ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কন্টেনারে লুকিয়ে ব্রিটেনে ঢোকার অভিজ্ঞতা

‘আমরা ছিলাম চলন্ত কবরের মধ্যে’

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

 ‘আমরা ছিলাম চলন্ত কবরের মধ্যে’

একটি লরির পেছনে কন্টেনারের ভেতর ঠান্ডায় জমে গিয়ে ৩৯ চীনার করুণ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে ব্রিটেনে। যে কন্টেনারে লুকিয়ে এরা ব্রিটেনে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাতে সাধারণত হিমায়িত অবস্থায় খাদ্য পরিবহন করা হয়। অবৈধ অভিবাসীরা নানাভাবে ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে ব্রিটেনে আসার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ট্রাকের পেছনে বা পণ্যবাহী কন্টেনারের ভেতর লুকিয়ে আসার ঘটনাই বেশি। এই কাজ করতে গিয়ে আগেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে ট্রাক বা কন্টেনারের ভেতর। ঠান্ডায় জমে বা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে তাদের অনেকে। ইংল্যান্ডের এসেক্সে ৩৯ জনের দেহ একটি কন্টেনারের ভেতর খুঁজে পাওয়ার ঘটনা জাওয়াদ আমিরিকে মনে করিয়ে দিয়েছে তার নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। তিনিও একইভাবে ব্রিটেনে এসেছিলেন এবং সেই যাত্রায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। জাওয়াদ আমিরির ভাষায়, তারা যেন একটি ‘চলন্ত কবরের’ মধ্যে ছিলেন। ২৮ বছর বয়সী জাওয়াদ আমিরি এসেছেন আফগানিস্তান থেকে। ফ্রান্সের উপকূলে ক্যালে বন্দর থেকে একটি কন্টেনারের ভেতর লুকিয়ে তিনি ব্রিটেন ঢোকেন। তারা ছিলেন মোট পনেরো অভিবাসীর একটি দল। কন্টেনারটি ছিল সিলগালা করা। প্রতি রাতে মানুষ পাচারকারী দলের লোকজন একটি লরি নিয়ে আসত। সেটির পেছনে তারা বিশ হতে তিরিশ পর্যন্ত অভিবাসীকে তুলত। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা টাকা নিত। আপনি বাঁচলেন না মরলেন, সেটা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। আমি এবং আমার সাত বছরের ছোটভাই আহমদ একটি রেফ্রিজারেটেড লরির পেছনে উঠি। আমাদের সঙ্গে আরও ১৩ জন। আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ওরা লরির দরজা বন্ধ করে দিল। সবাই তখন ভীষণ ভয় আর আতঙ্কে। কারণ ভেতর থেকে দরজা খোলার কোন উপায় আর নেই। লরির ভেতরে ছিল অনেক ওষুধের বাক্স। দুই সারি ওষুধের বাক্সের মাঝখানে একটুখানি জায়গা, বড়জোর আধা মিটার। সেখানে আমাদের প্রায় ১৫/১৬ ঘণ্টা ধরে শুয়ে থাকতে হয়েছিল। আমাদের নড়াচড়ার কোন জায়গা ছিল না। বসার উপায় নেই, দাঁড়ানোর উপায় নেই। মনে হচ্ছিল আমরা যেন একটা চলন্ত কবরের মধ্যে শুয়ে আছি। ভেতরে ছিল পুরোপুরি অন্ধকার। শুরুতে বেশ ঠা-া ছিল। কারণ এটি একটি রেফ্রিজারেটেড কন্টেনার। কিন্তু এরপর এয়ারকন্ডিশনিং আর কাজ করছিল না, এটি বিকল হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভেতরে তাপমাত্রা বাড়াতে থাকল। আমরা আমাদের কম্বল সরিয়ে নিলাম, কাপড়চোপড় খুলে ফেললাম। আমাদের সঙ্গে কেবল অল্প পানি ছিল। তারপর পানিও ফুরিয়ে গেল। আমাদের টয়লেটে যাওয়ারও কোন উপায় নেই। ভেতরে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার ভাই কাঁদছিল। ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল আর কাশছিল। আমি ওকে বলে যাচ্ছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে, ওরা দরজা খুলে দেবে। আমরা ঘামছিলাম। চার সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ যুক্তরাজ্যের এসেক্সে একটি লরির কন্টেনার থেকে ৩৯টি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চার সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ব্রিটিশ পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজনকে শুক্রবার আটক করা হয়েছে। লরিটির চালক রবিনসনকে পুলিশ বুধবারই গ্রেফতার করেছিল। এসেক্স পুলিশ মৃতদেহগুলো চীনা নাগরিকদের বলে ধারণা করলেও এর মধ্যে ভিয়েতনামের নাগরিকরাও থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ভিয়েতনাম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ভিয়েতহোম লরিটি উদ্ধারের পর থেকে এ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা ‘নিখোঁজ’ বলছে এমন প্রায় ২০ জনের ছবি পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ‘নিখোঁজদের’ প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে, জানিয়েছে তারা। উদ্ধার মৃতদেহগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের ২৬ বছর বয়সী নারী থি ত্রা মি-ও থাকতে পারে বলে শঙ্কা তার পরিবারের সদস্যদের। -বিবিসি
×