ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আহসানগঞ্জ স্টেশনে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ কি স্বপ্নই থেকে গেল?

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 আহসানগঞ্জ স্টেশনে ঢাকাগামী  আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ  কি স্বপ্নই থেকে গেল?

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ আত্রাই একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। এই উপজেলায় রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর আশ্রম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পতিসর কাচারিবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। রয়েছে একটি অবহেলিত রেলওয়ে স্টেশন। যে স্টেশনে ট্রেনে এসেছেন মহাত্মা গান্ধী ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে লাগেনি কোন প্রকারের উন্নয়ন বা আধুনিকতার ছোঁয়া। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ শুধু কি স্বপ্নই থেকে গেল? এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফিরছে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়ায় আত্রাইবাসী এখন অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছে। আত্রাইবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, এখানে ঢাকাগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ দেয়া হোক। এ দাবি আদায়ের জন্য ২০১৬-১৭ সালে এবং চলতি বছরের জুন মাসের শেষদিকে ও জুলাই মাসের শুরুরদিকে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। আন্দোলনকারীরা প্রতিদিন আত্রাই রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন, রেলপথ অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। এসব কর্মসূচী চলাকালীন পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন আত্রাইয়ে পৌঁছলে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। এভাবে ১০ থেকে ১২ দিন ট্রেন থামানোর পর গত ৫ জুলাই এ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা দেখা করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। সাক্ষাতকালে তিনি আসন্ন কোরবানি ঈদের আগেই ট্রেনের স্টপেজ কার্যকর করার আশ^াস প্রদান করেন। আত্রাইয়ের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম বলেন, গত ৫ জুলাই নাটোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ঈদের আগেই আত্রাইয়ে ট্রেনের স্টপেজ কার্যকর করবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। সে অনুযায়ী আমরা আন্দোলন স্থগিত করে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের জিএম কার্যালয়, ঢাকা রেল ভবন ও মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) এর চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পশ্চিম) এএমএম শাহনেওয়াজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর দেয়া হয়। ওই পত্রে তিনি জনদাবির প্রেক্ষিতে আহসানগঞ্জ স্টেশনে সাময়িকভাবে শুধুমাত্র ঢাকাগামী ৭৫৮/৭৫৭ দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতি দেয়া যেতে পারে বলে মতামত দেন। কিন্তু এ চিঠি শুধু চিঠিই থেকে গেছে। অদ্যাবধি এটি বাস্তবায়ন হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ এবাদুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে আত্রাইয়ের একমাত্র রেলপথ ছাড়া সরাসরি যোগাযোগের কোন পথ নেই। এখানে ঢাকাগামী মাত্র একটি ট্রেনের স্টপেজ দেয়া হয়। ওই ট্রেনে যাত্রীদের এত চাপ যে কর্তৃপক্ষ টিকেটই দিতে পারেন না। তাই এখানে ঢাকাগামী অন্যান্য ট্রেনের স্টপেজ কার্যকর হলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। উল্লেখ্য, প্রতিদিন আত্রাইয়ের ওপর দিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার মধ্যে ৫জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে থাকে। এসব ট্রেনের মধ্যে কেবলমাত্র নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ রয়েছে আত্রাইয়ে। এ ট্রেনে চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা বরাদ্দ খুব কম। অথচ এ স্টেশন থেকে রেলের প্রতিমাসে আয় হয় ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকা। ঢাকাগামী অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ কার্যকর হলে রেলের আয় আরও অনেক বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিমত। সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, এই স্টেশনে ঢাকার একাধিক ট্রেনের স্টপেজ দেয়া খুবই জরুরী। কারণ এই উপজেলা থেকে সান্তাহার জংশন রেলওয়ে ও নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার দূরত্ব অনেক বেশি। অনেক সময়ের ব্যাপার ও রাস্তা খুবই খারাপ। তাই এই স্টেশনে ঢাকাগামী বিভিন্ন ট্রেনের স্টপেজ দেয়া বর্তমানে সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে আমিও রেলের বিভিন্ন উর্ধতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা রাখি, তারা বিষয়টি দ্রুত আমলে নেবেন এবং এই স্টেশনে ঢাকাগামী কয়েকটি ট্রেনের স্টপেজ দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের দাবি পূরণ করবেন।
×