ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এক কোটি ৬৫ লাখ পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

 দেশে এক কোটি ৬৫ লাখ পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৪ পরিবার। এক্ষেত্রে শহরে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ পরিবার এবং গ্রামে এক কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার ১১৯ পরিবার কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। কৃষি শুমারি-১৯-এর প্রাথমিক রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। তথ্য প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। কৃষি শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি খানার হার কমেছে। ২০০৮ সালে কৃষি খানার হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ১৯ সালে এসে প্রায় ৩ শতাংশ কমে কৃষি খানার হার দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন অডিটরিয়ামে কৃষি শুমারির (২০১৯) মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শুমারির তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে বিবিএসের এই শুমারির সঙ্গে তথ্যের ব্যবধানের কথা বলছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, শুমারিতে ডিম, দুধ, ইলিশ ও মিঠা পানির মাছের তথ্য নেই। শুমারির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট খানার সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০। এর মধ্যে শহরে ৫৯ লাখ ৮ হাজার ২০৫ এবং পল্লীতে ২ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৫ খানা রয়েছে। আর কৃষি খানার সংখ্যা এ মুহূর্তে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৪। এর মধ্যে শহরে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ ও গ্রামে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার ১১৯। কৃষি শুমারি ২০১৯-এ দেশের বর্তমান মুরগি, হাঁস, টার্কি, গরু, মোষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। গৃহপালিত পশুপাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মুরগি। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুরগির সংখ্যা ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯০১। এর মধ্যে শহরে মুরগির সংখ্যা ৮০ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬ এবং পল্লীতে ১৮ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫, হাঁস ৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০। এর মধ্যে শহরে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৮ ও পল্লীতে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার ২২। টার্কির সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪২০। এর মধ্যে শহরে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১১৬ এবং পল্লীতে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৪। গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫। এর মধ্যে শহরে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৯২৭ এবং পল্লীতে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৮। মোষের সংখ্যা ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪১১। এর মধ্যে শহরে ২১ হাজার ৬০ এবং পল্লীতে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫১। ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৩ । এর মধ্যে শহরে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ এবং গ্রামে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৪। ভেড়া ৮ লাখ ৯২ হাজার ৬২৮। এর মধ্যে শহরে ৩০ হাজার ৭২২ এবং পল্লীতে ৮ লাখ ৬১ হাজার ৯০৬। এই তথ্য অনুযায়ী, ’১৯ সালে মৎস্য খানার সংখ্যা ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৫। এর মধ্যে শহরে ৩১ হাজার ৮৭ এবং পল্লীতে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮। কৃষি মজুর খানার সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭৭। এর মধ্যে শহরে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৩১ এবং পল্লীতে ৮৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪৬ খানা রয়েছে। নিজস্ব জমি নেই এমন খানার সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯। এর মধ্যে ১৭ লাখ ৯১৯ খানা শহরে এবং পল্লীতে ২৩ লাখ ২৩ হাজার ২৭৯০। অন্যের কাছ থেকে জমি নিয়েছে এমন খানার সংখ্যা ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৭। এর মধ্যে শহরে ২ লাখ ২৯ হাজার ২৪৫, পল্লীতে ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৪২। মৎস্য চাষাধীন জমি আছে এমন খানার সংখ্যা ১৬ লাখ ৫ হাজার ১৮৫। এর মধ্যে শহরে ৫৩ হাজার ৫, গ্রামে ১৫ লাখ ৫২ হাজার ১৮০। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিজের জমি নেই এমন পরিবার সবেচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে প্রতি হাজারে ৬৪৮ পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। রাজশাহী বিভাগে প্রতি হাজারে ২৪১ পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। এছাড়া রংপুর বিভাগে প্রতি হাজারে ৩১৭, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৭৫, খুলনা বিভাগে ২৬৯, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬৯, সিলেটে বিভাগে ২২১ এবং বরিশাল বিভাগে প্রতি হাজারে ৯২ পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। তবে প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ জানান, নিজস্ব জমি নেই অর্থ ভূমিহীন নয়। অনেক সময় নিজের নামে জমি না থাকলেও তার বাবা-দাদার নামে থাকতে পারে। কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের তথ্যের কোন মিল নেই। বিভাজনে হাইব্রিড ধানের কোন হিসাব নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ছাদ বাগান এখন অনেক জনপ্রিয়, একে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাসমান কৃষিকে যুক্ত করা হয়নি। মাসকলাই ও ছোলার ডালের তথ্য বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিসংখ্যানের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় থাকা উচিত। তাহলে এত বেশি ব্যবধান থাকবে না। অনুষ্ঠানে শুমারির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রইছুল আলম ম-ল বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বিশুদ্ধ ডেটা দরকার। বেজ লাইন না থাকলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক হয় না। শুমারিতে ডিম, দুধ, ইলিশ ও মিঠা পানির মাছের তথ্য থাকা উচিত ছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এত বড় মহাযজ্ঞ বোধ হয় নিখুঁত হওয়ার বিষয় নয়। সংশোধনের বিষয় রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও সবাই নিবিড় কাজ করবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। বিবিএসকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের সব পরিকল্পনার ভিত্তি হবে পরিসংখ্যান। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আগে নাক সিটকালেও এখন আমাদের তথ্য ব্যবহার করছে। মন্ত্রী বলেন, আগামীতে যেসব কাজ হবে সেখানে আপনারা আরও নিবিড়ভাবে সেখানে যুক্ত থাকবেন। যাতে এ ধরনের ছোটখাটো ভুল সেগুলো থাকে, এগুলো এড়ানো যায়। কারণ, ছোটখাটো ভুল হলেও এগুলোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। দেশী কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্যেই দেশের মঙ্গল নিহিত রয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাঠ পর্যায়ে মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ১৯ সালের ৯ জুন থেকে ’২০ সালের জুন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
×