ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি ভবন এখন বেহাল

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি ভবন এখন বেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে অর্থ সঙ্কটে ভুগতে থাকা বাগেরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির এখন বেহাল অবস্থা। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে একাডেমি ভবনের একমাত্র হলো রুমটি ‘সপ্তর্সি ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি কোম্পানির কাছে মাসিক ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছে বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। আর ওই ভাড়ার টাকার একটা অংশ দিয়ে চলছে অফিস কার্যক্রম। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে শুধু প্রশিক্ষণের জন্য ‘সপ্তার্সি ইন্টারন্যাশনাল’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটিকে হলো রুমটি ভাড়া দেয়া হয়েছে। বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে বড় বড় ফাটল নিয়ে একাডেমির ভবনটির এখন নাজুক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার ফলে হলরুমটি পড়েছিল, তাই তাদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে ৭শ’ ৫০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হলরুমটি ভাড়া দেয়ার প্রয়োজনই হতো না। সরজমিনে বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ বছর আগে ২০০৬ সালে নির্মিত এ ভবনটিতে ইতোমধ্যেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। আর এ একাডেমি ভবনে থাকা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর বড় পর্দা দিয়ে ৭শ’ ৫০ দর্শক ধারনক্ষমতা সম্পন্ন হলরুমটিতে চলছে সপ্তর্সি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম। এমনকি দীর্ঘ ১৩ বছরেও এ একাডেমি ভবনটিতে একবারেও জন্য কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। হলরুমটির এক পাশে একটি কক্ষ ওই কোম্পানির মালিক সৈয়দ মিজানুর রহমান তার অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। এছাড়া অযত্ন আর অবহেলায় হলরুমের চেয়ারগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১৪ জুলাই তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম বাগেরহাট শহরের দশানী মোড় এলাকায় ৬৭ শতাংশ জমির ওপর এ একাডেমি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট-২ আসনের তৎকালীন এমপি এমএএইচ সেলিম একাডেমি ভবনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সেই সময়ে জেলার নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমিতে জেলার শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠলেও তার বছর দুই পর আস্তে আস্তে এ শিল্পকলা একাডেমি তার জৌলুস হারাতে শুরু করে। বর্তমানে এ একাডেমিতে কার্যক্রম বলতে সংঙ্গীত, নিত্য, নাটক, তবলা ও চারুকলা প্রশিক্ষণ বিভাগে প্রায় ২শ’ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। একাডেমির প্রশিক্ষক ও তালযন্ত্র সহকারী হিসেবে ১০ জন কর্মরত রয়েছেন যাদের ২ হাজার ৪শ’ টাকার নামমাত্র সম্মানী দেয়া হয়। সপ্তর্সি ইন্টারন্যাশনালের মালিক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, শিল্পকলা একাডেমি ভবনের হলরুমে আমরা প্রায় ১৭ মাস ধরে আছি। মাসিক ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে আমরা হলরুমটি ভাড়া নিয়েছি। আমরা মূলত বিভিন্ন পুতুলে হেয়ার প্লানটেশন কাজ করি, যেগুলো জাপান ও চায়নার কাছে রফতানি করি। বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। এই স্বল্প বাজেটে আমাদের অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। আমাদের প্রশিক্ষক ও তালযন্ত্র সহকারী হিসেবে ১০ জন রয়েছেন যাদের নামমাত্র সম্মানী দেয়া হয়। একাডেমি ভবনের হলরুমটি ভাড়া দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে নতুন এ শিল্পকলার একাডেমি ভবন নির্মাণের প্রায় এক বছরের মাথায় প্রশাসনিক ভবনের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এছাড়া হলরুমের সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং ও পর্দা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে হলরুমটি কোন কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছিল না। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য হলরুমটি ভাড়া দেয়া হয়েছিল। যার ভাড়ার টাকা একাডেমির উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যেই আমরা হলরুম ছেড়ে দেয়ার নোটিস দিয়েছি। এছাড়া তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পেলে জেলায় শিল্প সাংস্কৃতির চর্চা আরও বেগবান হবে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, জেলায় যোগদানের পর শিল্পকলা একাডেমি ভবন পরিদর্শন করেছি। ভবনটির খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে ভবনটি আর সংস্কার করার মতো অবস্থায় নেই। এ কারণে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর একাডেমি ভবনের হলরুমটি ভাড়া দেয়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×