ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্যামাপূজা ও দীপাবলি আজ

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

 শ্যামাপূজা ও  দীপাবলি  আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা। এ ধর্মীয় উৎসবটি কালীপূজা নামেও পরিচিত। একই সঙ্গে আজ উদ্যাপিত হবে শুভ দীপাবলি উৎসব। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, শ্যামা দেবী হলো শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের প্রতীক। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভক্তের জীবনে অবারিত কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে ধরাপৃষ্ঠে আগমন ঘটে দেবী শ্যামার। আজ জননীরূপে বাঙালীর জীবনে আবির্ভাব ঘটবে মহাশক্তি ত্রিনয়নী মা শ্যামার। হিন্দু পুরাণ মতে, কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দটি থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মাহাত্ম্য। কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যশক্তি। শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের তন্ত্রশাস্ত্র মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা। তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশজন দেবীর মধ্যে প্রথম। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মা- সৃষ্টির আদিকারণ মনে করে। বাঙালী হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন-দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, মহাকালী ও চামুন্ডা। আবার বিভিন্ন মন্দিরে ব্রহ্মময়ী, ভবতারিণী, আনন্দময়ী, করুণাময়ী ইত্যাদি নামে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত ও পূজিত হয়। কালীপূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় আজ সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণ করবেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলী। দীপাবলী ভারতে ‘দেওয়ালি’ নামেও পরিচিত। অমাবস্যা রাতের সমস্ত অন্ধকার দূর করতে এই রাতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। যাতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পায়। দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা ম-পে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়, মধ্যরাতে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবীকে ছিন্নমস্তকসহ বলির পশুর রক্ত, মিষ্টান্ন, অন্ন বা লুচি, মাছ ও মাংস উৎসর্গ করা হয়। তবে গৃহস্থবাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যশক্তি কালীর রূপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শক্তি ও শান্তির দেবী শ্যামা মায়ের আগমনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে আজ অমাবস্যা তিথিতে দিবাগত রাতে দেশব্যাপী উদ্যাপিত হবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলি। সন্ধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে জ্বালানো হবে মঙ্গল প্রদীপ (দেওয়ালি)। বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গল কামনায় হিন্দু সম্প্রদায় জাঁকজমকভাবে শ্যামাপূজা ও দীপাবলী উদ্যাপনে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কোথাও শ্যামাপূজার আনন্দ-উৎসব চলবে আজ থেকে টানা তিন দিন। আবার কোথাও পূজা শেষে কাল সোমবার রাতে প্রতিমা বিসর্জন দেবে। রাজধানীর পুরনো ঢাকায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সবচেয়ে বেশি শ্যামা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার থেকেও নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ঢাকার অধিকাংশ পূজাম-পে আনা হয়েছে নানা বৈচিত্র্য। বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে পূজামন্ডপগুলো। পোস্তগোলা জাতীয় মহাশ্মশানে ২০টির মতো কালীপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, তাঁতিবাজার, শাঁখারীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বনগ্রাম রাধা গোবিন্দ জিও মন্দির, জয়কালী মন্দির, রামসীতা মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রমনা কালী মন্দির, রাজারবাগের বরদেশ^রী কালীমন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামন্ডপে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে আলোকসজ্জা, ফানুস ওড়ানো, প্রদীপ প্রজ্বালন, ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, আরতি ও প্রসাদ বিতরণ।
×