ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যযুগীয় বর্বরতা

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

মধ্যযুগীয় বর্বরতা

রক্তবিন্দু থেকে যে সন্তানের জন্ম সে সন্তানই যদি বাবা ও চাচাদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে খুন হয় তবে এর চেয়ে জঘন্যতম এবং নিষ্ঠুর ব্যাপার এ পৃথিবীতে আর কি হতে পারে? সুনামগঞ্জের দিরাই থানাধীন শিশু তুহিন-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে নিজ সন্তানকে এভাবে আপন হাতে খুন করতে পারে? সন্তানের প্রতি এ ধরনের জঘন্যতম আচরণ ইসলাম ধর্মের আগমনের পূর্বে আরব দেশে প্রচলিত ছিল। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে তদানীন্তন আরবরা শিশুটিকে জীবন্ত কবর দিত। আমাদের দেশেও এখন মধ্যযুগীয় বর্বরতা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এটা কোন ধরনের সভ্যতা? স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার জন্যই আবরারকে অকালে প্রাণ বিসর্জন করতে হলো। শিশুসন্তানকে যে বাবা নিজ হাতে খুন করে তার কি বাবা হওয়ার কোন অধিকার আছে? এ ধরনের পাপিষ্ঠদের দষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে সমাজে এ রকম নিষ্ঠুরতা বাড়তেই থাকবে। তাই আমাদের উচিত সমাজে বসবাসকারী এ ধরনের অমানুষদের খুঁজে বের করে এনে এদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া। এখন ভেবে দেখতে হবে কেন এ ধরনের নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটছে। মানুষের ব্যক্তি স্বার্থ, অহেতুক লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ মানুষকে এই নিষ্ঠুর কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেবল যে পিতা-মাতাই শিশুকে অবহেলা করছে শুধু তাই নয়-শিশুরাও পিতা-মাতাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করছে না। সমাজে এখন একটি শিশুর কাছে একটি মোবাইল ফোন তার পিতা-মাতার চেয়েও অধিক প্রিয়। মোবাইলের মাধ্যমে সারাদিন সে অনাকাক্সিক্ষত ছবি দেখে, বাধা দিলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ঐশী নামক একটি মেয়ে তার বাবা-মাকে মেরেই ফেলল। শুধু বাবা-মাকেই দোষ দিলেই চলবে না, শিশুদেরও সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মুঘল সা¤্রাজ্যেও প্রতিষ্ঠাতা স¤্রাট বাবর নিজ পুত্র হূমায়নের রোগমুক্তির জন্য বিধাতার কাছে দোয়া করেন বিধাতা যেন তার নিজের জীবনের বিনিময়ে পুত্রের জীবন রক্ষা করেন। সৃষ্টিকর্তা তার প্রার্থনা কবুল করেন। সন্তানের সেবায় কিভাবে মা রোগমুক্ত হয়েছিলেন সে উদাহরণ বিদ্যাসাগর রেখে গেছেন। বায়েজিদ বোস্তামি ঘুমন্ত মায়ের শিয়রের পাশে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমান সমাজে পিতা-মাতার সেবাযতœ সন্তান ঠিকমতো করছে না- পিতা-মাতাও সন্তানকে ঠিকমতো আদরযতœ করছে না। এ সবের হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এসব অপরাধের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করে কঠিন শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মক্তব-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রবর্তন করতে হবে যাতে শিশুমনে নৈতিক শিক্ষা বদ্ধমূল হয়। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে সমাজ থেকে এই জঘন্য অপরাধ দূর হবে বলে আশা করা যায়। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×