ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুত উন্নয়ন করেছে এমন ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ;###; বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ষ ’২০ সালে ঢাকায় মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরবে এপিজি ;###; ফেব্রুয়ারির মধ্যে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ না হলে পাকিস্তান কালোতালিকাভুক্ত হবে

প্রশংসনীয় অগ্রগতি ॥ অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

প্রশংসনীয় অগ্রগতি ॥ অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ

রহিম শেখ ॥ অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন করেছে দক্ষিণ এশিয়ার এমন ১০ দেশের তালিকার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের নাম রয়েছে। এ কাজে আরও উন্নতির জন্য বাংলাদেশ বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ করা ও ওইসব সম্পদ বাজেয়াফত করার আইনী কাঠামো প্রয়োগ করবে সংস্থাগুলো। সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের ‘সার্বিক অগ্রগতি ভাল’ সম্প্রতি এমন মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। ২০২০ সালে ঢাকায় এপিজির পরবর্তী বৈঠকে ওই প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে। মূলত এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মকা- তদারকি করে এপিজি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী এসব নিয়ে কাজ করে ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ)। সম্প্রতি প্যারিসে পাঁচ দিনের অধিবেশন শেষে জঙ্গীদের পুঁজি যোগানোর অভিযোগে পাকিস্তানকে চার মাস সময় দিয়েছে এফএটিএফ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ না হলে পাকিস্তানকে কালোতালিকাভুক্ত করবে ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স। জানা গেছে, ২০১৬ সালে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি) একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, প্রযুক্তিগত ৫টি শর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি কম (পার্সিয়ালি কমপ্লাইন্স)। কিন্তু চলতি বছর প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ওইসব শর্ত পূরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চারটিতে উন্নতি করেছে। অর্থাৎ চারটি শর্তেই আগের অবস্থানের চেয়ে অগ্রগতি হয়েছে। আর একটি শর্ত শতভাগ পূরণ হয়েছে। এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রযুক্তিগত শর্তগুলো পূরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ মানদন্ডে ৪০টি শর্তের মধ্যে কমপ্লাইন্স ক্যাটাগরি (পরিপূর্ণ) অর্জন করেছে ৮টি। পাশাপাশি ২৬টি শর্তে লার্জলি কমপ্লাইন্স (মূলত অনুগত) ক্যাটাগরিতে পৌঁছেছে এবং ৬টি পার্সিয়ালি কমপ্লাইন্স (আংশিক অনুগত) অর্জন করেছে। জানা যায়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান জানতে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসে এপিজির প্রতিনিধি দল। ওই সময় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি, অভ্যন্তরীণ সমন্বয়, ফলো-আপ এ্যাসেসমেন্ট ও মিউচুয়াল ইভালুয়েশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্ট প্ল্যানসহ (এসআইপি) সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রতিনিধি দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। সার্বিক অগ্রগতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। ২০২০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এপিজির পরবর্তী বৈঠকে এটি তুলে ধরা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের যেসব তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে উঠে আসছে সেগুলো অনুমাননির্ভর। যেমন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের যেসব অর্থ আছে তাদের অনেকে বিভিন্ন দেশে বা সুইজারল্যান্ডে কাজ করেন। ফলে তাদের টাকা সেখানে থাকতেই পারে। আমদানি-রফতানির আড়ালে কিছু টাকা পাচার হচ্ছে। সেগুলো বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এপিজির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা জারি করা হয়। এ বিধিমালার আলোকে আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আদান-প্রদান করার বিধান রাখা হয়, যা আগে ছিল না। এপিজির পর্যালোচনা টিম সেটি দেখেছে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট মোবাইল ব্যাংকিং ও ডাকঘরের লেনদেনসহ সব ধরনের লেনদেনে গ্রাহকের সঠিক তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। পাশাপাশি গ্রুপভিত্তিক মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৃথক কোন বিধান ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি জারিকৃত মানি লন্ডারিং বিধিমালায় এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এপিজির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান, নজরদারিতে মোবাইল ব্যাংকিং ও ডাকঘরের লেনদেনকে অন্তর্ভুক্ত করা, টাকা পাচারের তথ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আদান-প্রদানসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে মূল্যায়নে বলা হয় ‘সার্বিক অগ্রগতি ভাল’। বাংলাদেশ নিয়ে এপিজির তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়, মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিভিন্ন উৎস থেকে হতে পারে। এর মধ্যে ব্যাংক, বীমা, লিজিং, শেয়ারবাজার, স্বর্ণ ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক খাত রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোকে চিহ্নিত করে তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ খাতের ঝুঁকি নিরূপণের কাজ চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এপিজি বাংলাদেশকে ৪০টি শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। গত তিন বছরে বাংলাদেশ সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন আইন সংশোধন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এসবের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এ অর্জন হয়েছে। প্রসঙ্গত, একটি