ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা

অভাব দূর করতেই কাজ নিয়েছিল শিশু আলাল

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

  অভাব দূর করতেই  কাজ নিয়েছিল  শিশু আলাল

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ কাহালু উপজেলার আফরিন জুট মিলে শুক্রবার পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার শিকার শিশু শ্রমিক আলাল(১২) পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করতেই শ্রমিক হিসেবে কারখানায় যোগ দিয়েছিল। শিশু বয়সেই পরিবারের বোঝা কাঁধে নিতে ও পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে স্কুল ছেড়ে শ্রমজীবীর পথ বেছে নিতে হয়। তার মা দোলেনা বেগম ও খালা রেশমাসহ পরিবারের ৩ সদস্য একই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। আর ওই কারখানায় শুধু আলাল নয়, আরও শিশু শ্রমিক কাজ করছে। এর সংখ্যা বিশের অধিক হবে বলে কারখানার এক শ্রমিক জানিয়েছেন। এদিকে আলালকে হত্যার ঘটনায় একই কারখানার গ্রেফতারকৃত কিশোর শ্রমিক যতন কর্মকার (১৭) সহ অজ্ঞাত এক আসামির বিরুদ্ধে কাহালু থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সে আলালের পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অপরদিকে শনিবার দুপুরে আলালের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের (শজিমেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মবিন উল ইসলাম ময়নাতদন্ত শেষে জানিয়েছেন, পেটে বাতাস ঢোকানোর কারণে শিশু আলালের বৃহদন্ত্রসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এছাড়া নাক, কান ও মুখম-লে এর প্রভাব পাওয়া গেছে। শরীরে হাওয়া মেশিনের বাতাস ঢোকানোর কারণেই তার মৃত্যু হয় বলে তিনি জানান। কাহালু উপজেলার ঢাকুন্তা গ্রামের দরিদ্র রিক্সাচালক মোজাহার ফকিরের ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে আলাল দ্বিতীয়। বড় ভাই দুলালও একটি কারখানার শ্রমিক। সবার ছোট বোন দুলালী। আলাল তার মা দোলেনা বেগমের সঙ্গে মুরইল এলাকার আফরিন জুট মিলে কাজ করত। কয়েক মাস আগে সে ওই কারখানায় স্লাইভার ফিডার (স্পিনিং) পদে যোগ দেয়। তার মা ও খালা ছাড়াও নানি আছমা একই কারখানার শ্রমিক। তার খালা রেশমা জানান, পরিবারের অভাবের কারণে আলালের বাবা-মা সুদে টাকা ঋণ নিয়েছিল। সেই কিস্তির টাকা শোধ করতে আলাল চলতি বছর্ইে স্কুল ছেড়ে কারখানায় কাজ শুরু করে। মজুরির টাকা মায়ের হাতে তুলে দিত। সে মায়ের সঙ্গে কারখানার ভেতরেই শ্রমিকদের থাকার ঘরে থাকত। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থাতেই লেখাপড়া ছাড়ে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে। এতে কারখানাতেই বন্দী হয়ে পড়ে তার শৈশবের উচ্ছ্বাস,স্কুল, খেলাধুলাসহ সবকিছু। সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না। শুক্রবারও চলে কাজ। সাধারণত শুক্রবারের প্রথম শিফট শেষে শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয় বলে শ্রমিক রেশমা জানিয়েছেন। আলালের মতো ২০/৩০ শিশু কারখানায় কাজ করে। তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য কারখানার মালিক মোঃ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে আলাল ও তার মা একই ব্লকে কাজ করছিল। আলালের খালা রেশমা জানান, ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি ও তার বোন সেখানে গিয়ে দেখেন শিশু আলালকে অসুস্থ অবস্থায় কারখানার গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালের উদ্দেশে। তার স্বজন ও পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় আলাল হাওয়া মেশিনের পাইপ দিয়ে ক্লিনিংয়ের কাজ করছিল। হাসপাতালে নেয়ার পর শুক্রবার বিকেলে আলাল মারা যায়। ঘটনার পর পরই পুলিশ আলালকে হত্যার অভিযোগে একই জুটমিলের কিশোর শ্রমিক যতন কর্মকারকে গ্রেফতার করে। কাহালু থানার ওসি জানিয়েছেন, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত যতন কর্মকার স্বীকার করেছে, সে হাওয়া মেশিনের পাইপ দিয়ে আলালের পায়ুপথে বাতাস ঢোকায়। তবে কি কারণে সে বাতাস ঢুকিয়েছে সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি বলে উল্লেখ করে ওসি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে হাওয়া মেশিনের পাইপ জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশু শ্রমিক আলালের পিতা মোজাহার ফকির বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। কাহালু থানা পুলিশ জানিয়েছে, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া যতন কর্মকারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে আলালের মরদেহ কাহালুর ঢাকুন্তা গ্রামে নেয়া হয়।
×