ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনটা বাংলাদেশেই পড়ে থাকে লি টাকের

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

মনটা বাংলাদেশেই পড়ে থাকে লি টাকের

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বাংলাদেশে এখন মুড়ি-মুড়কির মতো বিদেশী ফুটবলার খেলে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক তো বলেই দিয়েছেন, এখানে সবাই আসেন সুদিন শেষ করে। সেরা ফর্ম থাকলে হয়তো আসতেন না। এমন মন্দা হওয়ায় মাঝে মধ্যে কোয়ালিটি ফুটবলারও আসেন। এই তালিকার ওপরের সারিতেই আছেন এ্যান্ড্রু লি টাক। ইংলিশ এই মিডফিল্ডার মাত্র এক মৌসুম বাংলাদেশে খেলেই সবার মন জয় করে নেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ঢাকা আবাহনীর চোধ ধাঁধানো সাফল্যে লি টাক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আকাশী-নীল জার্সিধারীরা লীগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পেশাদার লীগে নিজে ১০ গোল করা ছাড়াও সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও কিছু গোল। সবমিলিয়ে তার চোখ ধাঁধানো ফুটবলশৈলী সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু মাত্র এক মৌসুম খেলে ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ার ক্লাব নেগেরি সেমবিলানে পাড়ি জমান। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকে আছেন বর্তমান ক্লাব টেরেঙ্গানুতে। এখনও ক্লাবটির হয়ে জিততে পারেননি ট্রফি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে এসেছেন লি। অল্প সময়ের জন্য খেলে গেলেও বাংলাদেশকে ভীষণ ভাল লেগেছে লি টাকের। তাইতো টেরেঙ্গানুর অধিনায়ক ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে ফের লাল-সবুজের দেশে আসতে চান। সাক্ষাতকারে তিনি জানান, বাংলাদেশে খেলতে আসার কথা শোনার পর থেকেই উদগ্রীব ছিলেন। কখন আসবেন এ জন্য তর সইছিল না। অবশেষে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে এসে বেজায় খুশি তিনি। ঢাকা আবাহনীতে খেলার স্মৃতি রোমান্থন করে লি টাক বলেন, বাংলাদেশে অল্প সময় খেলে গেলেও মনটা এখানেই পড়ে থাকে। কারণ আমি ওই সময়ে সবার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। আমি সবাইকে মিস করি। অনেক সুখকর স্মৃতি আছে যা আমি এখন অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করি। প্রিয় সেই ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে হতো লি টাককে। কিন্তু ঢাকা আবাহনী নাম প্রত্যাহার করায় সেটা হচ্ছে না। বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেই হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা আবাহনী থাকলে খুব ভাল হতো। টুর্নামেন্টটা আরও আকর্ষণীয় হতো। কেন তারা খেলছে না এটা বোধগম্য হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে খেলতে পারলে সেটা অসাধারণ এক স্মৃতি হয়ে থাকতো। ঢাকা আবাহনীকে ভুলতে না পারলেও বর্তমান ক্লাবে সুখে আছেন বলেই জানিয়েছেন লি টাক। বাংলাদেশের ফুটবলের সাম্প্রতিক সাফল্যে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জামাল-ইয়াসিনদের পারফর্মেন্সে উচ্ছ্বসিত লি টাক বলেন, বাংলাদেশের খেলা দেখা হয়নি। কিন্তু জেনেছি দলটা অনেক ভাল করছে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে খুব ভাল খেলেছে। বাংলাদেশের খেলার অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও অগ্রগতি হবে বলে আমার বিশ্বাস। আবারও যদি বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয় কী করবেন? এ প্রসঙ্গে লি টাক বলেন, জানি না কি হবে। এখন আমি মালয়েশিয়াতে ভাল আছি। সেখানে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। যদি কখনও সুযোগ হয় তাহলে হয়তো আসতেও পারি। তবে এই মুহূর্তে আমি শুধু এই আসর (শেখ কামাল) নিয়েই ভাবছি। কিভাবে সবার সেরা হওয়া যায় সেই চেষ্টাই করছি। টেরেঙ্গানু এফসি গেল মাসেই তাদের জাতীয় লীগ শেষ করেছে। মালয়েশিয়ান সুপার লীগে সপ্তম হয়ে শেষ করা দলটি খেলে বলের দখল ধরে। চট্টগ্রামে অনুশীলন ও মঙ্গলবার চেন্নাই সিটির বিরুদ্ধে ম্যাচে তার নমুনা দেখা গেল। ১৮-১৯ পাসের লম্বা সময় পর সঙ্গীর কাছে বলের দখল হারাচ্ছিলেন দলের খেলোয়াড়রা। অধিনায়ক লি টাক জানিয়েছেন ‘টিকিটাকা’ খেলেই অভ্যস্ত তার দল। বাংলাদেশে আগের ফর্মটা ধরে রাখার প্রত্যয় জানিয়ে লি টাক বলেন, সেবার বাংলাদেশে এসে সফল হয়েছিলাম, ভাল খেলেছিলাম। এবারও সে নৈপুণ্যটা দেখাতে চাই। নিজেকে একটা মানে দাঁড় করানোটাই আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য। এবার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে দল ভিন্ন হলেও লক্ষ্যটা একই আছে, জানালেন লি টাক। ৩১ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় বলেন, ২০১৭-১৮ মৌসুমে এখানে এসে শিরোপা জিতেছিলাম। আমি এবার একই লক্ষ্য নিয়ে ফিরে এসেছি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ জেতা ছাড়া দেশে ফিরতে চাই না আমরা। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েও কথা বলেন লি টাক। তার মতে, লাল-সবুজের দেশ সঠিক মানুষটিকেই কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে, ‘জেমি ডে অনেক ভাল করছে। সে খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিশে গেছে। একটা দলের ভাল করার জন্য এটা খুব জরুরী। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ আরও ভাল করবে’। ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জামাল, সাদদের ম্যাচ প্রসঙ্গে টেরেঙ্গানু অধিনায়ক বলেন, ম্যাচটি আমি দেখিনি। কিন্তু জেনেছি বাংলাদেশ অনেক ভাল খেলেছে। এটা খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তারই ফসল। এদেশের ফুটবলের সম্ভাবনা আছে; সেটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
×