ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গম এলাকায় বিদ্যুত দিতে মিনি গ্রিড বিষয়ে কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

দুর্গম এলাকায় বিদ্যুত দিতে মিনি গ্রিড বিষয়ে কমিটি গঠন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুর্গম এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহকারী মিনি গ্রিডের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে একটি কমিটি গঠন করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাযক্রমে যেন কোন বিঘœ না ঘটে, এ জন্য কমিটি সুপারিশ করবে। ¯্রডো সূত্র বলছে, নানামুখী অনিশ্চয়তায় দেশে সোলার মিনি গ্রিডের নির্মাণ থমকে গেছে। যেসব উদ্যোক্তারা সোলার মিনি গ্রিডের কাজ পেয়েছিল তাদের অনেকে এখন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এখন গ্রিডের বিদ্যুতের সম্প্রসারণ হচ্ছে। একবার কোন এলাকায় গ্রিড পৌঁছে গেলে মিনি গ্রিডের বিদ্যুত আর বিক্রি হবে না। সেক্ষেত্রে এই বিনিয়োগের কী হবে, তার সুপারিশ করবে কমিটি। তারা বলছে, বিনিয়োগের সুরক্ষা না দিলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। এক্ষেত্রে যেসব এলাকায় গ্রিড পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেখানে বিদ্যুত সম্প্রসারণ সম্ভব হবে না। এর ফলে সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ন পরিকল্পনায় বিঘœ ঘটবে। সাধারণত দেশের উপকূল ও হাওড় এলাকায় মিনি গ্রিড স্থাপন করা হচ্ছে। সরকার বলছে, এসব এলাকায় অন্তত দুই কোটি মানুষ বসবাস করে। ¯্রাে বলছে, এ কমিটির কাজ হবে সোলার মিনি গ্রিডগুলোর কারিগরি মান যাচাই; জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুত পেলে মিনি গ্রিড থেকে কীভাবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করা যায়, তার ?উপায় নির্ধারণ; মিনি গ্রিডের বিদ্যুত বিতরণ লাইনগুলোর গুণগতমান যাচাই এবং ভবিষ্যতে কোন কারণে সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে তা কতটা বাস্তবসম্মত, তা যাচাই-বাছাই করা। মিনি গ্রিড স্থাপনকালীন বছরে এবং চলতি বছরে মিনি গ্রিডের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মূল্য কমানো বা বাড়ানোর বিষয়টি যাচাই করা, মিনি গ্রিডগুলোর বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগ উঠে আসার সময় পর্যালোচনা। মিনি গ্রিডগুলোর বিদ্যুতের মূল্য কমানো বা বাড়ানোর বিষয়টি পর্যালোচনা করা, মিনি গ্রিড গ্রাহকদের বিদ্যুত বিতরণ সেবার জন্য বিইআরসি ঘোষিত বিতরণ মূল্যের মতো বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ভর্তুকি বা প্রতি ইউনিটের জন্যও ভর্তুকি নির্ধারণ করার সুপারিশ করতে পারে কমিটি। এছাড়া গ্রিডে বিদ্যুত যুক্ত হলে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ করবে এই কমিটি। স্রেডার সদস্য (জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ) সিদ্দিক জোবায়েরকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্যদের মধ্যে আছেন স্রেডার সদস্য সালিমা জাহান, স্রেডার পরিচালক (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) গোলাম সরওয়ার-ই কায়নাত, পাওয়ার সেলের পরিচালক (সাসটেইনেবল এনার্জি) মোঃ আব্দুর রউফ মিয়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান খান, পিজিসিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আদিল চৌধুরী, স্রেডার সহকারী পরিচালক (সোলার) রাশেদুল আলম। এছাড়া বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), সোলার মিনি গ্রিড এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোলার এ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এ্যাসোসিয়েশন, সোলার মডিউল ম্যানুফেকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের একজন করে প্রতিনিধিকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘মাত্র কমিটি করা হয়েছে। আমাদের তো গ্রিড এক্সপেনশন হচ্ছে। এ কারণে মিনি গ্রিডের কার্যক্রম থেমে গেছে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকা আছে, যেখানে গ্রিডের বিদ্যুত দেয়া সম্ভব নয়, সেখানে মিনি গ্রিড দরকার। কিন্তু সেখানেও মিনি গ্রিড হচ্ছে না। কারণ সবাই ভয়ে আছে, যদি সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুত চলে আসে, তাহলে এই মিনি গ্রিডের কী হবে?’ তিনি বলেন, ‘প্রধান গ্রিডের বিদ্যুতের তুলনায় মিনি গ্রিডের বিদ্যুতের বিষয়ে মানুষের আস্থা কম। এই অবস্থায় মিনি গ্রিডের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কিন্তু দেশের অনেক স্থানে গ্রিড যাওয়া কঠিন বিষয়। তাহলে আসলে কী হবে? ওই এলাকা বিদ্যুতের আওতায় না এলে তো শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে না। সঙ্গত কারণে সোলার মিনি গ্রিডের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দিতে কাজ করা হবে।’ সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘যেসব এলাকায় বিদ্যুত যাবে, সেখানে মিনি গ্রিড কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়, আবার অন্যদিকে মানুষ যেন এই বিদ্যুতের প্রতি আস্থা রাখে, সেই পরিবেশ তৈরি করাও কমিটির প্রধান কাজ।’ প্রসঙ্গত, মিনি গ্রিডের উদ্যোক্তারা মোট বিনিয়োগের ৫০ ভাগ অনুদান হিসেবে পান। বাকি অর্থের ৩০ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হিসেবে দেয়া হয়। আর ২০ ভাগ বিনিয়োগ করতে হয়। তবে ব্যাটারিতে বিদ্যুত ধারণ করার কারণে মিনি গ্রিড নির্মাণের ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। স্রেডা সূত্র জানায়, ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার মিনি গ্রিড স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০টি দূরবর্তী এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে পরবর্তী ১৫-২০ বছরের মধ্যে গ্রিড সম্প্রসারণের কোন পরিকল্পনা নেই। নতুন এলাকা চিহ্নিতকরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এখন পর্যন্ত ১১টি সোলার মিনি গ্রিড স্থাপন করা হয়েছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ২ দশমিক ১৯ মেগাওয়াট। এছাড়া আরও ১৫টি সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্প স্থাপনের কাজ চলছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ৩ দশমিক ১৭ মেগাওয়াট। তবে মিনি গ্রিডের উৎপাদন তিন মেগাওয়াট না পেরোতেই অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
×