ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে চিহ্নিত অশুভ শক্তি

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে চিহ্নিত অশুভ শক্তি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ১৪ দলের গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে একটি অশুভ মহলের নানা অপপ্রচারের সমালোচনা করে বক্তারা বলেছেন, দেশের চিহ্নিত এই অশুভ শক্তি পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দেখছে। বিরোধী মহলের কাছে ভারতবিরোধিতা তুরুপের তাস। একাত্তর সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে, এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দল আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে ১৪ দল বিব্রত। কারণ ১৪ দল কোন ব্যক্তির নয়, এটা জোটবদ্ধ সংগঠন। তবে মেননের বক্তব্যের বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ১৪ দলের গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসিম আরও বলেন, তিনি (মেনন) কেন আসেননি, সেটা বলতে পারব না। তবে তার দলের সাধারণ সম্পাদক (ফজলে হোসেন বাদশা) এখানে এসেছেন। এর আগে গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে অব্যাহতভাবে গুজব আর অপপ্রচার চলছেই। এসব গুজব ও অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে তথ্য দিয়ে। ১৪ দল সেই প্রচেষ্টাই নেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের স্বর্ণাধ্যায় চলছে এখন। তবে একটি অশুভ মহল এখনও এ সম্পর্ককে বাঁকা চোখে দেখছে। যারা দু’দেশের বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছেন, তারা কোনকিছুই সোজা চোখে দেখেন না। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমস্যা থাকবেই। এর সমাধান হতে হবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনেই। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, একটি মহল স্বাধীনতার পর ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তির বিরোধিতা করেছিল। দেশ ও জাতির স্বার্থ বিকিয়ে এসব চুক্তি করা হয়েছে বলে জিকির তুলেছিল তারা। কিন্তু বারবার ক্ষমতায় এলেও কোন চুক্তিই বাতিল করেনি। তারা পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখছে। পাকিস্তানের চশমা দিয়ে দেখতে গেলে এই সম্পর্কে দেশ যে লাভবান হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা বেড়েছে- সেগুলো কারও চোখে পড়বে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এদেশে আশ্রয় ও অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র এনেছিল। পরে এজন্য ভারতের কাছে মাফও চেয়েছে। তারা যে কোন সমস্যার সমাধানের বদলে আরও বড় সমস্যা তৈরি করে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। বিএনপি মিথ্যাচার করে বলছে, বঙ্গোপসাগরে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে চীনের উপর নজরদারি করবে ভারত। বাস্তবে সত্য হচ্ছে যে, এ রাডারের মালিকানা বাংলাদেশের, যা দিয়ে আমরা সমুদ্রসীমার উপরে কঠোর নজরদারি রাখতে পারব। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরোধী মহলের কাছে ‘ভারতবিরোধিতা’ তুরুপের তাসের মতো। তারাই আবার ক্ষমতায় থাকলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। ফলে তাদের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, চুক্তির ক্ষেত্রে দেখতে হবে দেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে। সংবিধানের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, সেটাও দেখতে হবে। কারণ চুক্তি সরকারের একার বিষয় নয়, রাষ্ট্রের বিষয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলো উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক থাকার কারণে উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তর সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে, এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এ যুদ্ধেও আমাদের বিজয়ী হতে হবে। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহবুব। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এমপি, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাংবাদিক-কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায় প্রমুখ।
×