ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রোটিয়াদের হোয়াইটওয়াশে কোহলিদের ইতিহাস

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

প্রোটিয়াদের হোয়াইটওয়াশে কোহলিদের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করল ভারত। বিশাখাত্তম ও পুনেতে দাপুটে জয়ে সিরিজ আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। রাঁচিতেও প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। মঙ্গলবার চতুর্থদিনে প্রতিপক্ষের বাকি ২ উইকেট তুলে নিতে স্বাগতিকদের ২ ওভারের বেশি লাগেনি। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামা ফ্যাফ ডুপ্লেসিসের দল ৪৮ ওভারে অলআউট ১৩৩ রানে। ইনিংস ও ২০২ রানের বিশাল জয়ে উৎসবে মেতে ওঠে কোহলি এ্যান্ড কোং। প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়ারা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬২ রানে। আর ৯ উইকেটে ৪৯৭ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ক্যারিয়ারসেরা ২১২ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন রোহিত শর্মা। ১৩২.২৫ গড়ে ৫২৯ রান। সেঞ্চুরি ৩টি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে জীবনে প্রথম ওপেনিংয়ে নেমে সিরিজসেরার ট্রফিও বগলদাবা করেছেন তুখোড় এই উইলোবাজ। অধিনায়ক কোহলি বলেছেন, এই সাফল্য কঠোর পরিশ্রমের ফসল। আর প্রতিপক্ষ দলপতি ডুপ্লেসিস স্বীকার করেছেন, ভারতীয়রা তাদের মনোবল পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে। ৮ উইকেটে ১৩২ রান নিয়ে মঙ্গলবার চতুর্থদিনের খেলা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের শুরুর ওভারে পেসার মোহাম্মদ শামিকে ভালভাবেই মোকাবেলা করেন থিউনিস ডি ব্রুইন এবং এনরিচ নর্টজ। কিন্তু অভিষিক্ত স্পিনার শাহবাজ নাদিমের পরের ওভারের শেষ দুই বলে প্রথমে ডি ব্রুইন (৩০) এবং পরে লুঙ্গি এনগিদি (০) আউট হলে ১৩৩-এ অলআউট প্রোটিয়ারা কেবল ইনিংস ও ২০২ রানের বড় ব্যবধানে হারই মানেনি সেই সঙ্গে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন ডুপ্লেসিসরা। অনেকটা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। সেই ১৯৯২-১৯৯৩ থেকে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে দেশে কিংবা বিদেশে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কখনই এমন ক্লিন হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি ভারত। ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে ঘরের মাঠে ৪ টেস্টের সিরিজ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। সুপার কোহলির হাত ধরে এবার ৩ টেস্টেই ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ দেখল তারা। বিশাখাত্তম এবং পুনেতে আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২০৩ রান এবং ইনিংস ও ১৩৭ রানের জয় পায় নাম্বার ওয়ান ভারত। ঘরের মাঠে এ নিয়ে টানা রেকর্ড ১১ সিরিজ জিতল ভারত। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অধিনায়ক কোহলির রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ হলো। অতীতে ভারতের বাদবাকি অধিনায়করা মিলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ২৯ টেস্টে তুলে নিয়েছেন ৭ জয়। অন্যদিকে অধিনায়ক কোহলি একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১০ টেস্টে তুলে নিলেন সপ্তম জয়। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিস যত দ্রুত সম্ভব এ সিরিজ ভুলে যেতে চাইবেন। তাদের টেস্ট ইতিহাসে এ সিরিজে সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করেছেন ওপেনাররা। আর টপঅর্ডার চতুর্থ সর্বনিম্ন পারফর্মেন্স। পুনে টেস্টে ফলোঅন করে হারের পর এবার রাঁচি টেস্টেও একই পথে হেঁটে হারল সফরকারী দল। দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বশেষ টানা দুই টেস্টে ফলোঅন করেছে ১৭ বছর আগে ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ভারত এমনিতে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং এই সিরিজ মিলে পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই জয় তুলে নেয়ায় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে তাদের পয়েন্ট এখন ২৪০। সমান ৬০ পয়েন্ট নিয়ে পরের দুটি স্থানে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। টেস্টে এমন লজ্জার হোয়াইটওয়াশের মধ্য দিয়ে আপাতত ভারত সফর শেষ করল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে তিন ম্যাচের টি২০ প্রোটিয়ারা ড্র করে ১-১এ। আগামী বছর মার্চে অনুষ্ঠিত হবে তিন ওয়ানডের সিরিজ। স্কোর ॥ ভারত প্রথম ইনিংস- ৪৯৭/৯ ডিক্লেঃ (১১৬.৩; ওভার; আগারওয়াল ১০, রোহিত ২১২, পুজারা ০, কোহলি ১২, রাহানে ১১৫, জাদেজা ৫১, ঋদ্ধিমান সাহা ২৪, অশ্বিন ১৪, উমেশ যাদব ৩১, শাহবাজ নাদিম ১*, শামি ১০*; রাবাদা ৩/৮৫, এনগিদি ০/৮৩, নর্টজ ১/৭৯, জর্জ লিন্ড ৪/১৩৩)। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস- ১৬২/১০ (৫৬.২ ওভার; এলগার ০, ডি কক ৪, হামজা ৬২, ডুপ্লেসিস ১, বাভুমা ৩২, ক্লাসেন ৬, লিন্ডে ৩৭, পিট ৪; শামি ২/২২, উমেশ ৩/৪০, নাদিম ২/২২, জাদেজা ২/১৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস- ১৩৩/১০ ফলোঅন (৪৮ ওভার; ডি কক ৫, এলগার ১৬ আহত অবসর, হামজা ০, ডুপ্লেসিস ৪, বাভুমা ০, ক্লাসেন ৫, লিন্ডে ২৭, পিট ২৩, ডি ব্রুইন ৩০, রাবাদা ১২, নর্টজ ৫*; শামি ৩/১০, উমেশ ২/৩৫, নাদিম ২/১৮)। ফল ॥ ভারত ইনিংস ও ২০২ রানে জয়ী। ম্যাচ ও সিরিজসেরা ॥ রোহিত শর্মা (ভারত)। সিরিজ ॥ তিন টেস্ট ভারত ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
×