ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একমাসেও মেলেনি সরকারী সহায়তা

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

 একমাসেও মেলেনি সরকারী সহায়তা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় এক রাতে সাড়ে ৫ হাজার চাষীর ঘেরের মাছ মারা যাওয়ার এক মাস অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা পায়নি কোন সরকারী সহায়তা। সহায় সম্বল হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছে স্থানীয় চাষীরা। অধিকাংশ চিংড়ি চাষী এনজিও ও ব্যাংকের ঋণের বোঝায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারী সহায়তা দাবি করছে চিংড়ি চাষীরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ^াস দিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বাগেরহাটের তিনটি উপজেলায় ৩ হাজার ১০৩টি চিংড়ি ঘেরের ৩৫৬ মেট্রিকটন চিংড়ি মাছ মরে যায়। এতে সাড়ে ৫ হাজার চিংড়ি চাষীদের ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। তবে চাষীদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ এর দ্বিগুণেরও বেশি। ফকিরহাট উপজেলার কলকলিয়া এলাকার সুশান্ত ম-ল বলেন, যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৮ সালে চিংড়ি চাষ শুরু করি। ১২ বিভা ও ৪ বিঘার দুটি ঘেরে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথম বছর খরচ উঠিয়ে মোটামুটিভাবে ভালই ছিলাম। এ বছর আশা, গ্রামিন ব্যাংক ও ডাক দিয়ে যাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওই দুই ঘেরে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করি। স্বপ্ন ছিল ১২ লক্ষ টাকার মূলধনে লভ্যাংশ দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করে একটু ভাল থাকব। কিন্তু একরাতের মড়কে সকল স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। নিলয় কুমার দে, বিভূতি ভূষণ মজুমদার, মনোতোষ বাগচি, লাভলু কাজী বলেন, আমরা সকলেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছি। কিন্তু এ ধরনের বিপর্যয় আমাদের কখনও হয়নি। চিংড়ি চাষের জন্য আমরা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকি। বছর শেষে মাছ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু এবার ঘেরের মাছ যেভাবে মরেছে, তাতে ঋণের টাকাতো দূরের কথা নিজেদের পুঁজিও টিকবে না। ইতোমধ্যে এনজিও থেকে তারা শুরু হয়ে গেছে। ব্যাংক এবং এনজিও-র ঋণ মওকুফ ও সরকারী সহায়তা না পেলে নতুন করে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব নয়। এছাড়া কয়েক জন চাষী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের আগে মৎস্য বিভাগের কোন নির্দেশনা থাকত, তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না। তাদের কখনও মাঠে পাওয়া যায় না, এমনকি ফোন দিলেও সময়মতো তারা আসেন না। শুনেছি মৎস্য বিভাগ মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়, কিন্তু কাদের দেয়া হয় জানি না। আমাদের এলাকায় কখনও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, একরাতে মাছ মরে এ উপজেলার চিংড়ি চাষীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে উপজেলায় এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে শুধু চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ব্যাংক, এনজিও, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সব ধরনের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজির সঙ্গে কথা হয়েছি। তারা ফকিরহাট উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। মৎস্য চাষীদের ঋণ পুনঃনবায়ণ করার সম্মতি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মৎস্য কর্মকর্তারা কখনও তাদের রুটিন ওয়ার্কের বাইরে যায় না। চিংড়ি চাষকে টিকিয়ে রাখতে হলে, চাষীদের জন্য আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষীদের প্রণোদনা দিতে হবে। মৎস্য কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় গলদা-বাগদা চিংড়ি মাছ মারা যায়। এতে স্থানীয় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাষীদের ক্ষতিপূরণ নিরুপণ করে উধর্তন কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি। এর প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মৎস্য অধিদফতরের মহা পরিচালক সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। চাষীদের পুনর্বাসন ও ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মৎস্য কর্মকর্তারা কখনও মাঠে চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন না এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি চাষীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। কিন্তু জনবল সঙ্কটের কারণে কিছুটা সমস্যায় হয়। চাষীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমরা আরও গুরুত্ব দিচ্ছি।
×