ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডস ॥ দুই বাংলার তারকারা একই মঞ্চে

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডস ॥ দুই বাংলার তারকারা একই মঞ্চে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্র দুনিয়ার মানুষদের সম্মানিত করতে টিএম ফিল্মস নিবেদিত ‘ভারত বাংলাদেশ ফিল্ম এ্যাওয়ার্ডস ২০১৯’ (বিবিএফএ) প্রদানের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মুভিওয়ার্ল্ডের তারকারা হাজির হলেন এক মঞ্চে। দুই বাংলার চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের এক মঞ্চে সম্মানিত করার এমন আয়োজন বাংলাদেশে এই প্রথম। রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি নবরাত্রি হল-৪ এ অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে ওপার বাংলার রনজিৎ মল্লিক ও প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে হালের ক্রেজ জিৎ, আবীর চ্যাটার্জি, পরমব্রত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পাওলি দাম, নিকিতা গান্ধি, অনির্বাণ, কৌশিক গাঙ্গুলি, দেবজ্যোতি মিশ্র, ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্তসহ এপার বাংলার জয়া আহসান, পরীমনি, পূজা চেরি, নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মীম, মৌসুমী, ওমর সানী, ইমন, নীরব প্রমুখের উপস্থিতি শিল্পের রসে ভিজিয়েছে সমগ্র আয়োজনকে। দুই দেশের জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই আসরের পর্দা উঠে। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রজেক্টরে প্রদর্শন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আরও উপস্থিত ছিলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফেরদাউসুল হাসান ও বিবিএফএ এর সমন্বয়ক তপন রায়, পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা গৌতম ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, টিএম ফিল্মসের চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নী । তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদের বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা সংস্কৃতি জলবায়ু ও কিন্তু একই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে। এ কারণেই আজকের আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন সংস্কৃতি চর্চা চলচ্চিত্র নির্মাণের চর্চার দিক থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও বেগবান করবে। চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, চলচ্চিত্র চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। আমার বিশ্বাস এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমাদের সম্পর্ক আরেক নতুন এক মাত্রা উন্মোচন করবে।’ কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চর্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প দুবছরে বলা যায়। পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চর্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে কি? এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে উঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোন বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে। আর সেই প্রত্যাশাই রইল।’ পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার দারুণ এক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। আমাদের দুই বাংলার ইতিহাস ও সম্প্রীতি এ আয়োজনের মধ্য আরও দৃঢ় হবে। এই ঢাকা শহরে ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। যেখানে সত্যজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। এই শহরেই আবার তেমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে জুরিবোর্ডের সদস্য বাংলাদেশের আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম খসরু ও হাসিবুর রেজা কল্লোল ও অন্যদিকে, ভারতের গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তীর হাতে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট প্রদান করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আলোচনা পরবর্তীতে শুরু হয় পুরস্কার প্রদান পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম ও ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন যথাক্রমে গৌতম ঘোষ ও প্রসেনজিৎ। আজীবন সম্মাননায় ভূষিত আনোয়ারা বেগম বলেন, “এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। দুই বাংলা মিলিয়ে এত এত তারকা থাকতে আমাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হবে এটা আমি কখনও ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘বাইশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাদেরই এ আয়োজন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজন যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে। যৌথভাবে সিনেমা নির্মাণের যে প্রয়াস চলছে, তা যেন আরও বেগবান হয়। ভারত-বাংলাদেশ এ্যাওয়ার্ড জিতলেন যারা ॥ বিএফএফ এ্যাওয়ার্ডে সেরা চলচ্চিত্র দেবী-নগরকীর্তন, সেরা সেরা অভিনয়শিল্পী জয়া-পাওলি, সিয়াম-প্রসেনজিত। বেস্ট লিড এ্যাক্ট্রেস বাংলাদেশের জয়া আহসান ও ভারতের পাওলি দাম। বেস্ট এ্যাক্টর লিড রোল বাংলাদেশের সিয়াম ও ভারতের প্রসেনজিৎ। পপুলার এ্যাক্টর অব দ্য ইয়ার বাংলাদেশের শাকিব খান ও ভারতের জিৎ। অনুষ্ঠানে এছাড়াও স্ক্রিপ্ট রাইটার পুরস্কারে ভূষিত হন বাংলাদেশের ফেরারী ফরহাদ ও ভারতের পক্ষে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফারে পুরস্কার পান বাংলাদেশের কামরুল হাসান খসরু ও ভারতের সৃজিত মুখার্জী। ভিডিও এডিটর হিসেবে বাংলাদেশের তৌহিদ হোসেন চৌধুরী ও ভারতের সংলাপ ভৌমিক। বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর বাংলাদেশের হৃদয় খান ও ভারতের বিক্রম ঘোষ। বেস্ট প্লে-ব্যাক সিঙ্গার (পুরুষ) ইমরান ও ভারতের অনির্বাণ ভট্টাচার্য। বেস্ট প্লে-ব্যাক সিঙ্গার (নারী) বাংলাদেশের পক্ষে যৌথভাবে সোমনুর মনির কোনাল ও ফাতেমাতুজ জোহরা ঐশী ও ভারতের নিকিতা নন্দী। বেস্ট পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা বাংলাদেশের ইমন ও ভারতের অর্জুন চক্রবর্তী। বেস্ট পার্শ্বচরিত্রাভিনেত্রী বাংলাদেশের জাকিয়া বারী মম ও ভারতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বিশেষ জুরি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশের তাসকিন রহমান ও বিদ্যা সিনহা মীম এবং ভারতের রুদ্র নীল রায় ঘোষ ও আবীর চ্যাটার্জি ও নবনী। শ্রেষ্ঠ পরিচালক বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও ভারতের সৃজিত মুখার্জী। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশের ‘পাসওয়াডর্’ ও ভারতের ‘বোমকেশ গোত্র’। পুরস্কার প্রদানের ফাঁকে ফাঁকে নাচ, গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীরা। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ভারতের জি-বাংলা ও বাংলাদেশের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ।
×