ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোল্লা জালাল

শেখ হাসিনাই দক্ষিণ এশিয়ার নেতা

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

 শেখ হাসিনাই দক্ষিণ এশিয়ার নেতা

জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের গুরুত্বের বিষয়টি নতুনরূপে প্রকাশ হয়। নিউইয়র্ক সফরের দু’দিন পরই শেখ হাসিনা ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরে আসার পরদিনই ভারতীয় গণমাধ্যমে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস্ ‘ইন্ডিয়াস বেস্ট পার্টনারশিপ ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, এনআরসি নিয়ে নয়াদিল্লীর প্রয়োজন বাংলাদেশের সকল শঙ্কা দূর করা। আরও বলা হয়, উভয় দেশের সম্পর্ক বর্তমানে সোনালি অধ্যায় হলেও এনআরসি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়াটা একটা সংশয় তৈরি করছে। সম্পাদকীয়তে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, সংশয়ের বিষয়গুলো দূর না হলে অচিরেই ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অঙ্কুুরেই’ বিনষ্ট হবে। অপরদিকে টাইমস্ অব ইন্ডিয়া পত্রিকা ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এনআরসি ভুলে যান, বাংলাদেশের আর্থিক উন্নতি থেকে শিক্ষা নিন। ভারতের শেখা উচিত বাংলাদেশকে দেখে। দ্য হিন্দু এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও একই সুরে মন্তব্য করেছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে এটাই শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। শুধু এ ধরনের প্রশংসাই নয়, ভারতীয় নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তারা যেন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করায় ভূমিকা রাখেন। আরও বলেছে অবিলম্বে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করতে। বাংলাদেশের আর্থিক সাফল্য ও অব্যাহত উন্নতির কথাও আছে। ভারতের গণমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশ এখন আর গরিব দেশ নয়। প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র। তারা ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের অজুহাত এখন হাস্যকর। ভারতীয় গণমাধ্যমের আশাবাদ, ‘সুসময়ের এই বন্ধুকে’ ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে অনেকটা হাস্যচ্ছলে পেঁয়াজের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজ দেয়া বন্ধ করে দিলেন। ‘আমি বাসায় বলে দিয়েছি পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে। ভবিষ্যতে কোন কিছু বন্ধ করতে হলে আগেভাগে একটু বলে নিয়েন, তাতে আমাদের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই কথাগুলো ছিল ভারতীয় নেতাদের জন্য অর্থবহ ইঙ্গিত, যা তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। ১৯৬৫ সালে ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে গঙ্গার পানি আটকে দিয়েছিল। ধরে নেয়া হয়েছিল ফারাক্কার পানি না পেলে তৎকালীর পূর্ব পাকিস্তান মানে বর্তমানের বাংলাদেশ মরে যাবে। প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু বাংলাদেশ মরেনি। মরুভূমিও হয়নি। পানি সমস্যা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ বছরের জন্য গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে। অপর একটি অভিন্ন নদী তিস্তা। বারবার বলার পরও ভারত তিস্তার পানি দিচ্ছে না। বাংলাদেশের পানির সমস্যা আছে ঠিকই, তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে, যে উত্তরাঞ্চলকে এক সময় ‘মঙ্গার দেশ’ বলা হতো, সেই উত্তরাঞ্চল তিস্তার পানি ছাড়াই সবুজ-শ্যামলে পরিপূর্ণ। উত্তরাঞ্চল এখন শস্যভান্ডার। সুতরাং সব কিছুরই বিকল্প আছে। এটাই নিয়ম। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও বন্ধুপ্রতিম ভারতকে উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু ভারত বরাবরই বিষয়গুলোকে তাদের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে ধরে নিয়েছে। আন্তরিকতার দিকটি বিবেচনায় নেয়নি। এখানেই বিশাল ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেকাংশে ছোট। এ কারণেই শেখ হাসিনা ভারতের যে কোন নেতার চেয়ে অনেক বেশি দূরদর্শী, পরিপক্ব। জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনাকে যে সম্মান ও গুরুত্ব দিয়েছেন তা নজিরবিহীন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ম্লান মনে হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কেন শেখ হাসিনার এই সম্মান? কি আছে তার ব্যক্তিত্বে? কি আছে তার নেতৃত্বে? প্রথমত