ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যার বিচার প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

নুসরাত হত্যার বিচার প্রক্রিয়া

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি তারই অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেই চক্ষুশূল হয়েছিলেন আসামিদের। সাত মাস আগে সারাদেশে আলোড়ন তোলা সেই হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতের মায়ের করা মামলার পর থেকেই ক্ষিপ্ত হন আসামিরা। এই প্রথম কোন মামলার সচিত্র (স্কেচ) প্রতিবেদন দেয়া হয়। অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর আসামিদের কয়েকজন কারাগারে তার সঙ্গে দুই দফা দেখা করতে গিয়ে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ পেয়েই মাঠে নামে। আর এই পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগতরা, যাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ছাত্র, অধ্যক্ষের আত্মীয় এমনকি নুসরাতের সহপাঠীও ছিলেন। পিবিআইয়ের ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে অধ্যক্ষ সিরাজকে এক নম্বর আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এই ১৬ জনেরই ফাঁসির আদেশ দেন ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, পহেলা এপ্রিল শাহাদাত হোসেন শামীম (নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন), নূরউদ্দিন (অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ), ইমরান, হাফেজ আব্দুল কাদের (নুসরাতের ভাই নোমানের বন্ধু) ও ইফতেখার উদ্দিন রানা জেলখানায় গিয়ে সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। তখনই অধ্যক্ষ তার মুক্তির চেষ্টা এবং মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে বলেন। হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর পরও মামলা না তোলায় আসামিরা আলোচনা করে ‘প্রয়োজনে যে কোন কিছু’ করার পরিকল্পনা করে। ৩ এপ্রিল শামীম, নূর উদ্দিন, আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজন কারাগারে গিয়ে আবার অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সিরাজ তখন নুসরাতকে ভয়ভীতি দেখানো এবং প্রয়োজনে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেন আর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর নির্দেশ দেন। সেদিন বিকালে মাদ্রাসার পাশে একটি টিনশেড কক্ষে শামীম, নূর উদ্দিন, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (নুসরাতের সহপাঠী), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি ও নুসরাতের সহপাঠী) ও কামরুন নাহার মনি (আসামি শামীমের দূর সম্পর্কের ভাগ্নি, নুসরাতের সহপাঠী) ও আরও কয়েকজন বৈঠক করে। নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ওই বৈঠকেই। অধ্যক্ষ সিরাজের মুক্তির দাবিতে পালিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে মদদ দেয়া সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম হত্যাকা- ঘটাতে শামীমকে ১০ হাজার টাকা দেন। সেখান থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কামরুন নাহার মনি দুটি বোরকা ও চার জোড়া হাতমোজা কেনেন। ৪ এপ্রিল রাতে মাদ্রাসার ছাত্র হোস্টেলে বসে আবারও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন আসামিরা। পরদিন ভূইয়া বাজার থেকে এক লিটার কেরোসিন কিনে নিজের কাছে রেখে দেন শামীম। ৬ এপ্রিল সকাল ৭টার পর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে যান শামীম, নূর উদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল কাদের। সকাল সোয়া ৯টার মধ্যে আসামিরা পরিকল্পনা অনুযায়ী যার যার অবস্থানে চলে যান। শামীম পলিথিনে করে আনা কেরোসিন অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাচের গ্লাসে নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেন। আর মনির কেনা দুটি এবং বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি বোরকা এবং চার জোড়া হাতমোজা নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলায় রাখা হয়। শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের সাড়ে ৯টার দিকে বোরখা ও হাতমোজা পরে তৃতীয় তলায় অবস্থান নেন। নুসরাত পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সুলতানা পপি তাকে মিথ্যা কথা বলে ছাদে নিয়ে আসেন। নুসরাতকে বলা হয়, তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদে কারা যেন মারছে। নুসরাত ছাদে যাওয়ার সময় পপি তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। নুসরাত তাতে রাজি না হয়ে ছাদে উঠে যান। মনি, শামীম, জোবায়ের ও জাবেদও সে সময় নুসরাতের পিছু পিছু ছাদে যান। ছাদে তারা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন এবং কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। নুসরাত স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে শামীম বাঁ হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পেছনে নিয়ে আসেন। পপি তখন নুসরাতের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দেন। জোবায়ের ওড়না দুই ভাগ করে ফেলেন। পপি ও মনি ওড়নার একাংশ দিয়ে নুসরাতের হাত পিছন দিকে বেঁধে ফেলেন। অন্য অংশ দিয়ে নুসরাতের পা বেঁধে ফেলেন জোবায়ের। জাবেদ পায়ে গিট দেন। সবাই মিলে নুসরাতকে ছাদের ওপর শুইয়ে ফেলেন। শাহাদাত তখন নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখেন। নুসরাতের বুকের ওপর চেপে ধরেন মনি। পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। এক আসামি নুসরাতের হাত-মুখ, আরেকজন তার পা, অন্যজন তার বুকে চেপে বসে। এক আসামি পলিথিন থেকে কেরোসিন গ্লাসে ঢেলে নুসরাতের গায়ে ছিটিয়ে দেন, আরেক আসামি ম্যাচের কাঠি জ্বেলে নুসরাতের গায়ে আগুন দেন এক আসামি নুসরাতের হাত-মুখ, আরেকজন তার পা, অন্যজন তার বুকে চেপে বসে। এক আসামি পলিথিন থেকে কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের গায়ে ছিটিয়ে দেয়, শামীমের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ জ্বেলে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন ধরানোর পর প্রথমে ছাদ থেকে নামেন জোবায়ের। