ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

 ভোলার ঘটনায় তদন্ত  কমিটির রিপোর্ট  দাখিল

হাসিব রহমান, ভোলা থেকে ॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ৩ সদস্যের কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেও প্রশাসন এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে মুখ খোলেনি। তবে তারা বলছে কি ঘটেছে কেন ঘটেছে তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বোরহানউদ্দিনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ইতোমধ্যে হামলার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃত যে দোষী তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কিছু সিগন্যাল দিয়েছে। বিষয়টাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মিডিয়ায় এসেছে ছাত্রদলের সভাপতি সবুজ বলছে গুলি কর। এই গুলিটা কাকে করতে বলল। এটা নিয়ে এমপি প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি যুবদলের অনেকে ছিল বলে উল্লেখ করেন। পরে তিনি নিহতের পরিবারকে ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের পক্ষ থেকে নগদ ২০ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এদিকে বোরহানউদ্দিনে ঈদগাহ মাঠে এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলাকারী একই গ্রুপ বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ভোলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমিতসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনকে দায়ী করেছে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্যপরিষদ। ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে সংগঠনটি। বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে এক সংখ্যালঘু যুবকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আল্লাহ ও নবীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক মেসেজের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার আগেই ভোলার বোরহানউদ্দিনে গত রবিবার তৌহদী জনতার ব্যানারে প্রতিবাদ সভায় হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গুলি, সংখ্যালঘুদের বাড়ি মন্দিরে ভাংচুর লুটপাটসহ ৪ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোলার স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মাহমুদুর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বোরহানউদ্দিনের ঘটনা তদন্ত করে শুক্রবার রাতে ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি বোরহানউদ্দিনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার ও জবানবন্দী গ্রহণ করেন। আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ জনগণের সাক্ষাতকার ও জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। ভিডিও ফুটেজ ও মিডিয়ার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। সব তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ১৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত প্রতিবেদনটি তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে পুরো ঘটনার বর্ণনা প্রথম থেকে কেন ঘটেছে, কি ঘটেছে প্রেক্ষাপট বিবেচনার জন্য এবং অবগতির জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে। এদিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নিজ বাস ভবনে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল শনিবার বেলা ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বোরহানউদ্দিনের সংঘর্ষের ঘটনা শুনে ঢাকা থেকে তাৎক্ষণিক হেলিকপ্টারযোগে বোরহানউদ্দিন চলে আসেন। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। ওইদিন রাতে থানায় আলেম ও প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেন। এর আগেও ঘটনার সূত্রপাত যখন হয়, তা সমাধানে আলেমদের সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন। পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করায় ওই সময় আলেমদের নেতৃবৃন্দ তাকে কথা দেন যে, বোরহানউদ্দিনের ঈদগাহ মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে না। কিন্তু তার পরেও হয়। তিনি বলেন, সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্যপরিষদের ৬ দফা দাবির মধ্যে প্রায় দাবি তারা পূরণ করার চেষ্টা করছে। তার মধ্যে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মানবিক সহায়তা তাও আজ শনিবার দেয়া হবে। আলেমদের মধ্যে ৩ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে সেখানেও সহায়তা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বোরহানউদ্দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, আরও গভীরে গিয়ে আমরা বলতে পারব আসলে বিষয়টা কি। তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটার পরই আমরা স্পষ্ট করব। শীঘ্রই আমরা জানতে পারব। শীঘ্রই আপনারা জানতে পারবেন। আগামী ২৭ তারিখ একটি পুলিশ টিম অধিদফতর থেকে আসবে। সব মিলিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে কারা দোষী। তিনি বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি ছাত্রদল যুবদল অনেকে জড়িত। আমরা আরও পর্যবেক্ষণ করব। প্রকৃত দোষী কেউ বাঁচতে পারবে না। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে ভোলার বোরহানউদ্দিনে রবিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৪ পরিবারকে ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর পক্ষ থেকে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল নিহতদের পিতা-মাতার হাতে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, বোরহানউদ্দিন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, বোরহানউদ্দিন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন হায়দার। ভোলার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ভোলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্যপরিষদের ঘোষিত কোন কর্মসূচী নেই। এ কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সীমিত সংখ্যায় মাঠে ফোর্স মোতায়ন করা হয়েছে। পুলিশ লাইন ও অন্যান্য স্থাপনায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য রয়েছে। অন্যদিকে বোরহানউদ্দিনের হামলার ঘটনার রিমান্ডের তিন আসামির মধ্যে ১ জন সামান্য কিছু তথ্য পুলিশকে দিয়েছে বলে জানা গেছে। ৩ দিনের রিমান্ড শেষে হলে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়াও পুলিশ সুপার বলেন, গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা এবং ঈদগাহ মাঠের ঘটনা একই গ্রুপ কাজ করেছিল।
×