা এখন ছাত্রদের চরিত্র হনন করছে তারাই আবার সুযোগ পেলে অন্য দলের হয়ে এমনটা করবে। তবে এখন সবকিছু ছাপিয়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর দৌরাত্ম্য মানুষকে অসহায় আর অনিরাপদ করে ফেলেছে। নামধারী হোক আর যাই হোক লাশ ফেলার রাজনীতি করে তারা মাহমুদুর রহমান মান্না ও খোকার এজেন্ডাকেই সামনে নিয়ে আসছে। দেশের আর সব জায়গায় যখন তিলে তিলে মানুষ উন্নতি আর ভাল থাকার সংগ্রাম করছে, তখন ছাত্র রাজনীতির নামে চলছে লুটপাট। লোভ-লালসাসহ নিয়ম না মানার কারণেই এই পরিবেশ। এই নারকীয় বাস্তবতা। তোপের মুখে থাকা ভিসিকে নিয়ে মজা লুটা যায়, কিন্তু সমাধান পাওয়া যাবে না। ভিসি নাম বা পদবী এখন প্রায় বিতৃষ্ণার পর্যায়ে চলে গেছে। কেন? কারণ এই পদে এখন মেধা বা যোগ্যতা আসল বিষয় না। চাই লবিং। প্রধানমন্ত্রীকে এদিকে নজর দিতেই হবে। সিন্ডিকেটমুখী অধ্যাপক ও শিক্ষকমন্ডলীর সাদা দল নীল দল থাকলে ছাত্ররা কেন নানা দলে বিভক্ত হবে না? আবরার হত্যাকান্ডে কতগুলো বিষয় পরিষ্কার। সরকার প্রধান পপুলার হলেও সরকার না। এরপর আছে মন্ত্রী-নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা। তারা কি পুতুল? তারা সব বিষয়ে হয় নীরব, নয়তো লাগামছাড়া। এবারের ঘটনায় এটাও প্রমাণিত, দেশে এমন একটি শক্তি বড় হয়ে গেছে যাদের মোকাবেলা করা না গেলে বাংলাদেশের মূল পরিচয় ও অর্জন মাথা নিচু করে পালাতে বাধ্য হবে। আপনি যদি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের ভাষা খেয়াল করেন বুঝবেন, তারা কাদের দ্বারা পরিচালিত। মূল ঘটনা থেকে সরিয়ে তাদের হাতে যে প্ল্যাকার্ড ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, তা ভয়ঙ্কর। তাদের ভাষা কেন বলবে এদেশে শুধু একজনের বাবার হত্যার বিচার হয়েছে, আর কারও বাবা বিচার পায় না? এটা কি সত্য? বারবার বলি, আওয়ামী লীগের অর্জন নষ্ট করার জন্য দুশমনের দরকার পড়ে না। মধ্যবিত্ত বাঙালীর মনে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর যে কৌশল, তা সহজেই লুফে নিতে পারে অন্যরা। ভারত হিন্দু পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধ এই বিষয়গুলো আগুন নিয়ে খেলার মতো ভয়ঙ্কর। আবরার হত্যার বিচার না হলে আগের ঘটনাগুলো যেমন বুদবুদ আকারে ফিরে আসবে, তেমনি বার বার নতুন আবরার হত্যার ঘটনা রোধ করা যাবে না। বলব, দায়ী ছাত্র লীগসহ সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ড আপাতত বন্ধ করা হোক। জাতীয় মতামত, সব রাজনৈতিক ধারাকে একত্রিত করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে আগে রূপরেখা ঠিক হোক। তারপর খুলে দেয়া যেতে পারে ছাত্র রাজনীতি। যা টেন্ডার দালালী গুন্ডামি মস্তানী হত্যা র‌্যাগিং ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না, তাকে জিইয়ে রেখে যাদের লাভ, তারাই গডফাদার। জনগণ ফুঁসছে। নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। শান্তির ললিত বাণীতে কাজ হবে না। চাই সঠিক ব্যবস্থা। আর একটি মৃত্যুও কাম্য নয়। [email protected]
×