ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ধার করা হলে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব

উত্তরাঞ্চলে খাস জমির অর্ধেক প্রভাবশালীদের দখলে

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 উত্তরাঞ্চলে খাস জমির অর্ধেক প্রভাবশালীদের দখলে

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গে যে সরকারী খাস জমি আছে তা উদ্ধার করে অন্তত ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ভূমিহীনের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের বড় একটি অংশ নদী ভাঙ্গনের থাবায় পড়ে ভাসমান। সরকারী হিসাবে উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগের ১৬ জেলায় সরকারী খাস ভূমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২০ লাখ একর। যার অর্ধেকের বেশি প্রভাবশালীরা বহু বছর ধরে অবৈধ দখলে রেখেছে। রাজশাহী বিভাগের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার (সচিব পদোন্নতি পেয়ে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান) নূর উর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভূমিহীন ও বাসস্থানবিহীনসহ চার ক্যাটাগরির সকল মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া হচ্ছে। ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দুই ক্যাটাগরির ভূমিহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে এই কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে খাসভূমিতে আশ্রয়ণ বা আবাসন গড়ে তোলা হবে। খাস ভূমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদও শুরু হয়েছে। এদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের টেস্ট রিরিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচীর বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করে সেই অর্থে গৃহহীন মানুষের জন্য দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় খাস ভূমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মধ্যে ঘর নির্মাণ করে বিতরণ শুরু করেছে। সূত্র জানায়, আগামী ৫ বছরে বরাদ্দের যে ৩ হাজার কোটি টাকা মিলবে তা দিয়ে হতদরিদ্র পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ১১ হাজার ৬শ’ ৪টি ঘর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলাসহ কয়েকটি এলাকায় নবনির্মিত ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসন সারিয়াকান্দি, ধুনট ও দুপচাঁচিয়ায় কিছু দখলীকৃত সরকারী খাস ভূমি মুক্ত করে সেখানে গুচ্ছগ্রাম বানিয়ে ১ হাজার ৫শ’ ভূমিহীনের আবাসন করে দিয়েছেন। বগুড়ার করতোয়া নদী ভূমি দখলকারীদের নোটিস দেয়ার পর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে কিছু উচ্ছেদ হওয়ার পর ‘কোন কারণে’ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তবে জেলা প্রশাসন জানায়, চলমান প্রক্রিয়ায় নদীভূমি উদ্ধার হবে। তা আর হয়নি। কয়েকটি এলাকার স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধ দখলে থাকা খাস ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনও মামলার কারণে উদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যায়। ফলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না। খোঁজখবর করে জানা যায়, ভূমি ও জরিপ রেকর্ড অধিদফতরের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের ‘গভীর সম্পর্ক’ আছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘গোপনে নয়ছয়’ করার অভিযোগও পাওয়া যায়। খাস ভূমির অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আছে বড় ব্যবসায়ী, মহাজন, জোতদার, হাউজিং ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, বড় ঠিকাদার ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উঠতি ধনী। এই প্রভাবশালীরা জাল দলিল করে, ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে খাস ভূমি নিজেদের নামে নামজারি করে ভোগ দখল করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া খাস ভূমি থেকে ভূমিহীনদের বিতাড়িত করেও দখল নেয়া হয়েছে। বগুড়ার ধুনটে এ ধরনের ঘটনায় খাস ভূমি থেকে জেলেদের উচ্ছেদ করে সেই ভূমি দখল করে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র।
×