ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাছচাষে নতুন প্রযুক্তি বায়োফ্লক ॥ চাষ হচ্ছে শেকৃবিতে

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 মাছচাষে নতুন প্রযুক্তি বায়োফ্লক ॥ চাষ হচ্ছে শেকৃবিতে

মাছ চাষের সর্বাধুনিক এক প্রযুক্তির নাম ‘বায়োফ্লক’। যা নিরাপদ মাছ উৎপাদনের পদ্ধতি বলে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ প্রযুক্তিতে পুকুরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। বায়োফ্লক ব্যবহার করে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে- যা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশে প্রথম। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সফল হওয়া গবেষক দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। বায়োফ্লক প্রযুক্তি নিয়ে ১ বছর যাবত গবেষণা করছেন একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক। গবেষকরা বলছেন, দেশীয় জাতের মাছকে চাষ উপযোগী করতেই তারা এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন। এটি সফল হলে মাছের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে বলেও আশা করছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ভবনের ছাদে ৬শ’ বর্গফুটের এই ঘরেই চাষ হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাগুর, শিং ও তেলাপিয়া মাছ। যেখানে দৈনন্দিন যে খাবার প্রয়োজন তা কমিয়ে উক্ত পানিতে বিদ্যমান অনুজীব মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পানিতে উচ্চ কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত নিশ্চিত করে, ক্ষতিকর অ্যামোনিয়াকে রূপান্তর করা হয় অনুজীব আমিষে। যা খেয়েই বড় হয় মাছ। বায়োফ্লক সম্পর্কে ড. এ এম সাহাবউদ্দিন বলেন, বায়োফ্লক এক প্রকার জৈবিক ক্রিয়া, যা উপকারি অনুজীব বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি এবং জল ও বাতাসের সাহায্যে জলের ক্ষতিকারক এ্যামোনিয়া দূর করে মাছের জন্য খাদ্য এবং বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। যা একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি যা ক্রমাগতভাবে পানিতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলোকে পুনরাবর্তনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করে। এতে মাছের উৎপাদন খরচও কয়েকগুণ কমে যায়। ইতোমধ্যে বহিঃবিশ্বে এই প্রযুক্তি জনপ্রিয় হলেও অতিসম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে দেশেও। উদ্দেশ্য দেশীয় জাতের মাছকে এই প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১০ ঘন মিটার পানির ট্যাংকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বছরে সর্বোচ্চ ৩ হাজার কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব। এ জন্য দরকার উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎস, নিয়িমত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ। তারা আরও বলছেন, এই পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হলে দেশে মাছ চাষের জমি ও পানির ব্যবহারই শুধু কমবে না, দেশে মাছের যোগানও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফলতা সম্পর্কে ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন বলেন, মাছ চাষের শতকরা ৬০ ভাগ খরচ হয় খাবারের জন্য। এ পদ্ধতিতে খাবার কম লাগে, রোগের প্রাদুর্ভাব কম হয়। অল্প জায়গায় বেশি পরিমাণ মাছ চাষ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। এ পদ্ধতিতে বাড়িতে যে কোন চাষী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরি দক্ষতা অর্জন পূর্বক ৫ থেকে ১০টি ট্যাংকে সহজেই মাছ চাষ করতে পারবে। ট্যাংক স্থাপন সম্পর্কে ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন বলেন, ট্যাংক তারপলিন ও ইট সিমেন্ট তৈরি করা যায়। তারপলিন ট্যাংকের ক্ষেত্রে প্রথমে গ্রেড রড দিয়ে ট্যাংকের বৃত্তাকার খাঁচাটি তৈরি করতে হবে। যেই স্থানে ট্যাংকটি স্থাপন করা হবে সেই জায়গাতে খাঁচার পরিধির সমান করে সিসি ঢালাই দিতে হবে। বৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে পানির একটি আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে। এরপর খাঁচাটিকে ঢালাই মেঝের ওপর স্থাপন করে মাটিতে গেঁথে দিতে হবে। মেঝের মাটি শক্ত ও সমান হলে ঢালাইয়ের পরিবর্তে পরিধির সমান করে পুরু পলিথিন বিছিয়েও মেঝে প্রস্তুত করা যায়। এরপর উন্নতমানের তারপুলিন দিয়ে সম্পূর্ণ খাঁচাটি ঢেকে দিতে হবে। তার ওপর পুরু পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত করে তাতে পানি মজুদ করতে হবে। বায়োফ্লক ট্যাংকে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি এরেটর পাম্প স্থাপন করতে হবে। সাধারণত ১০০০০ লিঃ একটি ট্যাংকে ৩৫ ওয়াটের একটি এরেটর প্রয়োজন হয়। এতে ৮-১০টি স্টোন সংযোগ করতে হবে। ১০০০০ লিঃ একটি ট্যাংকে প্রায় ৪-৫ হাজার তেলাপিয়া ও ১০-২০ শিং মাছ চাষ করা সম্ভব। -বশিরুল ইসলাম, শেকৃবি থেকে
×