ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনিটপ্রতি মূল্য ৫ টাকা ৭৫ পয়সা

নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির দর নির্ধারণ

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির দর নির্ধারণ

রশিদ মামুন ॥ নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানির দর নির্ধারণ হয়েছে। প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুত ছয় দশমিক ৮৫ সেন্টে কিনবে বাংলাদেশ। যা দেশীয় মুদ্রায় এখন পাঁচ টাকা ৭৫ পয়সার সমান (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসেবে)। ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর পাওয়ারের কাছ থেকে এই বিদ্যুত কিনবে পিডিবি। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে জিএমআর পাওয়ারের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় কয়েক দফা আলোচনায় এই দর ঠিক হয়েছে। নেপাল থেকে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে পিডিবি। নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট হিসেবে এই বিদ্যুত কেনা হবে। এক্ষেত্রে কোন ক্যাপাসিটি চার্জ থাকবে না। ফলে জলবিদ্যুত আমদানিকে লাভজনক বিবেচনা করছে পিডিবি। পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুত আমদানির মধ্যদিয়ে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক সৃষ্টি হতে চলেছে। তিনি বলেন, এর আগে আমরা শুধুমাত্র ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করতাম। এখন ভারতের সঙ্গে নেপালও যুক্ত হচ্ছে। এতে ভূরাজনৈতিক সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটবে। তিনি বলেন, আমরা আমদানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভারতের ওপর নির্ভর করতাম। এখন নেপাল যুক্ত হলে বিদ্যুত আমদানির পরিধি বাড়বে। এছাড়া আমরা আমাদের সান্ধ্যকালীন বিদ্যুত আমদানি বাড়িয়ে পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন কমিয়ে লোকসানও কমাতে পারি। কিভাবে এই বিদ্যুত আমদানি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিএমআর আমাদের সঙ্গে বিদ্যুত বিক্রি চুক্তি (পিপিএ) করার পর তারা কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করবে। কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ হতে ছয় বছর সময় প্রয়োজন হবে। এর পরই এই বিদ্যুত দেশে আসবে। তিনি বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে হলে ভারতীয় ভূখন্ড ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে ভারত তাদের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুত আমদানি করার সুযোগ দিলে তাদের সঞ্চালন চার্জ পরিশোধ করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি ইন্টারকানেকশন (আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত সংযোগ) নিয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। দীর্ঘ ছয় বছর সময়ের মধ্যে এর অনেকগুলোই চলে আসবে। তখন ভারত থেকে আরও বিদ্যুত আমদানি হবে। আবার আমরাও ভারতে বিদ্যুত বিক্রি করার প্রস্তাব দিচ্ছি। ফলে বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে সঞ্চালন লাইন কোন সমস্যা হবে না। জিএমআর পাওয়ার কর্পোরেশন আপার কার্নালি জলবিদ্যুত প্রকল্পে ৯০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এখান থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়া হবে বাংলাদেশকে। জিএমআর বাকি বিদ্যুত ভারতের তামিলনাড়ু সরকার কিনে নেবে। চলতি বছর শুরুর দিক থেকে জিএমআর তাদের জলবিদ্যুতের দাম নিয়ে কয়েক দফা পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করেছে। শুরুতে পিডিবির কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত ১০ দশমিক ৫৮ সেন্টে বিক্রির প্রস্তাব দেয় জিএমআর। কিন্ত কয়েকমাস ধরে দর কষাকষি চলে পিডিবি এবং জিএমআররের মধ্যে। তখন বিদ্যুত বিভাগ এত দামে জলবিদ্যুত কেনা যাবে না বলে মতামত দেয়। জিএমআরকেও দাম কমানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। পিডিবি সূত্র বলছে, কয়েক দফা বৈঠকের পর এই দাম নির্ধারণ হয়েছে। এখন বিদ্যুত বিভাগ সরকারের অনুমোদন চাইবে। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিদ্যুত কেনার বিষয়ে অনুমোদন দিলে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রসঙ্গত, গত বছর ১০ আগস্ট নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে একটি এমওইউ সই হয়। এরপর নেপাল এবং বাংলাদেশ বিদ্যুত সচিবের নেতৃত্বে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করে। এর বাইরে যৌথভাবে কাজ করার জন্য উভয় দেশর বিদ্যুত বিভাগের দুজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে কাঠমান্ডু এবং কক্সবাজারে দুই দফা বৈঠক করেছে বাংলাদেশ এবং নেপালের বিদ্যুত সচিব। আগামী নবেম্বরে এ ধরনের আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। জলবিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তিও সহজ। বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরেই নেপালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। প্রতিবেশী দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে এখানে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে। এজন্য নেপাল বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ২০টি স্থানের তথ্য দিতে শুরু করেছে। এর কিছু জায়গায় সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করেছে। এর মধ্যে কোথায় কোথায় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সে বিষয়ে আগামী নবেম্বরের বৈঠকে নেপাল আনুষ্ঠানিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারে বলে জানা গেছে।
×