ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাঙালী চেতনার কাব্যিক রূপকার কবি শামসুর রাহমান

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

বাঙালী চেতনার কাব্যিক রূপকার কবি শামসুর রাহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবি শামসুর রাহমানকে বাঙালীর চেতনার কাব্যিক রূপকার হিসেবে বর্ণনা করে বক্তারা বলেছেন, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন কবির সৃষ্টি বেঁচে থাকবে। আনন্দ বেদনায় ভালবাসায় তার কবিতা পাঠ করবে বাঙালী। শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করবে তাকে। শামসুর রাহমানের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। শামসুর রাহমান মিলনায়তনে বুধবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ। জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা ও জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। এদিন আলোচনা স্মৃতিচারণ ছাড়াও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রয়াত কবিকে উৎসর্গ করে কবিতা পাঠ করেন সমকালীন কবিরা। কবি পরিবারের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শামসুর রাহমানের পুত্র ফাইয়াজ রাহমান, পুত্রবধূ টিয়া রাহমান ও পৌত্রী নয়না রাহমান। আলোচনা পর্বে আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কথা বলার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন শামসুর রাহমান। প্রগতিশীলদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেছিলেন তিনি। সংগ্রামী চেতনার কবি লিখেছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লিখেছেন। তিনি এক মুহূর্তের জন্য তার কবি সত্ত্বাকে বিক্রি করেননি। পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের জন্য এটা শিক্ষনীয়। তিনি বলেন, বাঙালী পাঠক ভালবাসার সঙ্গে শামসুর রাহমানের কবিতা পড়েন। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন শামসুর রাহমান থাকবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলাম তখন কবি ছিলেন একাডেমির সভাপতি। তখন তাকে কাছে থেকে চেনার জানার অনেক সুযোগ আমার হয়েছিল। মানুষ হিসেবে শামসুর রাহমান ছিলেন অদ্বিতীয়। এখনও মনে পড়ে, একবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদী হামলা হলো। সে সময় সরকারের প্রশাসন এমনকি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী দুর্বল অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শামসুর রাহমান সেদিন আমার সামনে এই একাডেমিতে বসেই স্পষ্ট ভাষায় এ অবস্থানের সমালোচনা করেছিলেন। এ ধরনের যে কোন সমস্যার সঙ্কটে সাহসী ভূমিকা নিতে কবিকে দেখেছেন বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সুলিখিত একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন আবুল হাসনাত। শামসুর রাহমানের কাল এবং কবিতার আলোকে নিজের বক্তব্য সাজান তিনি। নাতিদীর্ঘ বক্তৃৃতায় মিষ্টভাষী সাহিত্যিক বলেন, ষাটের দশক থেকে মানুষের সংগ্রামী চেতনা যে পরিপ্রেক্ষিতে ঋদ্ধ হয়েছে, তারই যেন আশ্চর্য রূপকার হয়েছিলেন শামসুর রাহমান। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা অনুভূতিপ্রবণ শিল্পিত মানুষ হিসেবে কবিকে বিচলিত করেছিল। যুদ্ধ জয়ের অনিবার্য প্রেরণা এবং তাড়না কবিকে অসাধারণ পঙ্ক্তি রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। আজকের বিরুদ্ধ সময়ে শামসুর রাহমানের অভাব বোধ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সমাজ জীবনে যে সঙ্কট, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের যে উত্থান ও আস্ফালনÑ এই সময়ে তার অভাব আমরা খুব অনুভব করি। আমরা এই ধরনের সঙ্কটকালে তাকে বিনিদ্র রাত্রীযাপন অস্থির হয়েও প্রতিবাদী হতে দেখেছি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা সাহিত্যের অমর কবি শামসুর রাহমান। বাঙালীর চেতনার কাব্যিক রূপকার তিনি। আনন্দ বেদনায় ভালবাসায় আমরা তাকে স্মরণ করি। তিনি বলেন, শামসুর রাহমানের কবিতা লালন করেছে সমাজ সত্ত্বার সামগ্রিক বিবর্তন। ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলাকে যেভাবে নাড়া দিয়েছিল, বদলে দিয়েছিল জাতি চরিত্র, সেই প্রেক্ষাপট আমরা শামসুর রাহমানের কবিতায় দেখতে পাই। বাহান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত কবির যত গ্রন্থ বের হয়েছে সেসবে বিভিন্ন মাত্রায় তাকে পাওয়া যায়। এই পাওয়ার ভেতরে আমাদের যে যাত্রা তা বাংলা কবিতার একটি নবযাত্রা। তিনি বলেন, শিল্পমান অক্ষুণœ রেখেও কবিতাকে যে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়Ñ সে সত্য শামসুর রাহমানের কাব্যিক করতলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। উদ্ভট উটের পিঠে স্বদেশকে চলতে দেখেও তিনিই সেই কবিÑ যিনি বলতে পারেন ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে।’ আলোচনা শেষে কবিকে নিবেদিত কবিতাপাঠে অংশ নেন রবিউল হুসাইন, আনোয়ারা সৈয়দ হক, কাজী রোজী, লিলি হক, শিহাব সরকার, ফারুক মাহমুদ, হাসান হাফিজ, রেজাউদ্দিন স্টালিন, নাহার ফরিদ খান প্রমুখ। প্রয়াত কবির কবিতা আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম, লায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী, ফয়জুল আলম পাপ্পু এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু। শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, রফিকুল আলম এবং আবিদা রহমান সেতু। কবির কবিতা অবলম্বনে নৃত্য পরিবেশন করেন সাহিদা রহমান সুরভি। এর আগে শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষের সামনে কবির প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয়।
×