ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় দৌলতপুরে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

বন্যায় দৌলতপুরে ২০  কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ২৬ অক্টোবর ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। পানিবন্দী মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও কাদাপানির মধ্যে বসবাস করছেন তারা। আকস্মিক বন্যার কারণে তারা ফসল ও মূলধন দুটোই হারিয়েছেন। পানি নেমে গেলেও এত বড় ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবেন তা ভেবে কূলকিনারা করতে পারছেন না বানভাসি এসব মানুষ। ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে হতাশা যেন তাদের ঘিরে ধরছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখন বন্যাকবলিত নিঃস্ব কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। পদ্মায় আকস্মিক বন্যায় ফসলের পাশাপাশি বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের যে ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি পদ্মা নদীতে বন্যার পানিতে উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্রায় ১৫শ’ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। দৌলতপুরে ২৫শ’ পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৬৫ ভাগ মাষকলাই চাষ হয় চরাঞ্চলের চার ইউনিয়নে। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে জমির সব ফসল। এছাড়াও আউস ধান, কলা, পাট অন্যান্য ফসলেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানকার কৃষকরা। ফসল ও বাড়ি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। কৃষি অফিসের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাকমকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নে। এ দুই ইউনিয়নেই পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে প্রায় ১১শ’ হেক্টর জমির ফসল। অন্য দু’ইউনিয়নসহ সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ১৫শ’ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দৌলতপুরের বন্যা কবলিত অঞ্চলের অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলের মানুষ নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। কারও কারও মাথাগোজার ঠাঁইটুকু পানিতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সেখানে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, জরুরী ভিত্তিতে বাড়িঘর ঠিক করা দরকার। অর্থাভাবে বিপর্যস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করতে পারছেন না তারা। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারী ও বেসরকারীভাবে ত্রাণ দেয়া হলেও আর্থিক সহযোগিতা তেমন দেখা যায়নি। ফলে কোন রকমে খেয়ে বেঁচে থাকলেও অর্থের কারণে অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারীভাবে আর্থিক সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করেন ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ। সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী এই দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এক হাজারের বেশি পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। পানি ঢুকে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। স্থানীয় কৃষক মাহবুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় আমরা ব্যাপকভাবে মাষকলাই চাষ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বন্যার ফলে ফসল ও মূলধন দু’টোই শেষ। ফলে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি’। মহম্মদপুর গ্রামের কৃষক ফজলু বিশ্বাস বলেন, ‘কৃষির ওপর সংসার নির্ভরশীল। অন্য কোন আয় রোজগার নেই। জমিতে বছরে দু’টো ফসল হয়। সেগুলো দিয়েই সারাবছর কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করি। পানি নেমে গেলে নতুন ফসল করার জন্য মূলধনও নেই। তাই আগামীদিনগুলো কিভাবে চলবো তা ভেবে পাচ্ছিনা না। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারীভাবে আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করছি’। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বন্যায় এ উপজেলার প্রায় ৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে হচ্ছে। সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুর রহমান বলেন, বন্যায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, চলতি বছরের বন্যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ব্যাপকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যায় সে বিষয়ে সকল দফতরের সমন্বয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা করা হবে।
×