দেশ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করতে না পারলে এপিজি প্রথমে ওই দেশকে ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কালোতালিকায় নেয়া হয়। এই ধরনের পদক্ষেপ কোন দেশের ওপর নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যরা। তবে বাংলাদেশ এখন সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে। জানা গেছে, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপের ওপর প্রতি তিন বছর অন্তর একটি দেশের ওপর মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে এপিজি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সিআইডি কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা এ সংক্রান্ত কোন তথ্য পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়। বর্তমানে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআর ও সিআইডির মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে। বিষয়টিকে এপিজি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। আগে এসব সংস্থার মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হতো না। এ বিষয়ে এপিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজ দেশের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবেও তথ্যের আদান-প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ভাল অবস্থানে রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। এতে বলা হয়, এপিজির সদস্য হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) ৪০ সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং মেনে চলা দরকার। এর মধ্যে অন্যতম হলো- আন্তঃদেশীয় তথ্যের আদান-প্রদান। কারণ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিষয়টি বর্তমানে এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বহু দেশে এর সংযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করতে গেলে অন্য কোন দেশের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এদিকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ করা ও ওইসব সম্পদ বাজেয়াফত করার আইনী কাঠামো প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য মানি লন্ডারিং আইন প্রয়োগের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ওইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং নীতি ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির এক বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এপিজি সরকারকে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন করা ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সূচকে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন করেছে এমন ১০টি দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২, গত বছর যা ৫৪ নম্বরে ছিল। এর মাধ্যমে উচ্চ ঝুঁকির তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্ন্যান্স মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ এ সূচক ২০১৭ সালে প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটি ৬ বছর পর পর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সূচক জরিপ প্রকাশ করে। পরবর্তী সূচক প্রকাশ করা হবে ২০২৩ সালে। মূলত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ঘাটতি, স্বচ্ছতার ঘাটতি, উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক, আর্থিক মানদ- ও স্বচ্ছতা এবং দুর্বল রাজনৈতিক অধিকার ও আইনের শাসন- এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সূচক প্রকাশ করা হয়। সূচক অনুযায়ী, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দ্রুত উন্নয়নকারী ১০টি দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে সুদান। পর্যায়ক্রমে রয়েছে তাইওয়ান, ইসরাইল, বাংলাদেশ, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, লুক্সেমবার্গ, লাটভিয়া ও গ্রিস। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, আন্তঃসংস্থার কাজে সমন্বয়, আর্থিক খাতে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের পর্যাপ্ত লোকবল ও অর্থের সংস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে ৪ মাস সময় পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নির্মূলে চার মাস সময় দিয়েছে অর্থ পাচার নজরদারি বৈশ্বিক সংস্থা এফএটিএফ। আগামী চার মাসের মধ্যে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে হবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তা সম্ভব না হলে এই দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। গত ১৮ অক্টোবর প্যারিসে পাঁচ দিনের অধিবেশন শেষে এমনটাই ঘোষণা করল বিশ্ব সন্ত্রাসে অর্থ যোগানের ওপর নজরদারি চালানো আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স বা এফএটিএফ। জঙ্গী মদদের কারণে পাকিস্তানের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান এফএটিএফের ধূসর তালিকায় রয়েছে। এই তালিকায় থাকা মানে, এফটিএফ মনে করছে আর্থিক অপরাধ বা জঙ্গীদের অর্থ সাহায্য বন্ধ করতে না পারার কারণে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। সে ব্যাপারেই এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে এফএটিএফ। এফএটিএফ ২৭টি শর্ত দিয়েছিল পাকিস্তানকে। তার মধ্যে মাত্র পাঁচটিকে পূরণ করতে পেরেছে দেশটি। এই দুর্বলতার কারণেই সে দেশকে এতদিন ধূসরাঞ্চলেই রাখা হয়েছিল। ওইদিনের বৈঠক থেকে দেশটিকে প্রয়োজনীয় অন্য শর্তগুলোকে পূরণ করতে বলা হয়। আগামী অধিবেশনের আগেই জঙ্গী মদদ রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে পাকিস্তানকে। তা না হলে এফটিএফ তার সদস্য দেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়ে সাবধান করবে। এফএটিএফের পাঁচদিনের বৈঠকে ২০৫ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। ফলে এই বৈঠকেই পাকিস্তানের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কালো তালিকা আটকাতে তিনটি দেশের সমর্থন লাগে। বৈঠকে পাকিস্তানকে সমর্থন করে তুরস্ক, চীন ও মালয়েশিয়া। অতীতে ইরান, উত্তর কোরিয়াকে কাল তালিকায় ফেলেছে এই সংস্থা। পাকিস্তান ২০১৮ সাল থেকে গ্রে বা ধূসর তালিকায় আছে।
×