ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবি বিবেচনায় ছিল বললেন বিসিবি সভাপতি পাপন, আলোচনার পথ খোলা

সাকিবদের ধর্মঘটে কঠোর অবস্থানে বিসিবি

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

সাকিবদের ধর্মঘটে কঠোর অবস্থানে বিসিবি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সোমবার হুট করে ৬০ জনেরও বেশি জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটাররা ধর্মঘটের ডাক দেন। পারিশ্রমিক, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরে সাংবাদিকদের তারা জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দাবি না মানা পর্যন্ত জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প বর্জন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও চলমান জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) খেলা থেকে বিরত থাকবেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টি নিয়ে জরুরী সভায় বসেন পরিচালকদের নিয়ে। এরপর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিসিবির কঠোর অবস্থানের কথাই জানিয়ে দিয়েছেন। তার দাবি যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং আরও প্রক্রিয়াধীন আছে, ক্রিকেটারদের দাবিগুলোও বিসিবির পরিকল্পনাধীন আছে। তাই হুট করে দাবি পেশ না করেই খেলা বন্ধ করাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় জানান, ক্রিকেটাররা না খেললে না খেলবে, এতে করে ক্ষতিটা তাদেরই হবে। আর আগেভাগে দাবির কথা না জানিয়ে এমন অবস্থান নেয়াতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়েছে বলে দাবি তার। তবে আলোচনার পথ খোলা রাখছেন তিনি। পাপন আশাবাদ জানিয়েছেন অনুশীলন ক্যাম্পও হবে এবং ভারত সফরেও সঠিক সময়ে যাবে বাংলাদেশ দল। সোমবার ক্রিকেটাররা মিরপুর একাডেমি ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে তাদের ১১ দফা দাবি পেশ করেন। তাদের এই প্রক্রিয়ায় দারুণভাবে নারাজ হয়েছেন বিসিবি সভাপতি পাপন। তিনি পরিচালকদের নিয়ে জরুরী সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেটারদের সম্পর্ক। সবসময় আমি খোঁজ-খবর রাখি। তারা তো একবারও এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে বলেনি। তারা মৌখিকভাবে যখন যা চেয়েছে আমরা তো তা দিয়েছি। দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে, সেটা তো আগে জানাতে হবে- তারপর না মানলে তারা ধর্মঘট করত। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তারা আমাকে কিংবা বিসিবিতে কিছু জানায়নি। আমাদের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, তারা ফোন ধরেনি আবার যোগাযোগও করেনি। দাবি পেশ করার আগেই খেলা বন্ধ করা তো কোন পদ্ধতি হতে পারে না। এখন তারা খেলতে চাইলে খেলবে না চাইলে না খেলবে। জোর করে তো খেলাতে পারব না। এতে ক্ষতিটা তাদেরই হবে।’ পাপন জানিয়েছেন ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকায়। এতে করে বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তিনি আসন্ন ভারত সফর নিয়ে বলেন, ‘আমি অবশ্যই আশাকরি ক্যাম্প চলবে। ভারত সিরিজ হবে। কারণ আমার এখনও বিশ্বাস, বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই খেলতে চায়। তারা ক্রিকেটের উন্নয়ন চায়। কয়েকটা টাকা, পাঁচ হাজার টাকার জন্য দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ করে দেবে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’ পাপন আহ্বান জানিয়েছেন যে, বিসিবির দুয়ার ক্রিকেটারদের জন্য খোলা আছে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার। এ পরিস্থিতিতে দুইপক্ষের দ্বিমুখী অবস্থানে সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া নিয়ে সন্দেহ জাগছেই। সভাপতি বলেন, ‘খেলা হবে না। আমি আগে জানতে চাই, দেখতে চাই, কে কে খেলতে যায়, কে কে খেলতে যায় না। ক্যাম্পে কেউ যাবে কি যাবে না।’ ক্রিকেটারদের উত্থাপন করা দাবিগুলো নিয়ে বিসিবির অবস্থান নিয়ে পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা দেন পাপন। সেই উত্তরগুলোয় তার দাবি ছিল অধিকাংশই হয়ে আছে আর ক্রিকেটাররা সরাসরি এসে চাইলেই তা বাস্তবায়ন হয়ে যায়। এবার কেন না চেয়ে ধর্মঘটে গিয়েছে ক্রিকেটাররা তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। দাবিগুলো নিয়ে তিনি বলেন- দাবি-১ উত্তর ॥ কোয়াবের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ চেয়েছেন ক্রিকেটাররা। পাপন জানান, এখানে বোর্ডের হস্তক্ষেপ না থাকায় দাবিটি হাস্যকর। দাবি-২ উত্তর ॥ প্রিমিয়ার লীগ আগের মতো করতে হবে, অর্থাৎ প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধতির বাতিল চেয়েছেন ক্রিকেটাররা। পাপন বলেন, ইতোমধ্যেই সেসব নিয়ে সিসিডিএমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিসিবি সার্বিকভাবে ক্রিকেটারদের পাওনা নিশ্চিত করতেই ডিপিএলেও গ্রেড সিস্টেম করে দিয়েছিল যাতে সবার অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। তিনি দাবি করেন আগে ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগতভাবে চুক্তি করে টাকা না পেলেও ২০১৩ সালের পর থেকে সবাই ক্লাবের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাচ্ছে। দাবি-৩ উত্তর ॥ ক্রিকেটারদের দাবি বিপিএলে আবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ফেরাতে হবে। পাপন বলেন, ‘আমি তো এটা আগেই ঘোষণা করেছি যে এ বছর বিশেষ বিপিএল হবে এবং পরের বছর যথারীতি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অধীনে হবে। তাই আমি ঘোষণা দেয়ার পরও এই দাবি হাস্যকর।’ ক্রিকেটারদের দাবি এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাম বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘আইকনদের অনেক বেশি তাই তাদেরটা কিছু কমানোর আলোচনা হয়েছে। তবে তা চূড়ান্ত হয়নি। বাকিদেরটা তো আমরা আগের মতোই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ দাবি-৪ উত্তর ॥ ক্রিকেটারদের দাবি। প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ ফি ১ লাখ, বেতন বাড়াতে হবে, ১২ মাস কোচ ফিজিও দিতে হবে, প্রতি বিভাগে প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করতে হবে। পাপন বলেছেন,‘পর্যায়ক্রমে এটি আগের তুলনায় বেড়েছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এরপরও তুষার ইমরান, আব্দুর রাজ্জাকের মতো খেলোয়াড়দের অতীত অবদান মাথায় রেখে আমরা অনেক বেশি পারিশ্রমিক দিচ্ছি। তারা তো আর জাতীয় দলে খেলছে না। আর প্রতি জেলায় আমরা কোচ দিয়েছি। জিম তৈরি করেছি।’ দাবি-৫ উত্তর ॥ দাবি ছিল, ভালমানের বল দিতে হবে, ডিএ ১৫০০ টাকায় কিছু হয় না, যাতায়াতে বিমান ভাড়া দিতে হবে, হোটেল ভাল হতে হবে। পাপন বলেন, ‘ক্রিকেটারদের থাকার ব্যবস্থা বিভাগীয় দল করবে। আর ভাতা ১০০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০০ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনে আরও বাড়বে।’ দাবি-৬ উত্তর ॥ দাবি ছিল, চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা ও বেতন বাড়ানোর। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘আমাদের ৮০ জন চুক্তিতে আছে, জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি ১৫ জন। অনেক দেশে ১২ জন থাকেন চুক্তিতে। যারা পারফর্ম করতে পারে না তাদের আমরা চুক্তিতে রেখে বেতন দেব কেন? এখন কম হওয়াতে বরং প্রতিযোগিতা বাড়বে চুক্তিতে আসার জন্য।’ দাবি-৭ উত্তর ॥ দাবি ছিল দেশী সব স্টাফদের বেতন বাড়াতে হবে, কোচ থেকে গ্রাউন্ডস, আম্পায়ার সবার বেতন বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগেই আম্পায়ারদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ দাবি-৮ উত্তর ॥ দাবি ছিল ঘরোয়া ওয়ানডে বাড়তে হবে, বিপিএলের আগে আরেকটি টি২০ হতে হবে। পাপন বলেন, ‘আমরা তো বছরে চারটিও ওয়ানডে আসর করতে সমস্যা নেই। তবে জাতীয় দলের সবাইকে তাহলে খেলতে হবে। তারা বলুক কখন খেলতে চায়। আর গত বছরও ডিপিএলে একটা টি২০ আয়োজন হয়েছে।’ দাবি-৯ উত্তর ॥ ঘরোয়া ক্যালেন্ডার নির্ধারিত সময়ে করার দাবির উত্তরে পাপন বলেন, ‘ক্রিকেটাররাই বলুক কখন খেলতে চায়। সবাইকে খেলতে হবে।’ দাবি-১০ উত্তর ॥ ঘরোয়া লীগের পাওনা টাকা সময়ের মধ্যে দেয়ার দাবি করেছেন ক্রিকেটাররা। পাপন বলেন, ‘এবার শুধু একটি ক্লাব (ব্রাদার্স ইউনিয়ন) ছাড়া সবাই পুরোপুরি টাকা দিয়েছে। তারাও বলেছে আগামী ডিপিএলের আগেই টাকা দিয়ে দেবে। গত কয়েক বছর ধরে বিসিবির আওতাধীন না থাকলেও ক্লাবগুলোকে চাপ দিয়ে ক্রিকেটারদের টাকা দিতে বাধ্য করেছে।’ দাবি-১১ উত্তর ॥ ক্রিকেটারদের দাবি ছিল বিদেশী ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ দুটার বেশি খেলা যাবে না এমন নিয়ম তুলে দিতে হবে। ফরহাদ রেজা দাবিটি উত্থাপন করেছিলেন। এ বিষয়ে পাপন বলেন, ‘যে কখনও বাইরের লীগে খেলার ডাকই পায় না তার এমন দাবি খুবই হাস্যকর। আগে তো নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হবে তারপর দাবি জানাতে হবে।’
×