ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এমডি নিয়োগে তিন মাস সময় পেল ডিএসই

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

এমডি নিয়োগে তিন মাস সময় পেল ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের জন্য আরও ৩ মাস সময় পেল সংস্থাটি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সংস্থাটির এমডি নিয়োগে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময় ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারী। আলোচ্য সময়ের মধ্যে এমডি নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এর আগে দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি খুঁজে পায়নি ডিএসই। অন্যদিকে ডিএসইর এমডি পদে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে বেতনভাতা থেকে যাবতীয় বাড়ানোর সুপারিশ করতে যাচ্ছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। তবে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে সার্ভিস রুলস না থাকার কারণে নিজেদের বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ডিএসইর এমডি নিয়োগের পত্রিকায় দুই দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ডিএসই। দুই দফায় আবেদন থেকে ৭ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এসব প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩ জনের নাম চূড়ান্ত করে পর্ষদে পাঠায় নিয়োগ সংক্রান্ত নমিনেশন এ্যান্ড রিমুনারেশন কমিটি (এনআরসি)। কিন্তু এ তিনজন প্রার্থী থেকে এমডি নিয়োগে সক্ষম হয়নি পর্ষদ। আর এজন্য এ পদে নিয়োগের জন্য ৩ মাস সময়ের জন্য বিএসইসিতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই পর্ষদ। এ সম্পর্কে ডিএসই’র একজন পরিচালক বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের দুই দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য লোক না পাওয়ায় ৩ মাস সময় চেয়েছে ডিএসই। সে অনুযায়ী বিএসইসি তা অনুমোদন করেছে। এ সময়ের মধ্যে এমডি পদে যোগ্য লোক খুঁজবে ডিএসই। সম্প্রতি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ডিএসইর নতুন এমডিকে আকর্ষণীয় বেতনভাতাদি প্রদান করার পক্ষপাতি। ডিএসইর এমডির বেতন মাসিক ৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা। একটির পরিবর্তে দুইটি গাড়ির সুপারিশ করা হচ্ছে। এছাড়া বছরের দুই ঈদে আরও ২০ লাখ টাকা বোনাস প্রদানের পক্ষে সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে তা এখনও অনুমোদন করা হয়নি। জানা গেছে, ডিএসই গত দুই মাসের অধিক সময় ধরেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খুঁজছে। এমডি নিয়োগে যোগ্য লোকের খোঁজে ডিএসই দুইবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এমডি পদে যোগ্য লোকদের ডিএসই গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার শেষ সময় বেঁধে দেয়। এর আগে গত ৭ আগস্ট প্রথমবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ডিএসই। তাতে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। সাক্ষাতকারের পর ৩ জন প্রার্থীর নাম ডিএসই পরিচালনা পর্ষদে পাঠায় এনআরসি। কিন্তু পর্ষদ এসব প্রার্থী থেকে এমডি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়নি। তাই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএসইসিতে আবেদন করেছে ডিএসই। স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর। তবে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তিনি আরও এক মেয়াদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। তাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মাজেদুর রহমান কে পুনর্নিয়োগের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করে ডিএসই পর্ষদ। কিন্তু বিএসইসি তা নাকচ করে দেয়ায় এমডি খুঁজতে হচ্ছে ডিএসইকে। সার্ভিস রুলস না থাকায় কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ ॥ সুনিদিষ্ট সার্ভিস রুলস না থাকার কারণে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কেপিআইভিত্তিক মূল্যায়নে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীই ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে কেউ কেউ আবার এই সুবিধার সুযোগও নিচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগেরই এই পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মরতদের পদোন্নতি ও সুযোগ সুবিধা প্রদান না করায় ডিএসইতে এখন চলছে চাপা ক্ষোভ। কর্মরতদের পদোন্নতি না দিয়ে উল্টো নতুন করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও) নিয়োগ নিয়ে ডিএসইর কর্মরতরা বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ডিএসইর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের কর্মরতদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না দিয়ে ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া উর্ধতন কর্মকর্তারা প্রয়োজনে নিজেদের মতো করে বেতন ভাতাদি বাড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কোন সুবিধা বাড়ানো হয়নি। অন্যদিকে উর্ধতনর গাড়ি সুবিধা ও বেতন ইনক্রিমেন্ট বাড়িয়েছেন। উল্টো নতুন করে এমটিও নিয়োগ দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ডিএসইর বেশিরভাগ সুযোগ সুবিধা ডিজিএম পর্যায় পর্যন্ত ভোগ করে থাকে। এর বাইরে পদোন্নতি, বেতন ভাতাদি বাড়ে অনেক ধীর গতিতে। এইসব সুবিধার কোন নিয়ম নীতি মানা হয় না। এমটিও নিয়ে পুরনোদের হতাশা ॥ গতবছর এমটিও (ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় খরচ হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ করেও নিয়োগ দেয়া কাউকে হয়নি। এই বছর একই প্রক্রিয়ায় আবারও খরচ করা হয় প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো, ১২ জন এমটিও চূড়ান্ত করে ডাকা হলেও জয়েন করে মাত্র ৯ জন এমটিও। চাকরিতে আসার এক মাসের ১ মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছে নতুন একজন। এত আয়োজন করে দুই দফা টাকা খরচ করে উচ্চ বেতন ও পদে নতুন নিয়োগ দিয়ে তাহলে ডিএসইর লাভ কি হল? পুরনো যোগ্য কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, প্রমোশন, অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রেখে নতুনদের নিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন ডিএসইর কর্মচারীরা। ডিএসইর সিএফও আব্দুল মতিন পাটওয়ারী কর্তৃক চালু করা কেপিআই (কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর) ভিত্তিক মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতি ও কোটাভিত্তিক ইনক্রিমেন্ট প্রমোশন এর ফলে পিছিয়ে পড়ছে কর্মচারীরা।
×