ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভৈরবে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক বিক্রি

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

ভৈরবে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ২৩ অক্টোবর ॥ ভৈরবে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক কারবারিরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন থানা এলাকার সাধারণ মানুষ। মাদক আটকের নামে সোর্সরাই মূলত মাদক কারবারি করে। কোন মাদক কারবারি আটক হলে আটক মাদক সোর্সরাই স্থানীয় মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। আবার সোর্সরাই মাদক কারবারি পরিচালনা করে। তারা থানার ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে। কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৩ থানার মধ্যে ভৈরব একটি সোনার হরিণ থানা। মাদকের ট্রানজিট রোড। নৌপথ, সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এবং ভারতীয় সীমান্ত কাছে হওয়ায় সহজেই মাদক মজুদ হয় ভৈরবে। পরে ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাচার হয়। মাদক আটক ও বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করার সুযোগ থাকায় ভৈরব থানায় কোন পুলিশ সদস্য যোগদান করলে বদলি হলেও যেতে চান না। ২/৩ এমন কি ৫ বছর এ থানায় কর্মরত আছেন এমন পুলিশ সদস্য রয়েছে। তারা সোর্স নিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়ান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সচেতন এলাকাবাসী বলেন, কিছু কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যরাই সোর্স দিয়ে ইয়াবার ব্যবসা করে থাকেন। আবার কখনও কখনও পয়সাওয়ালা লোকদের টার্গেট করে অসাধু পুলিশ সদস্যরাই সোর্স দিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাঁসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জানা যায়, শুধু ভৈরব থানা এলাকায় রয়েছে ২০/২৫ জন পুলিশের কথিত সোর্স। শহরের চ-িবের এলাকার সোর্স মুশিদ পুলিশের সঙ্গে থেকে অন্য মাদক কারবারিকে ধরিয়ে দেয়। বিনিময়ে তার মাদক কারবারিকে নিরাপদ রাখছে। তার স্ত্রী নাদিরা বেগম পলতাকান্দা এলাকায় প্রকাশ্য বিক্রি করছে ইয়াবা। তার মামা চ-িবের এলাকার হেলু মিয়া মাদকের পাইকারি ডিলার। মুশিদ পুলিশের সোর্স হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা কলতে চায় না। গেল ১৮ অক্টোবর মুশিদকে পুলিশ থানা হাজতে ৩ ঘণ্টা আটক রেখে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ছেড়ে দেয়। ২১ অক্টোবর ২০০ ইয়াবাসহ আবার তাকে আটক করে। পরে ক্ষমতাশীন দলের এক নেতার তদবিরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সোর্স মুর্শিদ, তার স্ত্রী নাদিরা ও মামা হেলুর বিরুদ্ধে ডজন খানেক মাদকের মামলা রয়েছে । সোর্স আজিজ এক সময় র‌্যাবের সোর্সের কাজ করত। এখন নিজেই মাদক কারবারি পরিচালনা করছে। আমলাপাড়ার সোর্স কাসেম, ফারুক, নিউ টাউন এলাকার রজত, হৃদয়, দুর্জয় মোড় এলাকার রশিদ, পঞ্চবটি পুকুর পাড় এলাকার সোহেল, সানু, কমলপুরের আলমগীর, রতন, ফেরদৌসসহ ২০/২৫ সোর্স দিনরাত দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তারা পুলিশের সঙ্গে থেকে মাদক কারবারিদের আটক করে। আটককৃত মাদক আবার মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ সকল সোর্সরা নিরীহ লোকজনকে টার্গেট করে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। তুলে দেয়ার কিছুক্ষণ পর তারাই আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে রাখছেন। তথ্যানুসারে, গত এপ্রিল মাসে নাটাল মোড় এলাকায় বাস তল্লাশির নামে সরাইল উপজেলার এক হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বর্ণকার ও ব্যবসায়ীকে গাঁজা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে সোর্স সোহেল নিজেই ফেঁসে যায়। পড়ে ভৈরব পৌর সভার মেয়রের কাছে পুলিশ সদস্য ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। সোর্স কাসেম পুকুরপাড় এলাকায় এক রিক্সা চালকের ঘরে মাদক রাখতে গিয়ে গণধোলাই খায়। আমলাপাড়ার সোর্স ফারুক ১শ’ বোতল ফেনসিডিল মামলায় বর্তমানে কিশোরগঞ্জ কারাগারে। অভিযোগ রয়েছে, পঞ্চবটি পুকুরপাড় এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী রহিমার বাসায় সোর্স কাসেম মাদক সেবনের আসর বসায়। এ ছাড়া ভৈরব থানার সীমানা প্রচীর সংলগ্ন স্থানে রয়েছে সোর্সদের গোপন আস্তানা। সেখানে মদ, জুয়া ও নারী নিয়ে ফুর্তি করা হয়। অনেক সময় মাদকসহ আটক করে থানায় না নিয়ে সেই গোপন আস্তানায় মাদক কারবারিদের আটক রাখা হয়। পরে টাকা নিয়ে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রতিদিন ইয়াবার আসর ও জুয়া খেলার আসর জমানো হয়। সন্ধার পর থেকে শুরু হওয়া এ আসর চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সূত্রমতে, মাদক কারবারিদের মাদকসহ পুলিশ গ্রেফতার করে অপর মাদক কারবারিদের ধরিয়ে দিতে ছেড়ে দিয়ে আসে। এ ছাড় দেয়াতে মাদক কারবারিরা বনে যায় পুলিশের সোর্স। নিজের মাদক কারবারি ঠিক রাখতে থানা এলাকার সাধারণ জনতাকে অযথা হয়রানি করে আসছে এই সোর্সরা। ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজুয়ান দিপু বলেন, সোর্স মুশিদকে ডেকে আনা হয়েছে, তার সঙ্গে কোন মাদক পাওয়া যায়নি। যদি মাদক পাওয়া যায় তবে ছাড় পাবে না। এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি মুখলেসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সোর্স ইস্যুতে তিনি বিব্রত থাকায় তিনি সাংবাদিকদেরই থানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন, তাই বক্তব্য নেয়া যায়নি। এদিকে, পুলিশ কোন অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিলে সোর্সদের মাধ্যমে অপরাধীরা খবর পেয়ে যায়। এমনকি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করে ওই মাদক কারবারিদের নিরাপদে রাখছে সোর্সরা । ভৈরব শহরে মাদক কারবারি নির্মূল করতে প্রধানমন্ত্রীসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
×