ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনুবাদ উৎসব

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

অনুবাদ উৎসব

একজন মানুষের পক্ষে বিশ্বের সব ভাষা জানা কি সম্ভব? কমপক্ষে তিনটি ভাষা জানাও সহজ নয়। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য কোন ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজী ভালভাবে জানাটাও বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তাই অন্য ভাষায় লেখা গ্রন্থ পাঠে জীবনের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য অনুবাদের বিকল্প হয় না। একইভাবে মাতৃভাষায় লেখা বিচিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ সম্পদসমূহ ভিন্ন ভাষাভাষীর সমীপে পৌঁছে দিতে হলে তারও অনুবাদ জরুরী। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি উদার এবং কৌতূহলী বলেই বিশ্বের কালজয়ী সব লেখক, এমনকি সদ্য পরিচিতি পাওয়া কিংবা পুরস্কারের কল্যাণে খ্যাতিমান হয়ে ওঠা লেখকদের লেখা অনুবাদকর্মে ও পাঠে আনন্দ পান। শুধু ইংরেজী ভাষা থেকে নয়, রুশ, জার্মান, আরবী, হিন্দী, উর্দুসহ বেশ কটি ভাষা থেকে আমাদের অনুবাদকরা অনুবাদ করেছেন অকাতরে। বিষয়টি অনেকটা একমুখীও বটে। আমরা শুধু গ্রহণ করে চলেছি; কিন্তু আমাদের সাহিত্যসম্পদগুলো অন্যরাও গ্রহণ করুক- তার খুব একটা সুব্যবস্থা নিইনি। বরং খানিকটা উদাসীনই থেকেছি। এরকম একটি বাস্তবতায় দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দু’দিনব্যাপী ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্ট বা অনুবাদ উৎসব। মহান ভাষা আন্দালনের সময় স্মারক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করেছে এবং দেশে-বিদেশে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে চলেছে। সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশা ছিল বাংলা ভাষার সেরা সম্পদ এবার বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার একটি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ তৈরি হবে। তা না হওয়া দুঃখজনক। তবে এখনই সেটি শুরু করা গেলে নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। বিশ্বের ইংরেজী ভাষার পাঠকদের কাছে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল ও মননশীল গ্রন্থসমূহের অনুবাদ পৌঁছে দিতে হলে মানসম্পন্ন অনুবাদের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে দেশীয় রচনার ইংরেজী অনুবাদের যে গড়পড়তা মান তা দিয়ে বিশ্ববাজারে স্থান পাওয়া অসম্ভব। এই অনুবাদের মান দিয়ে পরিচিতিমূলক প্রকাশনা ছড়িয়ে দেয়ার কাজটুকু চালিয়ে নেয়া যেতে পারে, তার বেশি নয়। আবার এটাও সত্য যে, অনুবাদককে তার অনুবাদকর্মের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দুটি ভাষায় বিশেষ দক্ষ হওয়া আবশ্যক। একদিকে ভাষাগত দক্ষতা, অপরদিকে সৃজনবৈশিষ্ট্যর অধিকারী হওয়া- এই দুই মিলিয়ে সুযোগ্য সুদক্ষ অনুবাদক দেশে খুব সুলভ নয়। কিন্তু সেজন্য হতাশ হয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। মেধা অন্বেষণের কাজটি এখনই শুরু করা চাই। অনুবাদে উৎসাহী তরুণদের গড়ে তোলার কাজটি দ্রুত শুরু করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের কথা তো বলাই যায়। তবে বেসরকারী পর্যায় থেকেও উদ্যোগ নেয়া অসম্ভব নয়। বরং সেটিই প্রত্যাশিত। অনুবাদ সেল বা অনুবাদ কমিশন- যে নামেই বলি না কেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান জাতীয়ভাবেই প্রয়োজন। যেখান থেকে অনুবাদ হলে নিঃশঙ্কচিত্তে বলা যাবে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রেরণের জন্য মানসম্পন্ন অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। কাজটি কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। অনুবাদ উৎসব আমাদের লেখক-অনুবাদকদের মধ্যে এসব ভাবনার উন্মেষ ঘটানোয় আগামীতে আরও সক্রিয় ও গভীর ভূমিকা রাখবে- এটুকু প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। দেশে আন্তর্জাতিক মানের কবি-সাহিত্যিক বিলক্ষণ আছেন। কিন্তু শুধু ভাষাগত সীমাবদ্ধতার জন্য, খোলাখুলি বললে ইংরেজীতে অনূদিত না হওয়ার কারণে তাদের বিশ্ববাসী চিনে উঠতে পারছেন না। ভাল মানসম্পন্ন অনুবাদ গ্রন্থের অনুপস্থিতি আমাদের লেখককুলের জন্য এক গভীর দীর্ঘশ্বাসের কারণ। এহেন শোচনীয় দুরবস্থার অবসান বাঞ্ছনীয় বৈকি।
×