ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা কাওসারকে অব্যাহতি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা কাওসারকে অব্যাহতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যুবলীগ চেয়ারম্যানের মতো একই পরিণতি হলো ক্যাসিনোকা-ে নাম আসা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওসারের। তাকেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিকেও তার পদ থেকে নেত্রী অব্যাহতি দিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি, বিষয়টি তাকে জানিয়েছি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে নিজের দলেই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেছেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে অন্য কোন প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। সে কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একজন জনপ্রিয় নেতা। ১৯৭৫ সালের পর তার মতো জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী নেতা বাংলাদেশে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানে প্রভাবশালী কেউ যদি জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। বুধবার রাজধানীর ধানম-িতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি আরও বলেন, ‘মূল দল বা সহযোগী সংগঠন কিংবা এমপি যে যত প্রভাবশালী নেতাই হোক না কেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তারা সবাই নজরদারিতে আছেন।’ একাদশ নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাশেদ খান মেনন তার বক্তব্য থেকে অলরেডি ইউ-টার্ন নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার বক্তব্য খ-িত আকারে গণমাধ্যমে এসেছে। রাশেদ খান মেননের তার দলে কী অবস্থান এবং চলমান পরিস্থিতিতে তার অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা আমার সমীচীন নয়। তার পরিণতি ভবিষ্যতেই জানা যাবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৪ দলের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে, তারা আমাকে বলেছেন, রাশেদ খান মেননের বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। আরও আলাপ-আলোচনা করে তার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। একজন ব্যক্তির জন্য একটা এ্যালায়েন্স (জোট) ভাঙ্গন হতে পারে না বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। মহানগরের দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য, নিজেদের সমর্থক বাড়ানোর জন্য দলে অনুপ্রবেশ করাবেন না। দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল। আমরা আওয়ামী লীগকে একটি নতুন মডেলে সাজাতে যাচ্ছি। নেত্রী আমাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কোন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলে স্থান দেয়া যাবে না। যদি কোন বিতর্কিত ব্যক্তি দলে অনুপ্রবেশ করে থাকে, তাহলে আপনারা তাকে দল থেকে বের করে দিন। আওয়ামী লীগে লোকের অভাব নেই। বিতর্কিত কোন ব্যক্তিকে দলে দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দলের মধ্য থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। দলের মধ্যে থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ও টেন্ডারবাজি সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে এখন আন্দোলন করার মতো কোন ইস্যু তারা পাবে না। হালে পানি পাবে না, জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। তাই তারা এখন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের মধ্যেও তারা ইস্যু খোঁজার চেষ্টা করেছে। তাদের সে অপচেষ্টাও মাঠে মারা গেছে। এখন তারা বলছে, ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেই তারা চাঙ্গা হয়ে যাবে। আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, যারা তাদের নেত্রীর কারাবরণের পর পাঁচ হাজার লোক নিয়ে একটা আন্দোলন করতে পারলো না, ড. কামাল হোসেন সাহেব দেখা করলেই কীভাবে চাঙ্গা হয়ে যাবে? এটা আসলে হাস্যকর। ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, থানা, উপজেলা ইউনিয়নের কমিটিগুলোর সম্মেলন করা হচ্ছে। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আগে সহযোগী সংগঠন এবং তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন করে দলকে আরও শক্তিশালী এবং আগাছামুক্ত করা হবে, সেটি শুরুও হয়ে গেছে। তাই সম্মেলনের বিষয়ে আপনারা প্রস্তুতি নিতে থাকেন, আমি নেত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আপনাদের জানিয়ে দেব। এখানে একটা বিষয় আছে, নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের প্রথম দিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা করছে। কাজেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুর রহমান সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় আর বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি, আসলামুল হক আসলাম এমপি, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সম্মেলন শেরে বাংলানগরে বাণিজ্যমেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্থান ঠিক করে দিয়েছেন বলে সভায় জানানো হয়। কেন মোল্লা কাওসারের এই পরিণতি ॥ ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর কারবারের সঙ্গে যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা কাওসারেরও নাম এসেছে সংবাদমাধ্যমে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ওই ক্লাবে অভিযান চালিয়ে মদ, নগদ টাকা এবং ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। কথিত আছে মোল্লা কাওসার ছিলেন এ ক্লাবের সভাপতি। এসব অভিযোগেই যুবলীগের চেয়ারম্যানের পর মোল্লা কাউসারকেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল ইতোমধ্যে মোল্লা মোঃ আবু কাওসার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছে। মোল্লা মোঃ আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ ২০১২ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটিই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। সংগঠন থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মোল্লা মোঃ আবু কাউছার সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি। তার কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। আর রাজনীতি করতে গিয়ে ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। শুনলাম সংগঠন থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, আর অব্যাহতি দেয়া হলে আমার কী-বা করার থাকতে পারে।
×