ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমবাপে থেকে সামিউল হয়ে গেলেন উসাইন বোল্ট, কৃষক-কন্যা সোনিয়া দ্রুততম কিশোরী

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

এমবাপে থেকে সামিউল হয়ে গেলেন উসাইন বোল্ট, কৃষক-কন্যা সোনিয়া দ্রুততম কিশোরী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমার মতো খুশি মনে হয় এ জগতে আর কেউ নেই!’ কথাগুলো খুলনা বিভাগের সুঠামদেহী স্প্রিন্টার সামিউল ইসলামের। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের এ্যাথলেটিক ট্র্যাকে একটু আগেই ১১.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়ে অ-১৯ কিশোর বিভাগের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জিতে নিয়েছেন স্বর্ণপদক। জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্সে এটাই তার প্রথম স্বর্ণ-সাফল্য। খুলনা জেলার হয়ে খেলা সামিউল এ নিয়ে তৃতীয়বার জুনিয়র মিটে খেললেন। প্রথমবার ২০১৬ সালে অংশ নিয়ে দল বাঁচানোর জন্য সব ইভেন্টেই অংশ নিয়েছিরেন! কোন পদক পাননি। যদি যেকোন একটিতে খেলতেন, তাহলে ঠিকই কোন না কোন পদক জিততেন। বিকেএসপির মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া এ্যাথলেটদের পেছনে ফেলে প্রথম হয়ে খুবই আনন্দিত সামিউল। যখন হিটেও ওদের হারান, তখনই আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল তার। বুঝতে পেরেছিলেন, ফাইনালেও চেষ্টা করলে ওদের হারাতে পারবেন। সেটাই হয়েছে। মজার ব্যাপার-তিনি আসলে আদতে ১০০ মিটারের স্প্রিন্টারই নন, তারর মূল ইভেন্ট ৪০০ মিটার! এ প্রসঙ্গে সামিউলের ভাষ্য, ‘সত্যি বলতে কি, আমি ১০০ মিটার দৌড়ের জন্য কোন অনুশীলনই করিনি! আমি বেসিক্যালি ফুটবলার। এটা আমার খুব প্রিয় খেলা। খুলনা প্রথম বিভাগ লিগে খেলি দিঘলিয়ার হয়ে। একবার ডেভেলপমেন্ট কাপ ফুটবলে অংশ নিয়ে সারা দেশের মধ্যে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলাম (২০১৬ সালে)। পাশাপাশি বিজেএমসির হয়ে টুকটাক এ্যাথলেটিক্সও করি। ফুটবলে মৌসুমে খেপ খেলে ১৫-১৮ হাজার টাকা আয় করি। পুরো টাকা দিয়ে আমাদের সংসারটা চলে। এই মৌসুমে কয়েকটি হ্যাটট্রিকসহ ৪০টার মতো গোলও করেছি ফরোয়ার্ড পজিশনে। সর্বশেষ ৩ ম্যাচে ২ গোল করেছি। এক ম্যাচে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা নাইজেরিয়ান প্লেয়ার স্যামসন ইলিয়াসুসহ চার নাইজেরিয়ানকে বিট করে হেডে গোল করেছি। আমাকে এলাকায় সবাই এমবাপে বলে ডাকে! ঢাকায় এসে তো এমবাপে থেকে উসাইন বোল্টই হয়ে গেলাম! ঢাকার কোন ক্লাবে ফুটবল খেলার খুব ইচ্ছে। সময়ই বলে দেবে আগামীতে আমি কোনটা বেছে নেব, ফুটবল নাকি এ্যাথলেটিক্স?’ সামিউল খুবই গরীব ঘরের সন্তান। বাবা মহিউদ্দিন শেখ কৃষিকাজ করেন। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। তারপরও কাজ করার চেষ্টা করেন। তখন এটা দেখলে কষ্টে সামিউলের বুক ফেটে যায়। তিনিই সংসারের বড় ছেলে (মোট ৪ ভাইবোন), সব দায়িত্ব তারই ঘাড়ে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন দিঘলিয়া এমবি মুজিব সরকারী কলেজে। ছাত্র হিসেবেও খুব বেশি ভাল নন। তার ধ্যানজ্ঞান সব খেলাধুলাকেই ঘিরেই। শুক্রবার একই ইভেন্টে দ্রুততম কিশোরী হয়েছেন বিকেএসপির সোনিয়া আক্তার। তার টাইমিং ১২.৬৬ সেকেন্ড। ২০১৫ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন এ্যাথলেটিক্স বিভাগে। তখন থেকেই জাতীয় জুনিয়র মিটে অংশ নিয়ে আসছেন। এ নিয়ে দু’বার স্বর্ণ জিতলেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। আগেরবার জিতেছিলেন ২০১৬ আসরে। সোনিয়া বলেন, ‘স্বর্ণ জেতার ব্যাপারে খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জিতে খুব ভাল লাগছে। এজন্য আমার বিকেএপসিকে ধন্যবাদ জানাবো। তারা আমাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমার সাফল্যের জন্য আমার কোচ নিজাম উদ্দিনের অবদান আছে। এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং। আমার সেরা হ্যান্ড টাইমিং হচ্ছে ১১.৯৯ সেকেন্ড। আমি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে আরও ভাল টাইমিং করতে পারবো বলে আশা করি। সোনিয়ার বাবা কৃষক। ছোট একটা ভাই আছে, চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বাড়ী নওগাঁ। ‘এ্যাথলেট হবো, কোনদিনও ভাবিনি। তবে স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার এবং লং জাম্পে অংশ নিয়ে সবসময় প্রথম হতাম।’ উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোনিয়ার মন্তব্য। ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘ধাপে ধাপে এগুতে চাই। জুনিয়রে সফল হবার পর আগামীতে সিনিয়র ন্যাশনালে অংশ নিয়ে সফল হতে চাই।’ দৃঢ়প্রত্যয়ী কণ্ঠ সোনিয়ার।
×