ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আটক দুই শিক্ষার্থী

জাবিতে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে শিবির সংশ্লিষ্টতা

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

জাবিতে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে শিবির সংশ্লিষ্টতা

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের পেছনে জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল কর্মসূচী চলাকালে এক শিবির নেতা ও তার এক সহযোগীকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী থেকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের আশুলিয়া থানাতে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃতরা হলেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪১ ব্যাচের ছাত্র সাদ শরীফ এবং প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ৪২ ব্যাচের ছাত্র নুরুল আমিন। তাদের দু’জনেরই বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের পূর্ব নির্ধারিত মশাল মিছিল কর্মসূচী চলাকালে তাদের আটক করা হয়েছে। কর্মসূচীকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘তারা যে শিবির করে তার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাদ শরীফ শিবির করার কথা স্বীকার করেছে, অপরজন তার সহযোগী।’ তিনি আরও বলেন, মশাল মিছিলে শিবির ও ছাত্রদল অংশ নেবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সারাদিন ক্যাম্পাস পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। মিছিল চৌরঙ্গী এলে তাদের দুজনকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে মোটরসাইকেলসহ আটক করি। আটকের পর তাদের মোবাইল ও হোয়াটসএ্যাপে শিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। চলমান আন্দোলনে কারা টাকা দেয় তার প্রমাণ মোবাইলে পাওয়া গেছে। গতমাসে তাদের কাছ থেকে এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া কোন কোন শিক্ষক টাকা দেয় সে তথ্যও তাদের কাছে পাওয়া গেছে। বিদেশ থেকে তাদের সঙ্গে কারা কারা যোগাযোগ করে তারও প্রমাণ মিলেছে। ভোলার ঘটনা নিয়ে কিভাবে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করা যায় তারও কথোপকথন তাদের কাছে আছে। এছাড়া তাদের কাছে সেক্টর কমান্ডারসহ কোন কোন সাথী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারও একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তারা সাভারের একটি কোচিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের আটকের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল বলেন, তারা হেলমেট পরে মিছিলের পেছনে আসছিল। তারা চৌরঙ্গী পৌঁছলে গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের তথ্য দেয় এবং তাদের আটক করতে বলা হয়। আটক করে আমরা তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাদ শরীফ বলেন, ‘আমি কোন সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। চৌরঙ্গী এলাকা থেকে কয়েকজন শিক্ষক আমাদের আটক করেন। ক্যাম্পাসের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আন্দোলনকারীগণ কর্তৃক পালিত দিনের বেলার বিভিন্ন কর্মসূচীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা গেলেও সন্ধ্যা বা রাতের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। আন্দোলন সংগঠকগণ এ কাজে শিবির এবং বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে জমায়েত করেন তা ২২ অক্টোবর মশাল মিছিলে যোগ দিতে আসা শিবির নেতা ধরা পড়ায় তার প্রমাণ মিলেছে।’ আশুলিয়া থানার ইন্টিলিজেন্স অফিসার তসলিম উদ্দিন জানান, ‘আটককৃতদের মধ্যে থেকে সাদ শরীফকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিবিরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। অপরজনের বিরুদ্ধে তেমন কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’ তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন আমাদের নৈতিক আন্দোলন বানচাল করার জন্য নতুন নাটক সাজাচ্ছে।
×