ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল

দুই বছরেও স্থাপন করা হয়নি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন

প্রকাশিত: ১২:১৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

দুই বছরেও স্থাপন করা হয়নি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন

স্টাফ রিপোর্টার,বগুড়া অফিস ॥ সরবরাহের দুই বছর পার হলেও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতলের অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন কাজে আসছে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টল না করে দেয়ায় সেটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলা সদরের সরকারী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের। শুধু দুর্ভোগ নয়, বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্স-রে করাতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে দরিদ্র রোগীদের। তবে এতে কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরেজ ডিপো (সিএমএসডি) ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু করার ক্ষেত্রে (ইনস্টল) কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ফলে মূল্যবান এক্স-রে মেশিনটির ডিজিটাল অংশ পরিত্যক্ত মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্টের মতো হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে পড়ে আছে। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের চাহিদা অনুযায়ী সিএমএসডি’র মাধ্যমে ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এ্যান্ড সার্জিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক্স-ওে মেশিন (৫০০এমএ) সরবরাহ করে। রাতের বেলায় মেশিনটি ট্রাকযোগে হাসপাতালে দিয়ে তারা চলে যায় বলে হাসপাতালে রেডিওলজির টেকনিশিয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন। পরে ২০১৭ সালের আগস্টে এর ডিজিটাল ইউনিট- কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি (সিআর) ইউনিটটি সরবরাহ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পরেও এটি ইনস্টল করে দেয়া হয়নি। সূত্র জানায়, বার বার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া সিএমএসডিসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদের জানান হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রথম পর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাসপাতালে সিআর মেশিনটি ইনস্টলের চেষ্টা করে। ওই সময় তারা মৌখিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়, সফটওয়্যার’র সমস্যা রয়েছে। পরে তারা লিখিতভাবে জানায়, অটোমেটিক ভোলটেজ রেগুলেটার না থাকার কারণে সি আর মেশিনটি (এক্সরে ইউনিটের ডিজিটাল অংশ) চালু না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক্সরে মেশিনের ডিজিটাল ইউনিট সরবরাহের প্রায় দেড় বছর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিষয়টি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান হয়। এদিকে সিআর ইউনিট চালু না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহকৃত এক্সওে মেশিনের (৫০০এমএ) এনালগ অংশ দিয়ে পুরাতন পদ্ধতিতে (এক্সরে ফ্লিম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ডেভেলপ) এক্সরে কার্যক্রম চালু রাখে। তবে এক্স-রে করার পর ফ্লিম প্রিন্ট করার জন্য কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি বা সিআর ইউনিটটি দীর্ঘ সময় ধরে পরিত্যক্তের মতো পড়ে রয়েছে। এর প্রিন্টার, সিআর ইউনিটসহ ক্যাসেট ও ফ্লিম কার্যকর রয়েছে, না অচল হয়ে গেছে সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে পারছেন না। একাধিক সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক এই ডিজিটাল এক্সরে ইউনিটের মূল্য অর্ধ কোটি টাকার মতো হতে পারে। তবে এর প্রকৃত মূল্য কত বা এটি কেন ইনস্টল করা হয়নি, সে বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এসেছিলেন, তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি জানান, এক্সরে মেশিনটি তারা ইনস্টল করে দিয়েছে এবং তা চালু রয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যখন জানান হয় যে, সিআর ইউনিট তো ইনস্টল হয়নি বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, তখন তিনি আর কোন মন্তব্য না করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শফিক আমিন কাজল জানান, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি তাদের ইনস্টল করে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এটি চালু দেখে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বোর্ড প্রত্যয়ন দিবে। কিন্তু এ রকম কোন প্রত্যয়ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। প্রথমে এটির সফটওয়্যার সমস্যার কথা বলা হলেও পরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিন্ন মন্তব্য করে বলে তিনি জানান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম নুরুজ্জামান চঞ্চল জানান, ডিজিটাল এক্সরে চালু থাকলে হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ২ শতাধিক এক্স-রে হতো। সাধারণ রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে ইউনিট দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন। সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে এক্সরে করতে রোগীদের যেখানে ব্যয় হয় মাত্র ২শ টাকা সেখানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এক্সরে করতে রোগীদের ব্যয় হচ্ছে ৪ গুণ টাকা।
×