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী মনি ‘চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে পপিকে নিচে নিয়ে যান। তারা নিচে নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে যান। জাবেদ ও শামীম সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় গিয়ে বোরকা খুলে ফেলেন। তারপর জাবেদও পরীক্ষার হলে ঢুকে যান। শামীম তার বোরকা ফেলে দেন মাদ্রাসার পুকুরে। জোবায়ের মাদ্রাসার মূল গেট দিয়ে বের হয়ে যান এবং বোরকা ও হাতমোজা ফেলে দেন সোনাগাজী কলেজের ডাঙ্গি খালে। নুসরাত ছাদ থেকে নেমে এলে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য ও প্রহরী তার গায়ের আগুন নেভান। পুলিশ তাকে দ্রুত একটি অটোরিক্সায় তুলে দেন। নুসরাত ছাদ থেকে নেমে এলে কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য ও প্রহরী তার গায়ের আগুন নেভান। পুলিশ তাকে দ্রুত একটি অটোরিক্সায় তুলে দেন। হত্যাকা- শেষ করে আসামিরা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন। এদিকে অগ্নিদগ্ধ নুসরাত নিচে নেমে এলে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ও নাইটগার্ড তার গায়ের আগুন নেভায়। নূর উদ্দিনও ওই সময় নুসরাতের গায়ে পানি দেন। একনজরে ঘটনাপ্রবাহ বছরের নৃশংস ঘটনাগুলোর একটি ফেনীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা ও তার সহযোগীরা এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। নুসরাতকে হত্যার সাড়ে ছয় মাসের মাথায় এই মামলার রায় ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার। নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআইয়ের) ফেনীর পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন আদালতে। মামলার মোট ৯২ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৮৭ জন। আদালতের কাছে আসামিরা নিজেদের দাবি করেছেন নির্দোষ হিসেবে। মামলায় গত ১০ জুন অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর মাত্র ৬১ কার্যদিবসে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় এবং ৬২ কার্যদিবসে রায় প্রদান করা হয়। ১৭ মার্চ : মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা নিজ রুমে ডেকে নিয়ে নুসরাতকে যৌন হয়রানি করে। ২৭ মার্চ: অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন নুসরাত। এদিনই সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৮ মার্চ: সিরাজ উদদৌলার সহযোগীরা তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। ৬ এপ্রিল: সকালে নুসরাত আরবী প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায়। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে কয়েকজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ্যাম্বুলেন্সে নুসরাতকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য আনার পথে রাফি পরিবারের কাছে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে। ৭ এপ্রিল: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ গামন্ত লাল সেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নুসরাতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার। এদিকে মাদ্রাসার গবর্নিং কমিটির সভায় বরখাস্ত করা হয় অধ্যক্ষ সিরাজকে। ৮ এপ্রিল: দুপুর ১২টার দিকে নুসরাতকে বার্ন ইউনিটের লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এরই মধ্যে হত্যাচেষ্টার অপরাধে আটক করা হয় নুরুল আমিন, আশরাফ, সাইফুল, আরিফসহ সাত জনকে। আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত চার জনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই নোমান। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ এপ্রিল: অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। মামলা স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরোতে (পিবিআই)। এদিন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। ১১ এপ্রিল: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নুসরাত হত্যা মামলাটি প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী আল হেলাল একাডেমির পাশে সামাজিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় নুসরাতকে। ১২ এপ্রিল: নুসরাতের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে সারাদেশে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। হত্যাকা-ের ধিক্কার জানিয়ে জোরালো হয় বিচারের দাবি। ১৩ এপ্রিল: পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা জেল থেকে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৫ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান নুসরাতের বাবা একেএম মুসা ও মা শিরিনা আক্তারসহ দুই ভাই। প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের পরিবারের প্রতি সান্ত¦না ও গভীর সমবেদনা জানান। আশ্বাস দেন, অপরাধীরা কেউ ছাড় পাবে না। এদিন আইন বহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা করে তার ভিডিও প্রচারের অভিযোগে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৮ এপ্রিল: নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হাফেজ আবদুল কাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও ঘটনার লোহর্ষক বর্ণনা দেয়। ২০ এপ্রিল: আসামি জাবেদ ও মনি ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জাবেদ বলে, সে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢালে। এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মনি জানায়, নুসরাতকে ছাদে জোর করে শোয়ানোর পর তাকে চেপে ধরেছিল সে। এছাড়া জাবেদ পরিচয় গোপন করার জন্য বোরকা পড়েছিল। ২৯ এপ্রিল: হত্যা মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাদ্রাসার, শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন পিবিআই সদস্যরা। ৪ মে: পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, হত্যা মামলার তদন্ত মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। কিছু কাগজপত্র তেরি করে এ মাসেই (মে) আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে। ৯ মে: নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২৭ মে তার বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। ২৯ মে: সিরাজউদদৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাণদ-ের সুপারিশ করে মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) জমা দেয় পিবিআই। ৭২২ পৃষ্ঠার চার্জশীটের পাশাপাশি পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা পর্যন্ত ধাপগুলোর সচিত্র প্রতিবেদনও পিবিআই প্রকাশ করে। ৩০ মে: নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। ১০ জুন: ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চার্জশীট আমলে নেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৬ জুন: দায়িত্বহীন আচরণের জন্য দোষী সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ৩০ জুলাই: ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য দেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসাসহ চার জন। এদিন জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পিপি হাফেজ আহাম্মদ ও বাদীর আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, নুসরাত হত্যা মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর: হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অধ্যক্ষ সিরাজসহ অভিযুক্ত ১৬ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। ৩০ সেপ্টেম্বর: মামলায় দু’পক্ষের যুক্তিতর্কে শুনানি শেষে এদিন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
×