ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝড়ো বাতাস, হঠাৎ বৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

 ঝড়ো বাতাস, হঠাৎ বৃষ্টি

কার্তিকের কাইতান বলে একটি কথা বাংলা প্রবাদ-প্রবচনে রয়েছে। এরকম আরও রয়েছে খনার বচন, লোকগাথা, ছেলে ভোলানো-ঘুম পাড়ানি ছড়া ও লোকগান। আপাতত ঝড়ো হাওয়া ও তুমল বৃষ্টিপাত নিয়ে দু’চার কথা বলা যেতে পারে। অসময়ে এই বারিধারা এবং ঝড়ো বাতাস ফুল-ফল-ফসল ও চাষাবাদের জন্য ভাল কি মন্দ তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন কৃষিবিদ ও কৃষকেরা। আর আবহাওয়াবিদরা বলবেন বৃষ্টিপাতের আরও সম্ভাবনা ও পূর্বাভাস, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, সর্বোপরি প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা, ঋতু পরিবর্তনের সমূহ বিপদ ও ঝুঁকি সম্পর্কে। অসময়ে এই হঠাৎ বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া বিশেষ করে রাজধানীসহ নগরজীবনে যোগ করেছে বাড়তি দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা। অসহনীয় যানজটের মহানগরীতে স্বপ্নের মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে বিস্তর খোঁড়াখুঁড়ি। অন্যদিকে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের নিমিত্ত বড় বড় পাইপ ভূতলে বসানোর কাজও চলছে প্রায় সর্বত্র। ফলে প্রায় দিনরাতব্যাপী কখনও অঝোর ধারায় আবার কখনওবা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাতে পথঘাট অনেক স্থানে জলমগ্ন। আর কাদার কথা তো বলাই বাহুল্য। থকথকে পিচ্ছিল কর্দমাক্ত রাস্তাঘাট, উন্মুক্ত ম্যানহোল ও মাটি খননজনিত কালো গহ্বর যে কোন ভূতলে যে কোন স্থানে হাত-পা ভাঙ্গার সমূহ সম্ভাবনা নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। ফলে নারী-পুরুষ-পঙ্গু-অসহায় বৃদ্ধসহ মানুষ তো কোন ছাড়, যানবাহনকে পর্যন্ত পড়তে হয় নাকাল দশায়। অন্যদিকে মাথার ওপর ছড়িয়ে আছে জটপাকানো বিদ্যুত ও ডিশের তারের তন্তুজাল। বর্ষা মৌসুমে এবার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতসহ তেমন বন্যা না হওয়ায় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে তেমন নাকাল হতে হয়নি জলাবদ্ধতায়। তবে তখন রীতিমতো নগর আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরকে কেন্দ্র করে, যাতে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও আছে। তদুপরি ঈদের ছুটির অবকাশে অচিরেই এই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। এখন এই অসময়ের বৃষ্টিতে অবশ্য কিউলেক্স ও এনোফিলিস মশার বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। ফলে নগররক্ষকদের তথা সিটি কর্পোরেশনকে প্রায় সারা বছর ধরেই চালিয়ে যেতে হবে মশক নিধন কার্যক্রম। অন্যদিকে গ্রাম-গঞ্জের কি অবস্থা? আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনা আরও দু’চারদিন চলবে, অন্তত অমাবস্যার জো পর্যন্ত। যেটি ইলিশসহ মাছের প্রজনন তথা ডিম ছাড়ার জন্য অতি উত্তম সময়। কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহলদারির পরও চোরা মৎস্য শিকারিদের উৎপাত-উপদ্রব কিন্তু কমছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, গরিব জেলেরা যাবে কোথায়? খাবে কি? কৃষিবিদরা বলছেন, অসময়ের এই বৃষ্টি আমন চাষের জন্য উত্তম। বিলম্বিত হবে রবিশস্য, সরিষা, ডাল ইত্যাদির আবাদ। শাক-সবজি, তরিতরকারির জন্য এ বৃষ্টি ক্ষতিকর। ফলে এসব নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দাম তো পৌঁছেছে প্রায় অধরা পর্যায়ে। ধান-চালের বাম্পার ফলন হওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে দৈনন্দিন ক্ষুণিœবৃত্তিতে। সাধারণ মানুষ ও মধ্যবিত্ত এতে খুশি বৈকি। এ সময়ে দিনমজুরদের দৈনিক কাজ পাওয়া একটু কঠিন ও প্রতিকূল বটে। আর কাকভেজা হতে কে চায়। ফলে মাগ্গি-গ-ার বাজারে অসহায় উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে অযথা সময় কাটাতে বাধ্য হতে হয় অনেককে, যা থেকে উৎপত্তি কার্তিকের কাইতানের। তবু এই অপেক্ষায় থাকে আলোঝলমলে আশার ঝিলিক- মেঘের ফাঁক-ফোকর দিয়ে কখন দেখা দেবে খুশির আলো! প্রকৃতপক্ষে এই আশা-ভরসা নিয়েই তো মানুষ বেঁচে-বর্তে থাকে শেষ পর্যন্ত। বাংলাদেশে ঋতুচক্রের আবর্তনে বেশ কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি ও স্বাভাবিক বন্যা হচ্ছে না। গ্রীষ্মকাল হচ্ছে প্রলম্বিত। তাপমাত্রা ও খরা প্রবণতা বাড়ছে। শীত তো প্রায় পড়ছেই না- অনেকটা যেন মাধবী এসেই বলে যাই-এর মতো! এসবই কি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত অশনিসঙ্কেত? আপাতত প্রবচনটি সামান্য একটু বদলে বলা যেতে পারেÑ লেবুপাতা, করমচা, এই বৃষ্টি চলে যা।
×