শেখ হাসিনা সৎ, স্বচ্ছ ও দেশপ্রেমিক। ব্যক্তিকেন্দ্রিক নন, বহুমাত্রিক। তিনি ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি একজন আশাবাদী মানুষ। ছোট্ট একটি ভূখন্ডের বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি লোক। এই মানুষের বড় একটি শ্রেণী লুটেরা চরিত্রের। যাদের লোভের কোন শেষ নেই। যা পায় সবই প্রায় লুটেপুটে খেতে চায়, খায়। সেই দেশটিকে আত্মনির্ভর করার জন্য শেখ হাসিনার পরিকল্পনা, দৃঢ়তা ও নেতৃত্বই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। নানা সঙ্কটে বাংলাদেশের মানুষ প্রায়ই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের মনের সাহস। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত উন্নয়নের রোল মডেল। নোবেলজয়ী ভারতের অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এই সেদিন আমেরিকার ম্যাগাজিন ‘দ্য নিউইয়র্কারকে’ দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, গড় আয়ু এবং নারী শিক্ষাসহ অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ভারতীদের চেয়ে ৫ বছর বেশি। রাজনৈতিক দর্শনে একটা কথা আছে, সত্যিকার রাজনীতিবিদের কোন আত্মীয় থাকে না। তিনি কারও পিতা-মাতা, ভাই-বোন হতে পারেন না। তিনি সকলের। তার কাছে সবাই সমান। এই বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন। বর্তমানে দেশে দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান চলছে তা আরও জোরদার করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুর্বৃত্ত যেই হোক ছাড় নয়। এখনও পর্যন্ত সেভাবেই চলছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে গোটা দেশের মানুষ একমত। সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। আর এই সমর্থনের মধ্য দিয়েই মানুষের মনে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আশার সঞ্চার হচ্ছে। মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের আত্মপ্রত্যয়ী সাহসী মানুষ লুটেরাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। কিন্তু এই বিচারটা করবে কে? প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে সবকিছুর শুনানি করে ফাইলপত্র দেখে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। তার তো আরও অনেক কাজ আছে। তাহলে কাজগুলো করতে হবে প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি কোন ধরনের শিথিলতা দেখান বা দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নেন তাহলে মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। যেমন ধরুন, আপনার পা মচকে গেলে এর চিকিৎসা ধীরে-সুস্থে সময়সাপেক্ষে হতে পারে। কিন্তু যদি আপনার হাত-পা কেটে যায় তাহলে জরুরীভিত্তিতে অপারেশন করার মতো চিকিৎসা নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সব কিছুই সম্ভব। আর তাতে বিশ্বের কারও পক্ষেই মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু তা না হলে সর্বনাশ দু’দিকেই। আবরার হত্যার বিচার চেয়েছে জাতিসংঘ। কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হয় না! বাংলাদেশের সকল সাফল্য, অর্জন, সুনাম, সুখ্যাতি মাঝে-মধ্যে ঘটে যাওয়া দু’একটি ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। এভাবে আর কতদিন চলবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে রাজনীতি নেই। তাদের হয়ে মিডিয়াই বরং রাজনীতি করে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে কোন সৃজনশীল উদ্ভাবনী নেই। কথাবার্তা সেই একই ধাঁচের। শুনলে বিরক্তি লাগে। আবরারকে যারা হত্যা করল তারা কারা? তাদের আলোচিত পরিচয় হচ্ছে তারা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। সবাই বুয়েটে পড়াশোনা করে, মেধাবী। তাদের প্রত্যেকের বাবা-মা, ভাই-বোন, পরিবার আছে। এসব ছেলে বাড়ি ছেড়ে বুয়েটে লেখাপড়া করতে এসেছে। তাদের খরচ যোগায় বাবা-মা-সরকার। স্বাভাবিকভাবেই তাদের খুব হিসেব করে চলার কথা। কিন্তু একেকজন চলে ‘সুলতান সুলেমান স্টাইলে’। ছুটিতে বাড়ি যায় আলিশান গাড়ি নিয়ে। প্রত্যেকের জীবনযাপনের স্টাইল নবাবী হালের। এসব দেখেও বাবা-মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে না। ভাবে না ছেলে এত টাকা-পয়সা কোথা থেকে পায়? বরং ক্ষেত্রবিশেষে গর্বে বুক ফোলায়, পাড়া-পড়শীদের বোঝাতে চায়- দেখ আমার পোলা কত বড়। সর্বনাশের মূল কারণ এখানেই। সব কিছুই কি সরকার করবে? আপনার-আমার-আমাদের কি কিছুই করার নেই? লোভ আর লালসার কাছে আত্মসমর্পণের পরিণতি এমনই হয়। নিজের সর্বনাশের পাশাপাশি দেশ ও জাতির সর্বনাশ ঘটায়। এসব কারণেই