ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে প্রাণচাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 বরিশালে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে প্রাণচাঞ্চল্য

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলের সকল পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত মতে উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে দলের দুর্দিনের ত্যাগী, নির্যাতিত ও ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন পর প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তবে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল অর্থের মালিক বনে যাওয়া দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে কাউন্সিলের আগেই দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করেছেন। একইসঙ্গে দলের পদ-পদবীতে থাকা কতিপয় দুর্নীতিবাজ নেতার ছত্রছায়ায় সম্প্রতি গঠিত উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুপ্রবেশকারীদেরও চিহ্নিত করে বহিষ্কারের দাবি করেছেন। পাশাপাশি ত্যাগী, নির্যাতিত, তরুণ, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বিবেচনায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। দলের তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য নির্যাতিত নেতাকর্মীরা জানান, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্যাডারদের হাতে তারা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নৌকা মার্কার সমর্থক হওয়ায় সে সময় বিরোধী জোটের নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের তেমন কোন দুঃখ ছিলনা। কিন্তু পর পর তিনবার দল ক্ষমতায় থাকলেও উড়ে এসে জুড়ে বসা কতিপয় নেতার একক আধিপত্যের কারণে তাদের (দলের প্রকৃত নেতাকর্মী) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে দলের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। এ সুযোগে একসময়ের বিএনপি ও জামায়াতের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এবং ছাত্রলীগ নেতার প্রধান হত্যাকারী ওইসব একক আধিপত্য বিস্তারকারীদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে দলের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। যে কারণে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে সাংগঠনিক সকল কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করা ছেড়ে দিয়েছেন। এ সুযোগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা দলের একক আধিপত্য বিস্তারকারীদের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিভিন্ন পদ বাগিয়ে নিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা ক্ষমতার তিনটি আমলেই অনুপ্রবেশকারীদের প্রভাবে কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিচালনা কমিটির পদ-পদবী থেকে শুরু করে দলের সকল পর্যায়ে অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এমনকি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে একক আধিপত্য বিস্তারকারীরা দলের প্রকৃত নেতার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে হামলা, দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীদের কুপিয়ে জখম, সরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা, সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করে নিয়ন্ত্রণ করার অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, কতিপয় একক আধিপত্য বিস্তারকারী নেতারা বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের একমাত্র রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিকে ভুল বুঝিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি ও জামায়াতের একসময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডারদের দলে অনুপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। এমনকি কতিপয় আধিপত্য বিস্তারকারীরা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে বরিশালের প্রতিটি উপজেলার মিডিয়া অঙ্গনকেও কয়েকভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। বর্তমানে ওইসব অনুপ্রবেশকারীরা একদিকে ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছেন অপরদিকে তাদের পুরনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাই দলের তৃণমূল পর্যায়ের কাউন্সিলের আগেই দুর্নীতিবাজ একক আধিপত্য বিস্তারকারী ও অনুপ্রবেশ করে দলের পদ-পদবী বাগিয়ে নেয়াদের চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে সর্বত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমপর্যায়ে গত ২৩ অক্টোবর আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৯ নবেম্বর একই উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই উপজেলার দুটি সংগঠনের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের পর থেকেই মূল দল ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কাউন্সিলকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তারা গড়ে তুলেছেন গভীর সখ্য । বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করা, তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, দলের সাংগঠনিক কাজের খোঁজ খবর না নেয়া নেতাকর্মীরা এখন দলীয় কার্যালয়ে সরব হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ লিটন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও দলীয় সভানেত্রী শেখ হসিনার নির্দেশে দলে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ২৯ নবেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আর ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। তিনি আরও বলেন, দল করেন, পদ পাবেন, পদ পেলে পদবী নিয়ে ঘরে বসে থাকবেন এমন নেতা দেখতে চায়না আওয়ামী লীগ। কোনভাবেই যেন অনুপ্রবেশকারীরা কৌশলে দলে ঢুকতে না পারে সেদিকে তারা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। তিনি আরও বলেন, সভাপতি, সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০০১ সাল থেকে চলতি সময় পর্যন্ত তাদের আচার-আচরণ, জনগণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণযোগাযোগ ও রাজনৈতিক কর্মকা- বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। তারপরও আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা নিয়েই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। মহিলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ॥ হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করার পাশাপাশি উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিবন্ধকতাকারীদের প্রতিহত করে নারীবান্ধব সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার নিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর পর নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক মলিনা রানী রায়ের সভাপতিত্বে সকাল দশটায় উপজেলার শহীদ সুকান্ত আব্দুল্লাহ হলরুমে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরিশাল সংরক্ষিত আসনের এমপি এ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন-জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন-জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মোঃ লিটন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্যামলী সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পিয়ারা ফারুক বক্তিয়ার। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ মন্ডলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন-নারী নেত্রী আভা রানী মুখার্জী, মরিয়ম বেগম, শিখা রানী শিকদার, বিথিকা রানী বাড়ৈ, ছাত্রলীগ সভাপতি মিন্টু সেরনিয়াবাত প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিবারবর্গ, কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারবর্গ, শহীদ সুকান্ত আব্দুল্লাহ, মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ, জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ দলের আন্দোলন সংগ্রামে নিহত সকল নেতৃবৃন্দের জন্য শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। শেষে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনে সভাপতি, সম্পাদকসহ অন্য পদের প্রার্থীরা জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের আবেদনপত্র ও তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড তুলে ধরে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সম্মেলনে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সকলের মতামতের ভিত্তিতে খুব শীঘ্রই আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ৫১সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন বলে পদ প্রত্যাশীদের আশ্বস্ত করেন। সম্মেলনে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল, ২০০৩ সাল ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে এই দীর্ঘ ২৩ বছর দল পরিচালনা করে আসছিলো আগৈলঝাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। গত ২৩ অক্টোবরের সম্মেলনকে ঘিরে ওইদিন সকাল থেকে বিভিন্নস্থান থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে সভাস্থলে এসে জড়ো হয় নারী নেত্রীরা। একপর্যায়ে নবীন ও প্রবীণ নারী নেত্রীদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিনত হয় সম্মেলনস্থল।
×