ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারী

দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ৬৪ বিএস ভবন

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ৬৪ বিএস ভবন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কেউ বলেন ভূতের বাড়ি। আবার আরও কেউ বলেন জুয়ার বাড়ি- আবার কোথাও গাঁজার আখড়া নামে পরিচিত ভবনগুলো। অযত্ন আর অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকতে থাকতে বর্তমানে অধিকাংশ ভবনই বসবাসের অনুপযোগী। সরকারী ওই বাসভবনগুলো মাদকসেবীদের আস্তানা আর এলাকার অসামাজিক কাজের স্থান হিসাবেই চিহ্নিত হয়েছে। ভবনগুলো নির্মাণ হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ব্লক সুপারভাইজারদের (বিএস) আবাসিক ভবন ও অফিস হিসাবে। কিন্তু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে সে গুলোতে বসবাসের অনীহা দেখায় তারা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের তেমন কোন চাপও ছিল না বলে সূত্র জানায়। নীলফামারী জেলা সদরসহ ৬ উপজেলায় এমন ভবনের সংখ্যা ৬৪। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮০ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্ট উইং তৎকালীন মহকুমাসহ প্রতিটি জেলায় এসব আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছিল। সূত্র জানায়, তৎকালীন আইয়ুব খানের শাসনামলে বিভিন্ন ইউনিয়নে বীজ ও বিষ রাখার জন্য সিড স্টোর নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৯-৮০ সালে ওই সকল স্থানে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে কর্মরত ব্লক সুপারভাইজারদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৬টি, ডোমার উপজেলায় ১০টি, ডিমলা উপজেলায় ১০টি, জলঢাকা উপজেলায় ১১টি, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৯টি, সৈয়দপুর উপজেলায় ৬টি বিএস বাসভবন নির্মাণ করা হয়। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের কৃষক আলম হোসেন বলেন, আগে বিএস কোয়ার্টারটি চালু থাকায় আমরা খুব সহজে কৃষি বিষয়ে যে কোন পরামর্শ নিতে পারতাম। এখন পরামর্শ নেয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে যেতে হয়। কিশোরীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কৃষকদের কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানের জন্য বিএস কোয়ার্টারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। পুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএস কোয়ার্টারগুলোর যে ভঙ্গুর দশা সেখানে বিএসদের থাকার মতো কোন পরিবেশ নাই। ফলে ইউনিয়নের কৃষকরা প্রকৃত সেবা পাচ্ছেন না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএস ভবনে ও বাসায় হাতেগোনা কয়েকজন বসবাস করছেন। এক সময়ের ব্লক সুপারভাইজাররা বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে বসবাস করছেন। যার বেশিরভাগ ভবন অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় অব্যবহৃত ভবনগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ ভবনেই বেশির বহিরাগত অথবা ছিন্নমূলদের বসবাস। উধাও হয়ে গেছে জানালা-দরজা। অনেক ভবনে রাতদিন চলে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কাজ কারবার। এমনও ভবন আছে নির্মাণের পর কোন ব্লক সুপারভাইজারই বাস করেনি। ফলে দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত ভবনগুলো ভুতুড়ে বাড়ির রূপ নিয়েছে। সরকারী লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলো কেন বছরের পর বছর এভাবে পড়ে রয়েছে সে প্রশ্ন এলাকাবাসীর।কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের পাশে অবস্থিত বিএস কোয়ার্টারটি ব্যবহারের অনুপযোগী। কোয়ার্টারটির দরজা-জানালা ও ইটগুলো কে বা কারা রাতের আঁধারে খুলে নিয়ে গেছে। চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্লাবাড়িতে অবস্থিত বিএস কোয়ার্টার, মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা বিএস কোয়ার্টার, পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর বিএস কোয়ার্টার, রণচ-ি ইউনিয়ন বিএস কোয়ার্টার, গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন বিএস কোয়ার্টার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জেলা জুড়েই এমন অবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যখন ভবনগুলো নির্মাণ করা হয় তখন এলাকাগুলোয় মানুষের চলাচল ছিল কম। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সব বাসভবন এখন লোকালয়ের মধ্যেই পড়ে গেছে। সুতরাং এখন তো অনেকটাই নিরাপদ। ভাড়াও কম মাত্র ৫০ টাকা। বর্তমানে ইউনিয়নে ইউনিয়নে বসবাস করার সমস্যাটা তো আর দেখছি না। তবে ভবনগুলো সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এক সময়ের ব্লক সুপারভাইজার বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তার কর্মরত এলাকা ইউনিয়নভিত্তিক। তিনি ওই কোয়ার্টারে থাকবেন ও অফিস করবেন। কৃষকরা তাদের সমস্যা নিয়ে সেখানে যাবেন। কিন্তু উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সেখানে পরিবার নিয়ে থাকতে পারেন না। কারণ সেগুলো এখন এলাকাবাসীর জন্য গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো। এলাকার কিছু খারাপ মানুষজন এই সকল ঝুঁকিপুর্ণ কোয়াটারে বসে জুয়া খেলে ও মাদক সেবন করে। তাই কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বাড়ি থেকে ইউনিয়ন ঘুরেন ও উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে বসেন। বাসভবনগুলো বসবাসের অযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে আসলে বাস ভবনগুলো অনেক পুরাতন। ভবনগুলো সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের সেবাসমূহ কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে অবশ্যই এলাকাভিত্তিক ব্লক সুপার ভাইজারদের আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিএসদের বাসভবনগুলো পুনরায় সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। কৃষি বিভাগে উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান অচিরেই আমরা পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। সেই সঙ্গে আমরা কোয়ার্টারগুলো সংস্কারের জন্য বলেছি।
×