আমাদের উন্নতি এক ধাপ এগিয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে পড়ে। এ কথা বলাই যায়, বাংলাদেশের প্রায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন একজনও মেরুদ-ওয়ালা যোগ্য ভিসি নেই। আছে চাকরিজীবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রথম যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন কন্ট্রোল করার ক্ষমতা। সাহসী দৃঢ়চেতা লোক না হলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যাদের সে সাহস ও যোগ্যতা নেই তারা কেন যান ভিসি হতে? বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাট, চুরি-চামারির অভিযোগ। তাদের কথা ছাত্ররা শুনবে কেন? সময় এসেছে এসব বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার। জাতিসংঘ থেকে ফিরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানসহ ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা অনেক কথা বলেছেন। তার কথায় দেশের অগ্রগতি, সমৃদ্ধির পরিকল্পনার রূপরেখা যেমন ছিল, তেমনি তার দায়িত্ববোধের বিষয়টিও ছিল। তিনি বলেছেন, সরকারপ্রধান হিসেবে সবকিছু দেখা, মনিটর করা তার দায়িত্ব। তিনি তা করছেন। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কোন দায়িত্ব নেই? সব কিছুই কি প্রধানমন্ত্রীকে করতে হবে? তিনি তো বলছেন, করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন। কার্যকর করার দায়িত্ব তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের। পাশাপাশি দেশের সুশীল-কুশীল, যারা সব ধরনের বেনিফিসিয়ারি, তাদের কি কিছুই করণীয় নেই। তাদের কাজ কি শুধু সরকারকে ফেলে দেয়ার সমালোচনা করা? আর কোন দায়িত্ব নেই? আজ পর্যন্ত কোন সুশীলের মুখে শুনলাম না সরকার এই সিদ্ধান্তটি সঠিক নিয়েছে। আসুন সবাই সরকারকে সহযোগিতা করি। এসব সুশীল কখনও রাষ্ট্রক্ষমতা হ্যান্ডেল করেননি, তা নয়। ১/১১-এর সময় এবং তারও আগে সামরিক শাসনের সময় দেখেছি তারা কতটুকু কি করতে পারেন। বাগাড়ম্বর করে লাভ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের দ্বারাই সঠিকভাবে চলে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে। দেশ পরিচালনা করে। কিন্তু সব কিছু কার্যকর করে প্রজাতন্ত্র। একটি দেশে যদি দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র থাকে তাহলে রাজনীতিবিদদের সাধ্যিও নেই দুর্নীতি করার। হুকুম দিতে পারে, কিন্তু কার্যকর করার ক্ষমতা কোন রাজনীতিবিদের নেই। অনুরূপভাবে যদি দেশপ্রেম থাকে তাহলে লুটপাট হওয়ার কোন আশঙ্কা থাকে না। সারা বছর বাজার থাকবে স্বাভাবিক। দেশপ্রেমিক কখনও বিদেশে টাকা পাচার করে না। দেশে বিনিয়োগ করবে। পাচার করে লুটেরা শ্রেণী। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দেশে ব্যবসায়ীর চেয়ে মুনাফাখোরের সংখ্যা বেশি। এদের লোভের শেষ নেই। এরাই রাষ্ট্রযন্ত্রকে নষ্ট করে। বর্তমান প্রতিযোগিতার বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে লোভ-লালসা, অতি উচ্চাকাক্সক্ষা পরিহার করে দেশপ্রেমের মনোভাব নিয়ে সব কিছু ভাবতে হবে, করতে হবে। টাকা-পয়সা লুটপাট করে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে ভোগ-বিলাস করা যাবে হয় তো, কিন্তু কোনদিনই ওই দেশের, ওই সমাজের হতে পারবেন না। হবেন পয়সাওয়ালা রিফিউজি। শেষ বয়সে অসহায়ত্বের যন্ত্রণায় তিলে তিলে অনুশোচনায় মরবেন। আপনার সন্তান-সন্ততিরা স্রোতের শেওলার মতো থাকবে ভাসমান। এটাই মানুষের সংস্কৃতি। যারা দেশের টাকা পাচার করে তাদের মধ্যে আজ পর্যন্ত শুনিনি কেউ বিদেশে গিয়ে বড় মাপের ব্যবসায়ী কিংবা শিল্পপতি হয়েছেন। বড় জোড় একটা বাড়ি কিনে আর মুদি দোকানের আদলে দোকান-টোকান করে কোনমতে চলেন। কিন্তু দেশে থাকলে, দেশে বিনিয়োগ করলে কত মর্যাদা পান। টাকা চুরি-চামারি, ব্যাংক লুটপাট বা যে কোন উপায়েই সংগ্রহ করা হোক না কেন বিনিয়োগে তো বাধা নেই। তাছাড়া আমাদের দেশে লুটেরাদের সুবিধা বেশি। বিভিন্ন সময় তাদের নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়, এই যা। আখেরে তারা ভালই থাকে। তারপরও কেন বিদেশে টাকা পাচার করতে হবে? তার চেয়ে যার টাকা আছে সে চাইলে তো বিদেশী পুঁজিও দেশে আনতে পারে। যৌথ বিনিয়োগে গড়ে তুলতে পারে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে বিদেশীরা আগ্রহী। কারণ এদেশে শ্রমের মূল্য সবচেয়ে কম। ক্ষেত্রবিশেষে বাধা শুধু আমলাতন্ত্র। আর সে কারণেই দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র আর দেশপ্রেমিক পুঁজি। এর কোন বিকল্প নেই। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, বিএফইউজের সভাপতি
×