ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়ান আব্রাজ

সেরা সময়ে বেলিন্ডা বেনচিচ

প্রকাশিত: ১২:১২, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

সেরা সময়ে বেলিন্ডা বেনচিচ

বেলিন্ডা বেনচিচের মুখেই ফুটল শিরোপার হাসি। রবিবার ক্রেমলিন কাপের চ্যাম্পিয়ন হলেন সুইজারল্যান্ডের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। দুর্দান্ত খেলেই এই টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন তিনি। ফাইনাল জয়ের পথে রাশিয়ার এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভাকে পরাজিত করেন তিনি। ক্রেমলিন কাপের ফাইনালে সুইজারল্যান্ডের বেলিন্ডা বেনচিচ ৩-৬, ৬-১ এবং ৬-১ গেমে পরাজিত করেন রাশিয়ার এনাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভাকে। সেই সঙ্গে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপার দেখা পেলেন ২২ বছরের এই তরুণী। গত কয়েক মৌসুম ধরেই বিশ্ব টেনিসের আলোচিত মুখ বেলিন্ডা বেনচিচ। ২০১৬ সালে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এর পরের দুই মৌসুমে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি সুইস তারকা। তবে এ মৌসুমের শুরুতেই আলো ছড়ান বেলিন্ডা বেনচিচ। ফেব্রুয়ারিতে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিতেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের পর প্রথম কোন ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সুইস টেনিসের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে বেলিন্ডা বেনচিচ ৬-৩, ১-৬ এবং ৬-২ গেমে পরাজিত করেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পেত্রা কেভিতোভাকে। সেই শিরোপা জয়ের পথে বেনচিচ হারিয়েছিলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে থাকা চার খেলোয়াড়কে। কেভিতোভাকে হারিয়ে একটা ইতিহাসও গড়েছিলেন বেনচিচ। এ যাবতকালের ইতিহাসে সুইজারল্যান্ডের মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তার আগে এই রেকর্ড গড়েছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি মার্টিনা হিঙ্গিস। তাও আবার ২০০১ সালে। দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপের পর আর কোন শিরোপা জিততে পারছিলেন না বেনচিচ। তবে তার পারফর্মেন্স ছিল মনোমুগ্ধকর। ফাইনাল খেলেছেন একটি টুর্নামেন্টের। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। মায়োর্কা ওপেনের শিরোপার লড়াইয়ে সোফিয়া কেনিনের কাছে হেরে যান তিনি। এই সময়ে সেমিফাইনাল খেলেছেন আরও চার টুর্নামেন্টের। ইন্ডিয়ান ওয়েলস, স্যামসাং ওপেন, মাদ্রিদ ওপেন এবং ইউএস ওপেনের শেষ চারের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের সেমিতে বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কুর কাছে হেরে যান সুইস তারকা। শেষ পর্যন্ত এই কানাডিয়ান তারকাই বাজিমাত করেন। সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে জিতে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা। এছাড়া, আরও তিন টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছেন বেনচিচ। সেগুলো হলো মিয়ামি, চার্লস্টন এবং স্টুটগার্ট ওপেন। দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপের পর ক্রেমলিন কাপের ফাইনালে উঠেই শিরোপার স্বাদ পান বেনচিচ। এই জয়ের পর তাই দারুণ খুশি সুইস তারকা। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার অনুভূতিটা অবিশ্বাস্য। বলে বুঝানো কঠিন। এখনও কল্পনা করতে পারছি না আমি।’ ক্রেমলিনের আগে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে অবস্থান করছিলেন বেনচিচ। এর ফলে শীর্ষ আটে পৌঁছে মৌসুমের শেষ বড় টুর্নামেন্ট ডব্লিউটিএ ফাইনালসে খেলতে হলে তাকে এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে হবে। সুইস তারকারও এটা ছিল মূল লক্ষ্য। আর সেমিফাইনালে জিতেই অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে শেনঝেনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডব্লিউটিএ ফাইনালসে জায়গা করে নেন তিনি। সেই টিকিট কেটেই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছিলেন বেলিন্ডা বেনচিচ। ফাইনাল ম্যাচের আগে তাই কোন ধরনের চাপ ছিল না তার। ফাইনাল জয়ের পর সেটা নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন বেনচিচ। এ প্রসঙ্গে টুর্নামেন্টের তৃতীয় বাছাই বলেন, ‘ফাইনালের আগে আমার কোন ধরনের চাপ ছিল না। কেননা, গতকালই আমরা দারুণ খুশি হয়েছিলাম। শেনঝেনের টিকিট কাটার উৎসবও করেছি আমরা।’ এই টুর্নামেন্টে অবশ্য খেলার কথা ছিল না সুইস তারকার। শেষ মুহূর্তে ওয়াইল্ডকার্ড পেয়ে খেলতে নামেন ক্রেমলিন কাপে। টুর্নামেন্টে নেমেই অবশ্য বাজিমাত করেন তিনি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বিশে থাকা সাবেক তিন খেলোয়াড়কে পরাজিত করেই শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। তারা হলেন, এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা, ক্রিস্টিনা মাদেনোভিচ এবং ক্রিস্টেন ফ্লিপকেন্স। বেনচিচের বর্তমান বয়স মাত্র ২২। এই বয়সেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় অবস্থান তার। ক্রেমলিন কাপে পাভলিউচেঙ্কোভাকে হারিয়ে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। সব মিলিয়ে এটা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ শিরোপা। এই ট্রফি জয়ের সৌজন্যে দ্বিতীয়বারের মতো ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং সপ্তম স্থানে উঠে এসেছেন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যারিয়ারের প্রথমবার সর্বোচ্চ সাত নম্বরে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন এই সুইস তারকা। তবে এবারের অর্জনটা বেনচিচের জন্য দারুণ গর্বের। খেলতে পারছেন ডব্লিউটিএ ফাইনালসেও। তাই তো সুইস তারকা বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমার হৃদয়ে এটা আলাদা একটা স্থান দখল করে নেবে। কেননা, এর ফলে আমি ডব্লিউটিএ ফাইনালসে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করেছি। এর ফলে আজকের চেয়ে গতকালও আমার আবেগটা কাজ করেছে বেশি। শীর্ষ আটে পৌঁছে আমি অনেক বেশি স্বস্তি অনুভব করেছিলাম।’ বেনচিচের মতো বছরের শেষটা রাঙিয়ে নিলেন জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোও। একই দিনে যে লুক্সেমবার্গ ওপেনের শিরোপা জিতেছেন তিনি। রবিবার অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে তিনি সরাসরি সেটে পরাজিত করেন জুলিয়া জরজেসকে। ৬-৪ এবং ৬-১ গেমে। এর ফলে দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম কোন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হলেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের সাবেক চ্যাম্পয়ন। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন তিনি। এর ফলে দারুণ খুশি লাটভিয়ার এই তারকা খেলোয়াড়। ম্যাচের শেষে ওস্টাপেঙ্কো বলেন, ‘অবশ্যই এটা দারুণ ব্যাপার। বিশেষ করে শিরোপা জিতে মৌসুম শেষ করতে পারাটা সবসময়ই দুর্দান্ত। এই সপ্তাহটা ব্যাপক উপভোগ করেছি। আমি মনে করি ফাইনালেও খুব ভাল খেলেছি। সত্যি বলতে, শেষটা এভাবেই চেয়েছিলাম।
×