ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দলের কেউ অপকর্ম করলে শাস্তি পেতেই হবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 দলের কেউ অপকর্ম করলে শাস্তি পেতেই হবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে কার স্বার্থে আঘাত লেগেছে জানি না, তবে এই শুদ্ধি অভিযান সারাদেশ, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সৎসাহস আছে। দলের কেউ অপকর্ম করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কী কঠোর, শুদ্ধি অভিযানে তা তিনি প্রমাণ করেছেন। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে বিতর্কিত লোক এনে দল ভারি করার দরকার নেই। খারাপ লোক দিয়ে দল ভারি করলে অন্ধকার এলে বাতি জ্বালিয়েও তাদের পাওয়া যাবে না। আর পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি জনগণ ছাড়াও আওয়ামী লীগ বাঁচতে পারবে না। তাই জনগণকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদককে (পংকজ) নিয়ে কোন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে তাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা নেত্রীর নির্দেশ। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সম্মেলনের কাজ করবে। যোগ্যতা অনুযায়ী প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় কাউন্সিল আসছে। সম্মেলন মানেই কিছু নতুন মুখ আসবে। কাউকে আমরা রিটায়ারমেন্ট (অবসর) দিই না, দায়িত্বে পরিবর্তন হয়। শক্তিশালী দল ছাড়া শক্তিশালী সরকার হয় না। দলকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত সম্মেলন দরকার। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, আপনারা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন। আমরা তারিখ পরে জানাব। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সম্ভাব্য তারিখ জেনে আমরা সম্মেলনের তারিখ জানাব। প্রার্থী বিষয়ে নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।’ সেতুমন্ত্রী বলেন, মনোনয়ন বোর্ড বসবে। নেত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন কারা মেয়র প্রার্থী হবেন। তবে একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আপনারা আলাপ-আলোচনা করুন, সিদ্ধান্ত নিন। তবে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নামবে। তারা ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক শক্তি আছে তাদের। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করবেন না। প্রতিপক্ষ আর কিছু না পারুক ষড়যন্ত্রে ওস্তাদ, বিএনপি ষড়যন্ত্রে ওস্তাদ। আপনারা থানায়-থানায়, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কর্মিসভা করুন। সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রচারের জবাব দিতে হবে। এই সরকার অপকর্মের বিষয়ে অতীতের সরকারের মতো নির্বিকার নয়। এখানে অন্যায় করে কেউ পার পায়নি, পাবেও না। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে সীমাহীন উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু দলীয় পরিচয়ে দু-একজন মাস্তানের জন্য আমাদের কাজ যেন ম্লান হয়ে না যায়। বসন্তের কোকিলদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় থাকার পার্টি নয়। জনগণের ইচ্ছার বাইরে ক্ষমতায় থাকার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে নিজেদের এ্যালায়েন্সের কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তবে সরকারকে দুর্বল ভাববেন না। সততার ভিত্তির ওপর, জনগণের ইচ্ছার ওপর নেত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হবে। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং গতিশীল করতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে। যার ভোগের লিপ্সা আছে তার দলে দরকার নেই। আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে বিতর্কিত লোক এনে দল ভারি করার দরকার নেই। আওয়ামী লীগ লুটপাট সন্ত্রাসীদের পার্টি নয়। মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় থাকতে চাই। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমি দখলকারী, অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের আওয়ামী লীগে দরকার নেই। জনগণ এখন কিছু বলবে না হয়তো, কিন্তু নির্বাচনের সময় জবাব দেবে। বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বড় বড় কথা বলেন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সন্ত্রাস, খুন, লুটপাট, মাদক এমন কোন অপকর্ম ছিল না যার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল না। হাওয়া ভবনের নির্দেশে সবকিছু হয়েছে। একজন অপরাধীকেও তখন আইনের আওতায় আনা হয়নি। শেখ হাসিনার সাহস আছে, তিনি অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেননি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সময়ে দলের লোকজন অপকর্ম করলে মামলা করতেই পারত না। আর নুসরাত হতাকান্ডে দলের লোকজনও আছে এবং তাদেরও ফাঁসি হয়েছে। পুলিশের কী হলো এ নিয়ে মির্জা ফখরুল আবল- তাবল বকছেন, কিন্তু এত দ্রুত একটা মামলার বিচার শেষ হয়েছে ১৬ জনের সবারই ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এর প্রশংসাটা বিএনপি করতে কুণ্ঠিত। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
×