ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটেনে আগাম নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের সায় নেই ॥ ব্রেক্সিটের সময় বৃদ্ধির আলোচনায় সম্মত ইইউ

নির্বাচন ঠেকাবে লেবার

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

নির্বাচন ঠেকাবে লেবার

ব্রেক্সিট নিয়ে টানাপোড়েন অবসানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রস্তাবিত সাধারণ নির্বাচন আটকে দেয়ার কথা বলেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এই আগাম নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী জনসনের সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে প্রস্তাব তোলার কথা। ওই প্রস্তাবে সমর্থন না দিতে লেবার এমপিদের বলেছেন দলটির প্রধান নেতা জেরেমি করবিন। আগামী বড়দিনের আগেই জনসন নির্বাচন বিষয়ে ফয়সালা করতে চেয়েছিলেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। অবশ্য লেবার পার্টি এর আগে ব্রেক্সিট প্রশ্নে এই ধরনের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার কথা বলেছিল। সে সময় লেবার শিবির শর্ত দিয়েছিল যে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর না করলে তারা আগাম নির্বাচন আয়োজনে বরিস জনসনের পাশে থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলটি জনসনের প্রস্তাবে সায় দিল না। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের কথা। লেবার পার্টির এক এমপি বলেন, তাদের এই ধরনের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অথবা সোমবার পার্লামেন্টে নির্বাচন প্রশ্নে প্রস্তাব তোলা হলে বিপক্ষে ভোট দিতে বলা হয়েছে। শুক্রবার এক সাক্ষাতকারে জেরেমি করবিন বলেন, জনসন প্রস্তাবিত ‘চুক্তিহীন’ ব্রেক্সিট কার্যকর এক ধরনের হুমকি। জনসন অব্যাহতভাবে এই হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছেন। প্রস্তাবিত সময় অনুযায়ী চলতি মাসের ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকরের তারিখ রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশ আগামী তিন মাস ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে। তবে এর আগেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব পাস করতে হবে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স ব্রেক্সিটের সময় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। এর মধ্যে বরিস জনসন বলেছেন, বড়দিনের আগে নির্বাচনে সকল দল সমর্থন দিলে তিনি ব্রেক্সিট পেছানো নিয়ে আলোচনার জন্য এমপিদের আরও সময় দেবেন। জনসন প্রস্তাবিত আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের নেতা জ্যাকব রেস মগ শুক্রবার এমপিদের বলেছেন, সরকার সোমবারই আগাম সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করবে। এই নির্বাচন আয়োজনে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০১১ সালে পাস হওয়া ফিক্সট-টার্ম পার্লামেন্ট এ্যাক্টের অধীনে নির্বাচন হওয়ার আগে দুই-তৃতীয়াংশ এমপিকে অবশ্যই নির্বাচনের পক্ষে ভোট দিতে হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টি প্রধান জেরেমি করবিনের কাছে লেখা চিঠিতে শুক্রবার জনসন বলেছেন, তিনি খুব স্বল্প সময়ের জন্য -১৫ বা ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত ব্রেক্সিট পেছাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি চাইবেন লেবারের সমর্থন নিয়ে আবার পার্লামেন্টে তার ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করানোর উদ্যোগ নিতে। ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গত মঙ্গলবার আরেক দফা ধাক্কা খেয়েছেন জনসন। ওইদিন ব্রেক্সিট চুক্তির সর্বশেষ খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার জনসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার ১১৫ পৃষ্ঠার চুক্তির খসড়া হাউস অব কমন্সে উত্থাপন করা হলে পক্ষে ভোট দেন ৩২৯ এমপি, আর বিপক্ষে পড়ে ২৯৯ ভোট। এই প্রথম ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টের স্পষ্ট অবস্থানের কারণে খুশিও হন প্রধানমন্ত্রী। তবে এর কিছু সময় পরেই ভোটের চিত্র পাল্টে যায়। ব্রেক্সিট চুক্তিটির আলোচনা তিন দিনের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব তোলেন বরিস জনসন। যা প্রত্যাখ্যান করেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। বিরোধীদের দাবি, পুরো বিষয়টি যথেষ্ট জটিল। তাড়াহুড়ো করে এ বিল পাস করানো সম্ভব নয়। আগাম নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটেনের আইনমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড বলেছেন, সাধারণ নির্বাচনই এ অচলাবস্থা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায়। উল্লেখ্য,ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের জুলাইতে পদত্যাগ করেন সাবেক টেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন। ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটেরও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন জনসন। তবে দীর্ঘ আলোচনা আর নানা নাটকীয়তার পর গত ১৭ অক্টোবর চুক্তির ব্যাপারে ইইউর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় জনসন সরকার।
×