ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাবিতে ভিসি অপসারণ দাবিতে চলছে সর্বাত্মক ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

জাবিতে ভিসি অপসারণ দাবিতে চলছে সর্বাত্মক ধর্মঘট

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ধর্মঘটের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৮ টা থেকে নতুন ও পুরাতন উভয় প্রশাসনিক ভবন এবং বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটক আটকে রেখে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় অবরোধের কারণে উপাচার্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউই অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। অধিকাংশ বিভাগেই অনুষ্ঠিত হয়নি পূর্বনির্ধারিত ক্লাস পরীক্ষা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম। বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনে প্রবেশ করার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তবে উপাচার্যপন্থী একাধিক শিক্ষক ধর্মঘট উপেক্ষা করে ক্লাস পরীক্ষা নেন। এসময় আন্দোলনকারীদের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে উপাচাযপন্থী শিক্ষকেরা। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আন্দোলন ঠেকাতে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা পরীক্ষা দিয়ে রেখেছে। ভিসিকে বাঁচাতে মানবন্ধনে যাওয়ার সময় ক্লাস-পরীক্ষার কথা মনে থাকে না তাদের।’ এসময় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্লাস-পরীক্ষা ও গবেষণা করতে চাই। কেউ আসতে চাইলে কাউকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘ দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারনের দাবিতে সর্বত্মাক ধর্মঘট চলছে। এতোদিন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচীতে যাইনি। এখন বাধ্য হয়েছি। আমরা কাউকে জোর করছি না, বরং শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে।’ এদিকে চলমান আন্দোলন প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স¦ার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে আন্দোলনকারীদেরকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সম্মিলিত সংগঠন ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’। এ বিষয়ে আন্দোলনককারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, “ছাত্রলীগের দুইজন নেতা মিডিয়ার সামনে সরাসরি স্বীকার করেছে উপাচার্য তাদেরকে ২৫ লক্ষ করে টাকা দিয়েছে। উপাচার্য যদি নির্দোষই হতেন তবে তদন্ত করে ঐ দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন। এই উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। এই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ” শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না করার অনুরোধ জানিয়ে আন্দোলনকারীদের চিঠি দেন জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা। তিনি বলেন, “ক্লাস করা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। অবরোধ মানা, না মানা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু জোরপূর্বক কাউকে ক্লাস করতে না দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক? অবরোধে যদি শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকে তাহলে সকলে নিজ থেকেই ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না।” ধর্মঘট শেষে বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কিছুক্ষণ সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক আটকে রাখে। পরবর্তীতে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক এবং উপাচার্যের বাসভবন প্রদক্ষিণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
×