ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

হাড় ক্ষয় ॥ অস্টিওপরোসিস

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২২ অক্টোবর ২০১৯

হাড় ক্ষয় ॥ অস্টিওপরোসিস

২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস। পৃথিবীর সকল একই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বছরান্তে অস্টিওপরোসিস দিবসটি পালন করে; ২০১৯-এর জন্য যা হলো- ভঙ্গুর অস্থি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বোঝায়। অস্টিওপরোসিস হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাড়রা বা ফুলকো হয়ে যায় বা যাতে অতি দ্রুত ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে। পঞ্চাশ বছরের পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণসমূহ প্রতিভাত হতে থাকে। কিন্তু এর শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই হতে থাকে। এক পুরুষ বা মহিলার দেহের হাড় সাধারণত ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত ঘনত্বে বাড়ে; ৩৪ বছর পর্যন্ত তা বজায় থাকে। এরপর থেকে হাড় ক্ষয় পেতে থাকে। যাদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। মহিলাদের মাসিক পরবর্তী সময়ে হাড় ক্ষয়ের গতি খুব বেগ বান হয়। এ ছাড়াও অনেকগুলো কারণ বা ঝুঁকি হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে (পরে আলোচিত হলো)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০% রজঃনিবৃত মহিলা হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত। ইউরোপের চিত্রও অনেকটা তেমনই। অন্ততপক্ষে ৪০% মহিলা ও ১৫%-৩০% পুরুষ তাদের জীবদ্দশার বাকি সময়ে স্বল্প আঘাতে হাড় ভাঙার শিকার হবেন (যা হাড় ক্ষয়ের কারণেই হয়ে থাকবে)। আর যাদের একাবার হাড় ভাঙার ঘটনা ঘটে, তাদের পরবর্তী হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। একাবার পাঁজরের হাড় ভাঙলে কোমরের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং উরুও হাড় ভাঙার সম্ভাবনা ১-৪ বাড়ে। তবে, বাংলাদেশের মহিলা-পুরুষদের মাঝে হাড় ক্ষয়ের হার ও ঝুঁকির উপস্থিতির তথ্য অপ্রতুল। হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকিসমূহ অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি ১. বয়োবৃদ্ধি ২. স্ত্রী লিঙ্গ ৩. জীনগত ত্রুটি ৪. অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা ৫. হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও মহিলার) ৬. অতি খর্বাকৃতি সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি ১. ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ২. ধূমপান ৩. অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি] ৪. ক্ষীণকায় দৈহিক আকার ৫. আমিষ নির্ভর খাদ্যাভ্যাস ৬. বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/ চকোলেট গ্রহণের অভ্যাস। ৭. খাদ্যে বা বাতাসে ভারি ধাতু ৮. কোমল পানীয় ও মদ্যপান মেডিক্যাল ঝুঁকিসমূহ ১. দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ২. স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন [বাংলাদেশের রোগীদের মাঝে এটি খুব ব্যাপক; বিশেষ করে অস্বীকৃত/আস্বীকৃতদের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে যারা ওষুধ সেবন করছেন, প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির (কবিরাজি, আয়ুর্বেদি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ইত্যাদি) মাঝে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি] ৩. অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ : হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম কুসিং সিংড্রম, ডায়াবেটিস, এক্রমেগালি, এ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি। উপসর্গ প্রথমত কোন শারীরিক লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরদ-ে ফাটল চিড়ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা। শনাক্তকরণ অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে : কিছু ঘনত্ব পরিমাপের জন্য, কিছু আবার ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করার জন্য। বিএমডি পরীক্ষাটি এ কাজে সবচেয়ে ভাল। চিকিৎসা এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রহিত করা। এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর কোন একটি নির্দিষ্ট রোগিণী বা রোগীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। যেহেতু, হাড় ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর পেছন দিকে সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাই একে আগেভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচী নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতোমধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে। আর হাড় ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর বিবেচনা করা যেতে পারে- * নিয়মিত ব্যায়াম * স্টেরয়েডসহ ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা * পুষ্টি নিশ্চিতকরণ * ধূমপান ত্যাগ * প্রয়োজনে পরিমিত ক্যালসিয়াম সেবন লেখক : সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ মোবা : ০১৭৩১৯৫৬০৩৩
×