ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের  সঙ্গে যুক্ত হওয়ার  আহ্বান

মোরসালিন মিজান॥ অনুবাদ উৎসব। ট্রান্সলেশন ফেস্ট। আয়োজনটিকে, হ্যাঁ, একটু নতুন বলতে হবে। গত বছর ঢাকায় প্রথমবারের মতো এ উৎসবের সূচনা করা হয়েছিল। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয়টি। দু’ দিনব্যাপী আয়োজন এখন চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে। বড়সড়ো বা খুব দৃশ্যমান কিছু নয়। তেমন প্রচারও চোখে পড়ছে না। লোকসমাগম যৎসামান্য। আয়োজক কারা সেটিও অতো পরিষ্কার নয়। উদ্যাপন পরিষদ নামে আয়োজন করা হয়েছে। তবে আগেই বলা হয়েছে, আয়োজনটি নতুন। অপেক্ষাকৃত নতুন এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুবাদের মতো জরুরী বিষয়টিকে সামনে আনা হয়েছে। অনুবাদ নিয়ে আলাদা করে ভাববার সুযোগ হয়েছে। সকালে একাডেমির সঙ্গীত নৃত্য ও আবৃত্তিকলা মিলনায়তনে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। আলোচনা করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ড. ফকরুল আলম, কবি ও অনুবাদক গৌরাঙ্গ মোহন্ত প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক আহসান ইমান ও বীনা বিশ্বাস। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গওহর রিজভী বলেন, আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সঙ্গীত নৃত্যসহ সব ধরনের শিল্প মাধ্যম নিয়ে গর্ব করতে পারি আমরা। কিন্তু এ সমৃদ্ধির কথা বিশ্বের খুব কম লোকই জানে। বাংলা থেকে ইংরেজী অনুবাদ না হলে আমাদের শিল্প সাহিত্য নিয়ে সবার কাছে পৌঁছা যাবে না। অনুবাদকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে দেশকে আমরা যেখানে নিয়ে যেতে চাই, সেখানে নিয়ে যেতে পারব না। অনুবাদকদের কাজের প্রশংসা করেন তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দ্বার আমাদের সবার সামনে খুলে দিচ্ছেন অনুবাদকরা। অনুবাদ থ্যাঙ্কলেস জব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুবাদ সাহিত্যের জন্য আলাদাভাবে উচ্চারিত হয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের নাম। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই অনুবাদ অত্যন্ত জরুরী। অনুবাদ নিয়ে এমন একটি উৎসবেরও প্রয়োজন আছে। একে ক্রস ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, নোবেল পুরস্কারের জন্যও বাংলা সাহিত্যের ভাল ইংরেজী অনুবাদ হওয়া চাই। ইংরেজীর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায়ও অনুবাদ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তবে একইসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অনুবাদ শুধু গ্রামার অনুসরণ করা নয়। অনেক অনুবাদ বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। এ ধরনের অনুবাদ কোন কাজেও আসে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমানে ইংরেজী অনুবাদের আরেক বিখ্যাত নাম ড. ফকরুল আলম। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি অনুবাদ করতে ভালবাসি। ভালবেসে কিছু কাজ করি। আবার অনুরোধেও করতে হয়। করি। ভাল অনুবাদের ভীষণ প্রয়োজন বলে মত দেন তিনিও। পরে সঙ্গীত নৃত্য মিলনায়তন ও চিত্রশালার সেমিনার কক্ষে শুরু হয় প্যানেল আলোচনা। আলোচনায় দেশের স্বনামধন্য লেখক কবি অনুবাদক ও প্রকাশকরা অংশগ্রহণ করেন। যোগ দিয়েছেন কয়েকজন বিদেশী অতিথিও। প্রথম দিনের প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিলÑ ‘বাংলাদেশ ইন ট্রান্সলেশন: এক্সপ্লোরিং দ্য গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ অব ১৯৭১’, ‘ট্রান্সলেশন ইন রিসেন্ট টাইমস’, ইজ পোয়েট্রি লস্ট ইন ট্রান্সলেশন?’, ‘ট্রান্সলেশন-বেঙ্গলি লিটারেচার এ্যান্ড ইটস ফিউচার’, ‘পাবলিশার্স কন্ট্রিবিউশনস টু ট্রান্সলেটিং লিটারেচার’ এবং ‘ট্রান্সলেশন এ্যাজ এ প্রফেশন।’ সন্ধ্যায় ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এর বাইরে খোলা মাঠে চলছে বইয়ের প্রদর্শনী। কয়েকটি নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে ইউপিএল, আগামী, প্রথমা, ডেইলি স্টার, পাঠক সমাবেশ ও জার্নিম্যান প্রকাশনীর বই। স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায় বাইরের বইয়ের বাংলা অনুবাদই বেশি। দেশীয় সাহিত্যের ইংরেজী অনুবাদ হাতেগোনা। বাংলাদেশী লেখকের ইংরেজী রচনাও তেমন চোখে পড়েনি। এ অবস্থায় উৎসবে আসা অনেকেই বললেন, বাংলা সাহিত্যের ইংরেজী অনুবাদ খুব জরুরী। ইংরেজী অনুবাদ না হওয়ায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারছে না বাংলা সাহিত্য। একদিকে ইংরেজীতে লেখায় অনীহা। অন্যদিকে বাংলায় রচিত গ্রন্থের ইংরেজী অনুবাদে অনাগ্রহ। এ দুই কারণে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে প্রবেশই করতে পারছে না বাংলাদেশ। এভাবে আর কতদিন? ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইংরেজীতে লেখা এবং বাংলায় লেখা বইয়ের অনুবাদে মন দেয়ার আহ্বান জানান তারা। আয়োজকদের চাওয়াও অভিন্ন। উৎসবের স্লোগানে তারা বলছেনÑ ইউনাইট থ্রো ট্রান্সলেশন। অনুবাদের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়াসে আজও চলবে ট্রান্সলেশন ফেস্ট।
×