মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর পাঁচটি স্প্যান এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। স্থাপনে বাধা শুধু নাব্য সঙ্কট। উচ্চ ক্ষমতার ড্রেজারে রাত দিন ড্রেজিং চলছে। কিন্তু বৈচিত্র্যময় পদ্মায় পলিতে ভরে যাচ্ছে সেতুর নদীর চ্যানেল। বর্ষা এবং শরত শেষে হেমন্তেও পদ্মায় তীব্র ¯্রােত ও পলিতে চর সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আরও একমাস এমনটা এখানে চলবে। এর পরিবেশের মাথায় রেখেই কাজ চলছে এখানে। এদিকে ১৬তম স্প্যান বসানোর জন্য দুই দিক থেকে ড্রেজিং চলছে। যে দিকের ড্রেজিংয়ে নাব্য ফেরাতে পারে, সেদিকেই ১৬তম স্প্যান বসবে। পদ্মা সেতুর একজন দায়িত্বশীল প্রকৌশলী শুক্রবার রাতে জানান, পলি জমে এমন অবস্থা। ক্রেনবাহী জাহাজতো দূরের কথা অনেক স্থানে স্পীডবোটও ঠেকে যাচ্ছে। পলি জমে চর সৃষ্টির এই অবস্থা গত বছর এমন সময়ও ছিল। পদ্মা এখানে নানা বৈচিত্র্যতায় ভরা। তাই দু’স্থানেই ড্রেজিং চলছে। যেখানে ক্রেন আগে যেতে পারবে সেখানেই আগে বসবে। ১৬তম স্প্যান হিসাবে ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটিতে ‘৩ডি’ নম্বর বসবে না, ‘৪ডি’ নম্বর স্প্যানটি ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটিতে বসবে সেটিই দেখার বিষয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেতু কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এই দু’টি স্প্যানের যেটিই হউক আগামী ১০ দিনের মধ্যে আশা করা যাচ্ছে একটি স্প্যান বসবে।
এই প্রকৌশলী জানান, ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির জন্য তৈরি করা ‘৪ডি’ স্প্যানটি ২৮-২৯ নম্বর খুঁটির কাছে প্লাটফরম তৈরি করে নদী তীরে রাখা আছে। কিন্তু নদীর চ্যানেলের নাব্যের কারণে সেটি সেখান থেকে তুলে আনতে পারছে না। এমনভাবে নদীতে পলি জমা হচ্ছে, অবিশ^াস্য রকমের পলি। তিনি জানান, ‘৩ডি’ স্প্যানটি রয়েছে ওয়ার্কশপের ইয়ার্ডে। কিন্তু ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটিতে ক্রেনবাহী জাহাজ যাওয়ার মতো নদীর গভীরতা এখন নেই। পলি জমে নাব্য সঙ্কট সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, মাসখানেক এই নাব্য সঙ্কটের পর দ্রুত সময়ে মধ্যে স্প্যানগুলো বসানো সম্ভব হবে।
এ পর্যন্ত পাঁচটি স্প্যান একেবারেই প্রস্তুত। এর মধ্যে ওয়ার্কশপের ইয়ার্ডে ‘৬এ’, ‘৬বি’, ‘৫ সি’ ও ‘৩ডি’ নম্বর স্প্যান বেশ কিছুদিন ধরে পড়ে আছে। আর ‘৪ডি’ স্টোর অবস্থায় আছে ২৮-২৯ নম্বর খুঁটির কাছে প্লাটফরমে নদী তীরে। এই প্রকৌশলী জানান, এই পাঁচটি স্প্যান রেডি অবস্থায় ছাড়া আরও তিনটি স্প্যান আছে পেন্টিং শপে। সেগুলোও প্রস্তুত প্রায়। ৪১ স্প্যানের মধ্যে এ পর্যন্ত মাওয়ায় এসেছে ৩১টি স্প্যান। এরমধ্যে ১৫টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। আর ৫টি রেডি এবং ৩টি রং করা ছাড়া বাকি ৮টি স্প্যান ফিটিংয়ের কাজ চলছে। এদিকে চীন থেকে আরও ২টি স্প্যান সমুদ্র পথে রওনা হয়েছে। শীঘ্র এই দু’টি স্প্যানও মাওয়ায় এসে পৌঁছবে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সেতুর ১৫ নম্বর স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেতুটি ২২৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ‘৪ই’ নম্বর এই স্প্যান জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে স্থাপন করা হয়েছে।
সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে জানান, সেতুর ৪২ খুঁটির ৩১টি খুঁটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। আর একটি খুঁটি সম্পন্ন হওয়ার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে । কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে এটি সম্পন্ন হতেও বিলম্ব হচ্ছে। এই ৩১ খুঁটির পিয়ার হেড বাকি। পিয়ার হেডের খাঁচটি আছে ২৮-২৯ এর কাছে। চ্যানেলে পানি না থাকায় এটি আনা যাচ্ছে না।
বসে যাওয়া স্প্যানে স্লাব স্থাপনের কাজও চলছে সমানতালে সেতুর নিচের অংশে রেলওয়ে স্লাব বসে গেছে ৩৬১টি। আর ওপরের ধাপে রোডওয়ে স্লাব বসেছে ৬১টি।
রেলওয়ের ২৯৫৯টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাব প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে ২৮৯১ টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব আগামী নবেম্বরে তৈরি শেষ হবে। অন্যদিকে ২৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেক স্ল্যাব এর মধ্যে ১৫৫৩ টির কাজ শেষ হয়েছে।