ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত পরিবার শঙ্কিত

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

নুসরাত পরিবার শঙ্কিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী ॥ ফেনীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলায় ১৬ আসামীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ফেনীর সর্বত্র আলোচনা চলছে। এ রায়ে নুসাতের পরিবার সহ সকলে সন্তুষ্ট হলেও স্বস্তিতে নেই তার পরিবার বাবা- মা ভাই। শঙ্কিত তারা। যদিও প্রশাসন থেকে তাদের বাড়ীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। রায়ে কার্যকরের চুড়ান্ত পর্ব শেষ হতে এখনও অনেক দুর যেতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা স্থানীয় ভাবে প্রবাবশালী ও অতীতে তাদের অপকর্ম সবার জানা। তাদের সাথীরা যারা বাইরে আছে তারা এমন কোন কাজ নেই যা করতে পারেনা। তারা ও তাদের সাথীরা নুসরাতকে পুড়িয়ে নির্বিঘ্নে সরে গিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার মামলায় ১৬ জন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেকে একলাখ টাকা করে জরিমানা করেছে আদালত। রায় ঘোষনার পর এজলাশে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা নুসরাতের বাবা ও ভাইকে দেখে নেয়ার হুমকী দিয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যমে আসার পর প্রশাসন থেকে সোনাগাজীর নুসরাতের বাড়ীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। আগে ৩ পুলিশ তাদের বাড়ীতে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হয়েছিলো। বৃহস্পতিবার থেকে এক সাব ইন্সেপেক্টর , এক সহকারী সাব- ইন্সেপেক্টর ও ৫ কনেষ্টেবল দেয়া হয়েছে। তারা পালাক্রমে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নুসরাতের পরিবারের সদস্য সহ এলাকাবাসী নুসরাতের কবর জেয়ারত করে তার আত্বার শান্তি কামনা করেছেনে । নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান জানান- আসামীরা আদালতের কাটগড়া থেকে যে ভাবে তাদের দেখে নেয়ার হুমকী দিয়েছে তাতে তারা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। নুসরাতকে পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের উপর বা তাদের বাড়ীতে হামলা হবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারন জীবিকার কারনে তাদের বাড়ীর বাইরে যেতে হয়। এদিকে নুসরাত হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। ফেনীর একটি সমাজ কমিটির সভাপতি কে বিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান- এ রায় দেশের অপরাধীদের জন্য একটি মেসেজ। অপরাধ করে কোন লোক পার পাবেনা। এডেভোকেট আক্তামুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ না হলে এ মামলা এত দ্রুত শেষ হত না। অনেক মামলা যেমন আলোর মুখ দেখেনা তেমনী নুসরাত হত্যা মামলাও এক সময় সকলের নজরের বাইরে চলে যেত। মামলা সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করে আসামীদের আইনের আওতায় আনায় আইজিপি ও ডিজি পিবিআইকে নিয়েও প্রসংশা করছেন অনেকে। এদিকে নুসরাত ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টায় জড়িতরা অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এলাকায় আলোচনা চলছে। তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম, স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক ও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি নুসরাত আত্মত্যা করেছে বলে প্রচার চালিয়ে ছিলো। তাদের এ মামলার অভিযোগপত্রে আনা হয়নি। এ চক্রটি যেকোন সময় তাদের দন্ডপ্রাপ্ত সাথীদের হয়ে নুসরাত পরিবারের উপর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নুসরাত হত্যায় দন্ড প্রাপ্ত আসামীদের অনেকে স্থানীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। স্থানীয় আওয়ামীলীগের গ্রুপিং দৃশ্যমান। রুহুল আমিন খালাস পাবেন আবার সভাপতি হবেন এমন আশায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন কয়েক দফা পেছানো হয়ে ছিলো। তাদের আশা পুরন না হওয়ায় তাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নুসরাতে মামলার রায় হওয়ার পর ফেনীর বিভিন্ন সংগঠন বৃহস্পতিবার বিকালে আনন্দ মিছিল করেছে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তরা বলেন- আদালতের এ রায়ের কারনে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া জরুরী। কারন আর কোন প্রতিষ্ঠানে যেন নুসরাতের মত ঘটনা না ঘটে। তারা নুসরাত হত্যা মমলার রায় দ্রত কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
×