ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলায় সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

ভোলায় সহিংসতা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপশক্তি কিছুকাল পরপরই নতুন করে দংশনে উদ্যত হয়। এরা সুকৌশলে সুযোগ সৃষ্টি করে অপকর্ম সংঘটনের। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চালায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সব ধর্ম পালনের সমান সুযোগ ও সব ধর্মীয় উৎসবে সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের দেশ হিসেবে আমাদের মাতৃভূমির উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে গোটা বিশ্বে। সেই বিরল সুনাম ও সম্মান নষ্টেরই অপপ্রয়াস চালায় চিহ্নিত অপশক্তি। এর আগে নিকট অতীতে রামু ও নাসিরনগরে এ ধরনের অপতৎপরতা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। একই কায়দায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়ানোর অশুভ তৎপরতা আরেকবার দেখা গেল। বিষয়টি উদ্বেগজনক ও ক্ষোভসঞ্চারী। এবার তারা সওয়ার হয়েছে ভোলায়। সেখানকার বোরহানউদ্দিনে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে সনাতন ধর্মের এক যুবকের বিচারের দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা এবং তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে, যা নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ। হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখণ্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। বাংলাদেশের পরিচিতি মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে মূর্তমান। দেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক ও কান্ডজ্ঞানহীনদের কারণে কখনও কখনও তাদের সুনামও কণ্টকিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে আবহমানকাল ধরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোক একত্রে আন্তরিকতা আর সৌহার্দ্যরে সঙ্গে বসবাস করে আসছে। ইসলাম বিশ্বমানবতার ধর্ম, কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। এ ধর্ম কখনই অন্য ধর্মের উপাসনালয় কিংবা বাড়িঘরে হামলা করার অনুমোদন দেয় না। বরং ইসলামে রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম কখনও কোন ধরনের সহিংসতা, হানাহানি ও অন্যায় কর্মকা- সমর্থন করে না। তবে এ দেশে বকধার্মিক, ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, কূপম-ূকদের তৎপরতা নানা সময় দেখা গেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেশের ঐতিহ্যের অংশীদার বেশ কিছু মূল্যবান স্থাপনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ভোলার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রশাসন এবং স্থানীয় লোকজন ও সমাজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরও কেন মানুষ এভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠল এবং নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করে দেশের মধ্যে বড় কোন নাশকতার পরিকল্পনা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরী। ইতোমধ্যে সংবাদকর্মীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর বিষয়টি। জামায়াত, যুবদল ও ছাত্রদলের সদস্যরাই সহিংসতার জন্য দায়ী। তারা সুকৌশলে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোয় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ভোলার সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসবুকের মাধ্যমে মিথ্যা ও পরিকল্পিত গুজবকে পুঁজি করে সারাদেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি এবং পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আয়োজন আমাদের বিশেষভাবে শঙ্কিত করেছে। আসলে ষড়যন্ত্র চলছে দেশ, জাতি ও মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তি এবং সরকারের বিরুদ্ধে। যেকোন অবস্থায় এ ষড়যন্ত্র নস্যাত করতে হবে। ভোলায় পরিকল্পিত সহিংসতার হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা চাই, যাতে চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে ভোলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বলাবাহুল্য, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মানুষ বিশেষ সতর্কতা ও যথোচিত দায়িত্বশীল ভূমিকাই প্রত্যাশা করে।
×