ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ উন্নতি প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় হতাশাজনক;###;দশ পিলারে উন্নতির জন্য দশটি বিশেষ কমিটি করা হবে

ডুইং বিজনেসে ৮ ধাপ অগ্রগতি

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

ডুইং বিজনেসে ৮ ধাপ অগ্রগতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশ ৮ ধাপ এগিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস-২০২০’ এ বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৮তম। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের এমন অগ্রগতির বিষয়ে বলছে, দেশটিতে ব্যবসা শুরু করতে আগের চেয়ে খরচ অনেক কমে গেছে। রাজধানী শহর থেকে শুরু করে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে এখন আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। উদ্যোক্তারাও এখন সহজে বিভিন্ন মাধ্যমে ঋণ পাচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর এবার ৪৫, যা গতবছর ছিল ৪১ দশমিক ৯৭। এই উন্নতির পরও ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ছাড়া সব দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভাল করেছে ভারত। ভারত এ সূচকে ১৪ ধাপ এগিয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেলেও এই ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে এখন ওই দেশটির চেয়ে অনেক পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় পাকিস্তানের নাম রয়েছে তালিকায় ১০৮ নম্বরে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। বাংলাদেশের এবারের অগ্রগতির কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যবসা শুরু করতে আগের চেয়ে খরচ কমেছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকাসহ শহর এলাকায় বিদ্যুতপ্রাপ্তি সহজ হয়েছে। মূলত, একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ ১০টি মাপকাঠিতে পরিমাপ করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তথ্য। ১০টি মাপকাঠি হলো, নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুত সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন এবং দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন। বিশ্বব্যাংক বলছে, ১০ মাপকাঠির মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশের স্কোর গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে ঋণ পাওয়ার সুযোগে স্কোর বেড়েছে ২০ শতাংশ পয়েন্ট। ৪টি মাপকাঠিতে এবারের স্কোর গতবারের সমান। শুধু অবনতি হয়েছে দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে। ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি বিদ্যুত সংযোগ ও ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ফি কমানো হয়েছে এবং ডিজিটাল সনদে মাশুল উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকায় নতুন বিদ্যুত সংযোগের ফি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিদ্যুত উপদেষ্টা ও প্রধান বৈদ্যুতিক পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স পাওয়ার সময়ও কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় ৭২তম, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ১১৯তম, ব্যবসা শুরুর খরচের দিক থেকে ১৩১তম, কর প্রদানে ১৫১তম। এছাড়া নির্মাণ অনুমতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম, বিদ্যুত সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ১৭৬তম এবং জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১৮৪তম অবস্থানে। এসব কারণে তালিকাভুক্ত ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৮তম। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। আগামীতে তা এক শ’র ঘরে নেমে আসবে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে এ অবস্থান দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে আসা হবে। তবে এ উন্নতি প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় হতাশাজনক। সবচেয়ে ভাল করা দশটি দেশের তালিকায় আছে ভারত, সৌদি আরব, নাইজিরিয়া এমনকি পাকিস্তানও। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জানান, প্রশাসনের নিম্নœপর্যায়ে সংস্কার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। এ সময় কর্মকর্তারা জানান, দশ পিলারে উন্নতির জন্য দশটি বিশেষ কমিটি করা হবে। বাড়ানো হবে সরকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়। তারা আরও জানান, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী প্রতিবেদনগুলোতে। তবে অগ্রগতি হলেও ১৭৩তম অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তান আছে বাংলাদেশের পরে। প্রতিবেশী ভারত ১৪ ধাপ উন্নতি করে এখন তালিকায় ৬৩তম অবস্থানে। গতবছর দেশটির অবস্থান ছিল ৭৭তম। ২০১৭ সালে এই তালিকায় ভারত ছিল ১০০ নম্বরে। ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে প্রতিবেদনের শীর্ষস্থানটির দখল নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর এবং হংকং। ব্যবসা সহজ করার সূচকে ভারতসহ দশটি দেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মূলত ব্যবসায় শুরু করার সময় অনুকূল পরিবেশ, সহজে ঋণ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতপ্রাপ্তি ছাড়াও কর প্রদান এবং চুক্তির বাস্তবায়ন ইত্যাদি সূচকে ১৯০টি দেশকে নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ভারত এগিয়েছে ১৪ ধাপ ॥ ভারতে ব্যবসা শুরু করা এবং নির্বিঘেœ চালিয়ে নেয়া বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেকটাই সহজ হয়েছে। ফলে বিশ্ব ব্যাংকের দেয়া ১৯০টি দেশের তালিকায় ভারত গত এক বছরে ১৪ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে। ভারত বর্তমানে এই তালিকার ৬৩তম স্থানে রয়েছে। আর এ বিষয়ে গত এক বছরে সবচেয়ে অগ্রগতি ঘটেছে সৌদি আরবে। এই তালিকায় পাকিস্তানের নাম রয়েছে তালিকায় ১০৮ নম্বরে। ওই তালিকায় দেখা গেছে, ভারতে ব্যবসার পরিবেশ আগের চেয়ে আরও সহজ হয়েছে। তবে এতেও সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ তিনি ভারতকে এই তালিকায় প্রথম ৫০টি দেশের মধ্যে আনতে চান। বিশ্ব ব্যাংকের গতবছরের রিপোর্টে ১৯০টি দেশের তালিকায় ভারত ছিল ৭৭ নম্বরে। তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালে এই তালিকায় ভারত ছিল ১০০ নম্বরে। ব্যবসা করাটা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে, এই নিরিখে বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ভারতসহ দশটি দেশের অর্থনীতির প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ বিষয়ে ভারতসহ ওই দশটি দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে। এই দেশগুলোর তালিকায় ভারত রয়েছে নবম অবস্থানে। সৌদি আরবের নামটি রয়েছে সবার শীর্ষে। এই তালিকায় প্রথম ছয়টি দেশের মধ্যেই রয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচীরও প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই কর্মসূচী উল্লেখযোগ্যভাবে ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ টানতে পেরেছে। বেসরকারী উদ্যোগকেও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে মোদি সরকার জানিয়েছিল, পাঁচবছরের মধ্যে এই তালিকায় ভারতকে ৫০টি দেশের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কর দেয়ার নিয়মকানুন শিথিল করে, সীমান্ত বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে ভারত সেই লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পেরেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
×