ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে চার জঙ্গী গ্রেফতার

টার্গেট কিলিং মিশন থেকে সরেনি আনসার আল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২২ অক্টোবর ২০১৯

টার্গেট কিলিং মিশন থেকে সরেনি আনসার আল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা থেকে সরেনি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম। র‌্যাবের হাতে জঙ্গী সংগঠনটির চার জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার পর আবারও এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতারকৃতরা ঢাকায় টার্গেট কিলিং মিশন চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তবে তাদের হত্যার টার্গেটে কারা রয়েছে, সে সম্পর্কে আগাম কোন তথ্য দেয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হয়ত যারা হত্যার টার্গেটে আছে, তাদের নাম জানা যাবে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে জঙ্গীবাদের নানা বই-পুস্তক, ভিডিও, কবিতা, বয়ান, লিফলেট, চাপাতি ও জঙ্গীবাদের আলামতসহ ল্যাপটপ। গত ২১ অক্টোবর রবিবার রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকা থেকে র‌্যাব-৪’র একটি দল চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মুফতি সাইফুল ইসলাম (৩৪), সালিম মিয়া (৩০), জুনায়েদ (৩৭) ও আহম্মেদ সোহায়েল (২১)। সোমবার ঢাকার কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪’র অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মোজাম্মেল হক গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে জানান, গ্রেফতারকৃতরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে। তারা দেশে ইসলামী হুকুমত বা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তাদের ভাষ্য মোতাবেক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা একটি বাতিল ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। দেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে যারাই বাধা হবে, তাদেরই হত্যা করা হবে বলে জঙ্গী সংগঠনটির গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্য। ইসলামী হুকুমত কায়েমের ক্ষেত্রে যারাই বাধা দিবে, তাদের টার্গেট করে হত্যা করা হবে। আনসার আল ইসলামের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা। টার্গেট কিলিং করার পর যাতে নিরাপদে চলে যাওয়া যায়, এজন্য তারা কাউকে হত্যা করতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। কারণ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলে শব্দ হয়। এতে তাদের বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিরাপদে হত্যাকা- নিশ্চিত করতে এজন্য তারা চাপাতি দিয়ে হত্যা করে থাকে। তারা তাদের কর্মকা- নিরাপদে চালাতে নিরাপদ এ্যাপস, নিরাপদ টেক্সট ও ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন এ্যাপসের মাধ্যমে তারা গোপনে যোগাযোগ করে নাশকতার পরিকল্পনাগুলো করত। এজন্য তাদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন ছিল। গ্রেফতারকৃতরা ঢাকায় টার্গেট কিলিং চালাতে এসেছিল। এছাড়া তাদের একটি বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে সেই নাশকতার ধরন বলতে রাজি হননি এই র‌্যাব কর্মকর্তা। র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতারকৃত চার সহযোগীর আরও কয়েকজনকে ধরতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। কারণ অভিযানের সময় কয়েকজন পালিয়ে গেছে। পলাতকদের গ্রেফতারের পর নাশকতার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা মূলত হুজির জুনিয়র পর্যায়ের সদস্য। হুজি বিলুপ্তির পর তারা আনসার আল ইসলামে যোগদান করে। তারা আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছিল। টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের ২৫ জনের একটি দলের সন্ধান মিলেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত মুফতি সাইফুল ইসলাম ঢাকার উত্তর বাড্ডায় একটি নৈশ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে। ছাত্র জীবনে সে হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত ছিল। মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র সেলিমের সহায়তায় সে জঙ্গী হয়। সালিম মিয়া বর্তমানে হাজারীবাগে বসবাস করে। সে ২০০৪ সালে প্রথম ঢাকায় আসে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি শেষে বর্তমানে একটি লিফট কোম্পানিতে কালেকশনের কাজ করে। ২০১৩ সালে নৈশ মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারই মাধ্যমে সে জঙ্গী হয়। সালিমের মূল কাজ ছিল আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল এ্যাপস সংগ্রহ করা।
×